২০শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ২৭শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৫০ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নভেম্বরে বৃষ্টিপাত না হলে ১৫ দিন পর থেকে রোগীর সংখ্যা কমে আসতে পারে। সেই কৃতিত্ব হবে আবহাওয়ার।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৪৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সময় মৃত্যু হয়েছে একজনের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ল ৪১ হাজার ৪৮১।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ঢাকায় রোগী সংখ্যা ২৭ হাজার ৯৭১। ঢাকার বাইরে মোট রোগী ১৩ হাজার ৫১০ জন। মৃত্যু ১৬২ জনের। এর মধ্যে ঢাকায় ৯৮ জন। ঢাকার বাইরে ৬৪ জন। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ৪১ জন মারা গেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এর আগে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা দেখে বাংলাদেশ। সে বছর আক্রান্ত হয় এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। মৃত্যু হয় ১৬৪ জনের।
গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, ডেঙ্গু রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সারা দেশে সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে, তা ভালো বলতে পারবেন কীটতত্ত্ববিদরা। তবে চিকিৎসার দিক থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো ঘাটতি নেই। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার ফলাফল সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু শনাক্ত না হওয়ায় এবং হাসপাতালে দেরিতে আসায় ঝুঁকি বাড়ছে। মৃত্যুও বাড়ছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। এ পরিস্থিতি শিগগিরই বদলাবে বলে গবেষণায় দেখতে পাচ্ছি না। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে হয়তো ১৫ দিন পর থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করবে এবং ধীরে ধীরে কমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরে নভেম্বরে ডেঙ্গু একদম কমে যেত। সেটি এখন আর হবে না। এখন আমাদের দেশে সারা বছরই ডেঙ্গু থাকবে। এ জন্য আমাদের এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সারা বছর চালু রাখতে হবে।’
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ মতে, সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এর কারণ হলো এক. আমাদের বৃষ্টির মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। দুই. বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এতে স্বাভাবিক কারণেই এডিস মশার উৎপত্তি কমে আসবে। আর আনুপাতিক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও কমবে।
তিনি বলেন, ‘এডিস মশা কমে যাওয়ার মধ্যে আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। কৃতিত্ব হলো আবহাওয়ার। যদি সামনে আবার বৃষ্টি হয়, তাহলে একই ধারায় আবার বাড়তে পারে।’