পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি একই সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায়ও সহযোগিতা করতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সংবাদিকদের এসব কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দফতরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন। প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, দেশটির আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর ও সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। এর আগে প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসেই ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর এই অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পাশাপাশি সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা আর্থিক সংস্কারের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছি, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
জসীম উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং সরকার কী করতে চায় সে সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেল। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি এ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বলে তাদের জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থবহভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য আজকের বৈঠক একটা ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। পরবর্তী সময়ে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে এ আলোচনাকে এগিয়ে নেব।
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে জসীম উদ্দিন বলেন, আজ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও ইউএসএআইডির মধ্যে বার্ষিক সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। আমরা বিস্তারিতভাবে আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে কথাবার্তা বলেছি। পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে সক্ষমতা রয়েছে সেটি আমরা ব্যবহার করব। আলোচনাটা মাত্র শুরু হয়েছে। এটার চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছু সময় লাগবে।
সুনির্দিষ্ট কোনো সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা প্রাথমিক আলোচনা ছিল। আজ বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হবে। এতে হয়তো সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে।
শ্রম আইন নিয়ে বৈঠক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রম আইন নিয়ে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি সেগুলো তাদের অবহিত করেছি। এগুলোকে তারা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে স্বীকৃতি দেন। এ ক্ষেত্রে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
তৈরী পোশাক খাতের অস্থিরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে কি না এবং জিএসপি ফিরে পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে জসীম উদ্দিন বলেন, আজকের বৈঠকে এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। জিএসপি নিয়ে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে। এটা ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে কথা হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়নি। ডিএফসি (ডেভলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন) থেকে অর্থায়ন পাওয়া নিয়ে একটা সাধারণ আলোচনা হয়েছে; কিন্তু সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র্যাব) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, র্যাবের সংস্কার নিয়ে যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন নিয়ে কোনো সহায়তা চাওয়া হয়নি।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এর সমাধান হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্প্রতি যেসব অগ্রগতি হয়েছে সেটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের বৈঠকের সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাধারণত জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন না। যদি দুই পক্ষের সময়সূচি মেলে তাহলে অন্য কোনো উপায়ে দেখা হতে পারে। এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে আসা সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সৌজন্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একটি সংবর্ধনার আয়োজন করে থাকেন। এ সময় উভয়ের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসার আগে দিল্লি সফর করেছেন। এই সফরে ভারত থেকে কোনো বার্তা তিনি নিয়ে এসেছেন কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশন আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশন আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলোই আমাদের প্ল্যাটফর্ম।
এ ছাড়া বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানবাধিকার সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তৌহিদ হোসেনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাতের পর মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে দেয়া পোস্টে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে ভালো লেগেছে। আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।