সমলিঙ্গের বিয়ের স্বীকৃতি দিলেন না ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

সমলিঙ্গের বিয়ের স্বীকৃতি দিলেন না ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সমলিঙ্গের বিয়ে নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ১০ দিন ধরে এ বিষয়ে বিতর্ক শুনেছে। গত ১১ মে তাদের রায় ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন তারা আরও কিছুদিন সময় চেয়ে নেন। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) তারা রায় পড়ে শোনান।

পাঁচ বিচারপতি একটি বিষয়ে একমত হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ভারতে বিয়ে সংক্রান্ত যে আইন আছে, তা পরিবর্তন করার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই। একমাত্র পার্লামেন্টই সে কাজ করতে পারে। ফলে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে পরিবর্তন ঘটিয়ে সমলিঙ্গের বিয়েকে স্বীকৃতি দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ারের বাইরে। ফলে সমলিঙ্গের বিয়েকে আইনি বৈধতা দেওয়ার যে মামলা হয়েছিল, আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করলো না। পার্লামেন্টই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

উল্লেখ্য, ভারতে বিয়ে সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আইন আছে। এর মধ্যে হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলিম, পার্সি আইন যেমন আছে, তেমনই আছে “স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট”। ভিন ধর্মের বিয়ের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য। জাত, ধর্মের ক্ষেত্রে সমানাধিকারের কথা যেখানে বলা হয়েছে। সেই আইনেই পরিবর্তন এনে সমলিঙ্গের বিয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছিল এই মামলায়। সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পার্লামেন্টের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, অবিবাহিত যুগলেরও সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে সমান অধিকার আছে। ফলে সমলিঙ্গের যুগল সন্তান দত্তক নিলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বেঞ্চের বাকি বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে তিন বিচারপতি এর বিরোধিতা করেন। বিচারপতি কল প্রধান বিচারপতিকে সমর্থন করেন।

চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, সমলিঙ্গের মানুষ যাতে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সে দিকে নজর রাখা জরুরি।

তার বক্তব্য, বিয়ে কোনো অনড় বিষয় নয়। এর বিবর্তন হয়েছে ঐতিহাসিক সময় ধরেই। ফলে এ বিষয়ে আলোচনার সময় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

আইনের দিকটি দেখার জন্য একটি কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। সেই কমিটিতে কারা থাকবেন তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বস্তুত, এই মামলা লড়ার সময় কেন্দ্রীয় সরকার এই কমিটির প্রস্তাব করেছিল। সরকারের সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে কমিটিতে কারা থাকবেন, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

সমলিঙ্গের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাতে কোনো বৈষম্য না হয়, সে বিষয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। সেখানে বলা হয়েছে, সমলিঙ্গের কোনো যুগলকে থানায় ডেকে বা বাড়িতে গিয়ে হেনস্থা করতে পারবে না পুলিশ। তাদের লিঙ্গ বিষয়ক কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। সমলিঙ্গের যুগল যাতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারেন, তাদের বাড়ি পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাষ্ট্র ব্যক্তিকে যে যে অধিকার দেয়, সমলিঙ্গের মানুষদেরও সেই সেই অধিকার প্রাপ্য। এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। সেই অধিকার রক্ষা করতে হবে রাষ্ট্রকে।

১০ দিন ধরে আদালত সমলিঙ্গের বিয়ে সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুনেছে। এ বিষয়ে সমস্ত রাজ্যে যে মামলাগুলো উঠেছিল, সেই সবকটি মামলার একত্র শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও এই মামলায় ছিল বেশ কয়েকটি রাজ্য। এর মধ্যে আসাম, রাজস্থান এবং অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার সমলিঙ্গের বিয়ের দাবির বিরোধিতা করেছে। একটি মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনও এর বিরোধিতা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় সরকার আদালতকে জানিয়েছে, ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেখানে দুই বিষম লিঙ্গের ব্যক্তির মধ্যেই বৈধ প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এটাই সামাজিক বিধি।

রায় পড়ার সময় এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি বলেছেন, “বিয়ে কোনো অনড় বিষয় নয়। এর বিবর্তন হয়। অতীতেও হয়েছে। সমলিঙ্গের সম্পর্ক সামাজিক সম্পর্ক। একেও একইরকম গুরুত্ব দিতে হবে। সমলিঙ্গের সম্পর্ককে শহুরে মুষ্টিমেয় মানুষের বিষয় বলেও দাগিয়ে দেওয়া যায় না। সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রেই এ ধরনের সম্পর্ক দেখা যায়।”

আদালতের এই রায়ের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে এলজিবিটিকিউ প্লাস কমিউনিটির ভেতর থেকে। যেভাবে আদালত এই সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কিন্তু সমলিঙ্গের সম্পর্ক বিয়ের অধিকার না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ তারা।

সুজি ভৌমিক বলেছেন, “আদালতের মন্তব্যগুলো খুব জরুরি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা বিয়ের অধিকার পেলাম না।” ট্রান্স সেক্সুয়ালদের ক্ষেত্রে অবশ্য বিয়ের অধিকারে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে আদালত। বর্তমান বিয়ের আইন মেনেই তাদের বিয়ে সম্ভব বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *