সাড়ে ৫শ কোটি টাকা বরাদ্দের অপেক্ষা

সাড়ে ৫শ কোটি টাকা বরাদ্দের অপেক্ষা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: চলতি অর্থবছর শুরুর আগেই অনুমোদন দেওয়া হলেও কৃচ্ছ সাধনের কবলে পড়েছে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ’ প্রকল্প। এর মধ্যে মেলেনি বরাদ্দ। সেই সঙ্গে ছিল কোন জটিলতাও। অবশেষে বরাদ্দ মিলছে ৫৫০ কোটি টাকা। কিন্তু এখন নয়। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) এই বরাদ্দ দিতে সম্মত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে অর্থ পেতে সময় লাগতে পারে আরও প্রায় তিন মাস। ১২ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগের সদস্যের (সচিব) কাছে। সেখানে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮৩ কোটি ৮২ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে কাজ শুরুতেই দেরি হলে তা শেষ করার লক্ষ্য পূরণ শঙ্কার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কার্যক্রম বিভাগের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা সচিব) মামুন-আল-রশিদ মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত প্রতিবছর জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সেক্ষেত্রে কাজ শুরু করতে যদি ৮/৯ মাস পিছিয়ে যায়, তাহলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদও বাড়তে পারে। তবে বাস্তবতা মানতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় হয়তো গুরুত্ব বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ না দিলেই নয়, সেগুলোয় হয়তো আগেই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই এমনটা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০ জুন এ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দিয়েছিল। আন্ডারপাসটিতে নয়টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। এগুলো হলো: হজ ক্যাম্প, আশকোনা, বিমানবন্দর রেলওয়ে (বিআরটি) স্টেশন, বিমানবন্দর টার্মিনাল-১, ২ ও ৩, বিমানবন্দর উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট এবং এমআরটি স্টেশন। এটি ব্যবহার করে হজক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাওয়া যাবে। আবার বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে সরাসরি এমআরটি (মেট্রোরেল) স্টেশন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন এবং বিআরটি স্টেশনে যাওয়া-আসা করা যাবে। এটি হবে শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। থাকবে আটটি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর এবং ২৫টি ট্রাভেলেটর। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০৭০ মিটার দৈর্ঘ্যরে আন্ডারপাসটি তৈরি হলে গাজীপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত বিমানবন্দর সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে।

অর্থ বিভাগের বাজেট-২ অনুবিভাগ থেকে পাঠানো বরাদ্দ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন চলছে। এজন্য ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ’ শীর্ষক অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। সেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পরিবহণ ও যোগাযোগ সেক্টরের আওতায় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের থোক বরাদ্দ থেকে ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব খাতে ২৭ কোটি ৯৯ লাখ এবং মূলধন খাতের জন্য ৫২২ কোটি ৭১ লাখ টাকা ধরা হয়। এ প্রস্তাব অনুযায়ী বরাদ্দের বিষয়টি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিবেচনা করা যেতে পারে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৪ হাজার ৭৭৭ জন পথচারী ও যাত্রী একটিমাত্র ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে বিমানবন্দরের সামনের মহাসড়ক পারাপার হন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ এলাকায় নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক সম্প্রসারণের কাজ চলমান। শীঘ্রই এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিআরটি বাস সুবিধা। এছাড়া এমআরটি-১-এর বাস্তবায়ন হলে এ এলাকায় যাত্রীচাপ বাড়বে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী এ এলাকায় চলাচল করবে। এর একটা বড় অংশ আন্ডারপাসের সুবিধা নেবে। তবে শুরু থেকেই জটিলতা পিছু ছাড়ছে না প্রকল্পটির। এর আগে অনুমোদনের পর কিছু ইকোনমিক কোডে ত্রুটি ধরা পরে। ত্রুটিপূর্ণ অর্থনৈতিক কোডগুলো হলো ফাউন্ডেশনের কাজ (পাইল), উলম্ব পরিবহণ (লিফট, এসকেলেটর ইত্যাদি), চলমান পথ (ট্রাভেলেটর) এবং এইচভিএসসি সিস্টেম (প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের নির্গমন সুবিধাসহ), ইলেকট্রিফিকেশন, অগ্নিকাণ্ড নির্গমনব্যবস্থা এবং বাগি গাড়ির জন্য কোড। পরবর্তী সময়ে পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেখানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কোডগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *