সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক

সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক

  • ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

বিশ্ব মানবের হেদায়েতের কল্যাণের আহ্বান নিয়ে রাহমাতুল লিল আলামিন, সায়্যিদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। তাঁর দাওয়াত, তাঁর তা’লীম ও শিক্ষা, তাঁর আচার-আচরণ ও আদব-আখলাক, ইবাদাত বন্দেগী সব কিছুতেই আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত, তাঁর করুণাধারা রেখেছেন ছড়ায়ে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এমনকি তাঁর হাসি, তাঁর কান্না, তাঁর রাগ অনুরাগ সর্বত্রই অবিমিশ্র কল্যাণের অমিয়ধারা বহমান। এটা কেবল আবেগাপ্লুত একজন আশিকের, একজন ভক্তের উচ্ছ্বাস নয়। এটা পরীক্ষিত এক বাস্তবতা। বিগত পনের শ’ বছরের পৃথিবী বারবার প্রত্যক্ষ করেছে এ প্রাসঙ্গিকতা।

ইতিহাসের সামাজিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতের রকমফের ঘটেছে সব সময়ই। অস্বীকার করার উপায় নেই। অবলীলায় স্বীকার করছি পনের শ’ বছর আগের সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষিত ভিন্নতর ছিলো। যে মানচিত্রে নবী-ই আকরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব সে সব চিত্র বর্তমান নেই। সন্দেহ নেই কিন্তু সর্ব প্রেক্ষিতেই, সব মানচিত্রেই এই কল্যাণ ফল্গুধারার প্রাসঙ্গিকতা জীবন্ত, এই সত্যের নিঃশেষ নেই।

 

পর্বতমালা স্থিতিশীল

সূর্য যেমন কোন প্রেক্ষিতেই তার কিরণচ্ছটা হারায় না, সর্ব প্রেক্ষিতেই যেমন চন্দ্র-বিভা তার স্নিগ্ধতায় অক্ষুণ্ণ, সাগর সায়রের বিশাল থেকে বিশালতার উচ্ছ্বাস বৈভব, পর্বতমালা স্থিতিশীল অপার ধার্ঢ্যতায়, বাতাসের উদার প্রবাহমান কোন প্রেক্ষিতেই অপ্রাসঙ্গিক হয় না, প্রকৃতি জায়া ঝর্ণাধারার কলতান যেমন প্রতিদিনই আধুনিকতা নিয়ে, আধুনিক মানস চেতনা নিয়ে আবির্ভূত, কৌলিণ্য হারায় না, চিরন্তনতা হারায় না—এ বিষয়টি যেমন প্রশ্নাতীত তেমনি হাওয়া, এরচেয়েও আধুনিকতর হয়ে, বর্তমান সংলগ্ন হয়ে রাহমাতুল লিল আলামিনের কল্যাণধারা আবির্ভূত, সতত প্রবাহমানতা বিদ্যমান।

তবে প্রকৃতির সৌন্দর্য, এর ঘ্রাণ সর্বদাই অনুভবে আবিস্কার করতে হয়। বোধে পারঙ্গম হতে হয় নইলে মধ্যাহ্নে মার্তণ্ডদাহ অনেকের কাছে বোধনীয় হয় না, তমাসার আবরণ ভেদে স্ফুটচ্ছটা হয় না। এ অপারগতা তার, তার বোধের এ ত্রুটির ভাস্করালোকের নয়। তেমনি রহমাতুল লিল আলামিনের রহমতময়তাকে কল্যাণময়তাকে বোধে, অনুভবে, মননে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে, শীরায় শীরায় চেতনাপ্লুত করতে হয়। জীবনধারার প্রায়োগিকতায়, মননের মননশীলতায়, আশা আকাঙ্ক্ষার সার্থকতায়, যুগমানসের চাহিদা চিত্রণে, চিন্তনের আধুনিকতায় বর্তমানের প্রাসঙ্গিকতার আবিস্কারে মূর্তমান করতে হয়, আধুনিক মানসে বাস্তবতায় চিত্রিত করতে হয়। তিনি তো আধুনিক হতেও আধুনিকতর, হালী নবী, ক্বালী নবী, শাশ্বত নবী।

যারা এ কাজটি না পারে অপারঙ্গমতার আবিলতায় যারা ক্লেদপ্রোথিত, সতত আধুনিকতার সঙ্গম রহিত, বোধের রাজ্য যাদের আকালময় তারা ধরতে পারেনি, ধরতে পারে না সেই মহান কল্যাণময়তাকে। এদের আধিক্যের যখন প্রাদুর্ভাব ঘটে তখনই মনুষ্য সমাজের পতনকাল, মনুষ্য সভ্যতার জন্য মহা সংকটকাল, বিশৃংখলা ও উন্মত্ততায় ভরে যায় পৃথিবী।

এ ত্রুটি রাহমাতুল লিল আলামিনের নয়! তাঁর আদর্শ শিক্ষার নয়। এ ত্রুটি হলো সব চৈতন্যের পিছিয়ে পড়ার, সতত আধুনিকতার সঙ্গম তাড়িত না হওয়ার, কুসংস্কারাচ্ছন্নতার। আলোকবৈরী পেঁচক যদি রবিরশ্মির সমালোচনা কঠোর হয়, তিমির প্রেমী মানসের যদি প্রদীপভাতিকে অসহ্য লাগে তবে এই জাহিল্যিয়াতের মূর্খগামীতার জন্য করুণা সহিষ্ণু হওয়া ব্যতিরেকে আর কি করার আছে? হ্যাঁ, আছে। এই তমসা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হলো, মূর্খতার কুপমণ্ডকতা ছেড়ে আলোকগামী হওয়ার। আলোকময় প্রদীপ থেকে জ্বালাতে হলে সান্নিধ্যে আসতে হবে সিরাজাম মুনিরার, দীপ্তিদায়ক প্রদীপের নৈকট্যে, এছাড়া কোনো দুসরা পথ নেই।

সুতরাং হে দিকভ্রান্ত পৃথিবীবাসী, আধুনিকতার স্রাব আশ্বাদন বঞ্চিত হে লোক সমাজ, হে বিশৃঙ্খলায় দিশেহারা, আতংকিত জনপদ, হে শান্তিসুখহীন আহলুল কুরা, হে ঠিকানা প্রত্যাশী নোঙরহীন কাণ্ডারিহীন আমার প্রিয় গ্রহবাসী যদি শান্তি পেতে হয়, ঠিকানা পেতে হয় মানবতার তবে ফিরে আসো, ওহে ফিরে আসো ফের রাহমাতুল লিল আলামীনের কাছে, প্রেমময় কল্যাণকামীতার সান্নিধ্যে, আধুনিক থেকেও আধুনিক সত্তায়, নিরুপম আদর্শময় মহা আদর্শের দিকে। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আরও পড়ুন: চূড়ান্ত পূর্ণতার অভিধায় অভিষিক্ত যিনি

নবীজিকে নিয়ে গাওয়া জুনায়েদ জামশেদের প্রাণ জুড়ানো ‘মুসাদ্দাস-ই হালী’ নাতটি শুনুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *