পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২২ লাখ ৬৫ হাজার ২০১। এসব প্রতিবন্ধীর মধ্যে মাত্র ২২.৪৮ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। গ্রাম্য চিকিৎসক, অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের দোকান, বেসরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন এনজিও থেকে চিকিৎসা নেয় ৭৮ শতাংশ।
২০২২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের ধরনভেদে জরিপের আগে ২০২১ সালে এক বছরের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হার প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতাল প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সহায়ক নয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। এতে প্রতিবন্ধীদের বড় একটি অংশ সরকারি হাসপাতালে পুরোপুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিবিএসের জরিপের তথ্য মতে, বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা নেয় ১৫.৫ শতাংশ ও গ্রাম্য চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা নেয় ২৩.৮৪ শতাংশ, দোকান থেকে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের চিকিৎসা নেয় ১৬.৬৮ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ ৩ ডিসেম্বর ৩২তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৫তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস-২০২৩ পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপ্রাদ্য বিষয়, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাথে সম্মিলিত অংশগ্রহণ, নিশ্চিত করবে এসডিজি অর্জন’।
দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিবন্ধী ও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রদানে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় থেরাপিউটিক সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ৪৫টি ভ্রাম্যমাণ মোবাইল রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপি ভ্যান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দেশের বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নাজরানা ইয়াসমিন হীরা বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করে তৈরি করা হয়নি। এরপর হাসপাতালে ওঠার ব্যবস্থা থাকে না। এদের জন্য ভাষা বুঝবেন, এমন চিকিৎসক, নার্স রাখা হয় না।
নাজরানা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য দেশে আইন হয়েছে প্রায় ১০ বছর।
কিন্তু আমাদের অর্জনটা কী হয়েছে? জেলা-উপজেলা বা শহর পর্যায়ে কিছু কমিটি রয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী মানুষের বৈষম্য, যেকোনো সমস্যা নিরসনে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ কমিটিই সক্রিয় নয়। কারণ জেলা কমিটির ডিসি ও উপজেলা কমিটির ইউএনও—তাঁরা এ রকম শত কমিটির প্রধান হয়ে থাকেন।
দেশে বর্তমানে ২২ লাখ ৬৫ হাজার ২০১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ১.৩৭ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯১ জন আর নারী ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ৫৪১ জন বলে বিবিএস সূত্রে জানা যায়।
বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, সবচেয়ে বেশি চার লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৩ জন প্রতিবন্ধীর ব্যক্তির বাস ঢাকা বিভাগে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে চার লাখ ১৬ হাজার ১৫৮ জনের বাস। রাজশাহী বিভাগে রয়েছে তিন লাখ ২৭ হাজার ৪৫২ জন। সবচেয়ে কম এক লাখ ৪২ হাজার ৯৬ জন বরিশাল বিভাগে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ধরন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হার ৩৩.৩৮ শতাংশ। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা ১২.৪ শতাংশ। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতার হার চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেট বিভাগে বেশি। এ ছাড়া ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির হার যথাক্রমে ১২.৬৫ শতাংশ, ১১.২৫ শতাংশ ও ১৩.০৮ শতাংশ।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) কনফারেন্স আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. শহিদুল ইসলাম শোভন বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগে প্রতিবন্ধীদের ঘরে বন্দি করে রেখে দেওয়া হতো। এখন চিকিৎসার জন্য তাদের সামনে আনা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। এখন উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের সেবা মিলছে। এমনকি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।