সামরিক সক্ষমতার শীর্ষে যারা

সামরিক সক্ষমতার শীর্ষে যারা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স ২০২২ প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। পৃথিবীর ১৪০টি দেশের সামরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে এই তালিকা তৈরি হয়েছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকা।

এ অনুযায়ী, বরাবরের মতো এ বছরও সূচকটির শীর্ষে, অর্থাৎ সবচেয়ে সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পরের অবস্থানগুলোতে যথাক্রমে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, পাকিস্তান ও ব্রাজিল। শীর্ষ ১০ এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়া ও এর আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমার ৩৯, বাংলাদেশ ৪৬, শ্রীলঙ্কা ৭৯, আফগানিস্তান ১১৮ ও নেপাল ১১৯তম অবস্থানে। তালিকার শেষ দেশ অর্থাৎ ১৪০তম অবস্থানে রয়েছে ভুটান।

এই তালিকার সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বাজেট। প্রতিরক্ষা ব্যয়ে শীর্ষ দেশ রয়েছে এ বছর ৭৭ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করবে। এর পরে যথাক্রমে রয়েছে চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, জার্মানি, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া। তবে এই নয় দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় যোগ করেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের সমান হয় না। তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের যোগফল ৭৫ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ শীর্ষ দশের মোট সামরিক ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি যুক্তরাষ্ট্র একাই করে থাকে।

সূচকটিতে মোট ৪৭টি ক্যাটাগরিতে আলাদা আলাদাভাবে দেশগুলোর সক্ষমতা ও র‌্যাঙ্কিং দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে মোট জনসংখ্যা, সৈন্য সংখ্যা, সামরিক সরঞ্জামের সংখ্যাসহ আরও বহু ক্যাটাগরি রয়েছে। এই ৪৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে ১৮টিতেই আবার যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে রয়েছে। আর চীন শীর্ষে রয়েছে ১১টি ক্যাটাগরিতে, যদিও সেগুলোর অনেকগুলোই চীনের সামরিক সরঞ্জামের পরিবর্তে বিশাল জনসংখ্যার কারণে হয়েছে, যেমন; মোট জনসংখ্যা, সেনাবাহিনীর জন্য উপযুক্ত বয়সী মানুষের সংখ্যা ইত্যাদি।

সামরিক ব্যয়ের মতোই আরেকটি যে ক্যাটাগরিতে যুক্তরাষ্ট্র একচেটিয়া আধিপত্য করছে, সেটি হলো বিমানবাহী রণতরীর সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ১১টি ক্যারিয়ার রয়েছে। আর বিশ্বে মোট ক্যারিয়ারের সংখ্যা হলো মাত্র ২১টি। অর্থাৎ বিশ্বের বাকি সব দেশ মিলিয়ে মোট যে কয়টি ক্যারিয়ার আছে, যুক্তরাষ্ট্রের একারই তার চেয়ে বেশি ক্যারিয়ার রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিয়ারগুলো আবার প্রত্যেকটিই সুপার ক্যারিয়ার, অর্থাৎ যেগুলো আকৃতিতে বিশাল ও অনেক বেশি যুদ্ধবিমান বহন করতে পারে। অন্য আর কোন দেশেরই একটিও সুপার ক্যারিয়ার নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সুপার ক্যারিয়ারগুলোর একটি অংশ, সার্বক্ষণিক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন থাকে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৯টি হেলিকপ্টারবাহী ক্যারিয়ার রয়েছে। বিশ্বের অন্য সব দেশ মিলিয়ে এমন ক্যারিয়ারের সংখ্যা ১৬টি। অর্থাৎ বিশ্বের এমন ক্যারিয়ারের এক-তৃতীয়াংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের একারই রয়েছে।

ডেস্ট্রয়ার নৌজাহাজের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে। দেশটির ডেস্ট্রয়ারের সংখ্যা ৯২টি, যা কিনা পরের তিনটি দেশ চীন, জাপান ও রাশিয়ার ডেস্ট্রয়ারের সংখ্যার যোগফলের সমান। এ ছাড়া সামরিক ট্রান্সপোর্ট বিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, মোট হেলিকপ্টার, ফাইটার বিমান, ট্যাংকার বা তেলবাহী বিমানসহ মোট বিমানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য।

যুক্তরাষ্ট্রের মোট সামরিক বিমান আছে ১৩ হাজার ২৪৭টি। যেখানে এই ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা, রাশিয়া ও চীনের মোট বিমান সংখ্যা যথাক্রমে ৪ হাজার ১৭৩ ও ৩ হাজার ২৮৫টি। অর্থাৎ দেশ দুটি মিলিয়ে প্রতি ১০০ বিমানের বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭৭টি বিমান রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানের মধ্যে আবার ট্যাংকার বিমান রয়েছে ৬২৭টি। এই বিমানগুলো আকাশপথেই অন্য বিমানকে চলন্ত অবস্থায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে সক্ষম। এর ফলে যেকোনো বিমান জ্বালা নীর জন্য অবতরণ করা ছাড়াই আকাশে থাকতে পারে। পৃথিবীর অন্য সব দেশ মিলিয়ে এমন বিমানের মোট সংখ্যা ১৮৩টি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের একারই অন্য সবার মোট ট্যাংকারের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩ গুণ বেশি এই বিমান রয়েছে।

সূচকটিতে ২০১১ সাল থেকে এক নাগাড়ে রাশিয়া, চীন ও ভারত যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থান ধরে রেখেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়ার বাজেট ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বাজেট। ১২ হাজার ৪২০টি ট্যাংক নিয়ে রাশিয়া ট্যাংকের সংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। কামানের সংখ্যাও রাশিয়ারই সর্বোচ্চ। ১ কোটি ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি আয়তনের রাশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ।

তৃতীয় অবস্থানের চীনের বাজেট ২৫ হাজার ২৪ কোটি ডলার। সামরিক ব্যয়ের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান দেশটির। প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটি কর্মক্ষম মানুষ, সামরিক বাহিনীতে নিয়োগযোগ্য মানুষ, কর্মীর সংখ্যা ও মোট সৈন্যসংখ্যার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে ২০ লাখ সেনাসদস্য রয়েছে। তা ছাড়া মোট ৭৭৭টি জাহাজ ও ৭৯টি সাবমেরিন নিয়ে এ দুইটি ক্যাটাগরিতেও শীর্ষে রয়েছে চীন। পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে চীনের স্থলসীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ। দেশটির মোট ২২ হাজার ৪৫৭ কিলোমিটারের স্থলসীমান্ত রয়েছে। ২২ হাজার ৪০৮ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত নিয়ে, রাশিয়া সেই ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় অবস্থানে।

দক্ষিণ এশিয়ার ও আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক ব্যয়ে শীর্ষ ভারতের বাজেট ৪ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার। তবে ২০০৬ সাল থেকে সামরিক সক্ষমতার দিকে থেকে লাগাতার চতুর্থ অবস্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে ৭৬৯ কোটি ডলারের বেশি বাজেট নিয়ে, ব্যয়ের দিক থেকে পাকিস্তান রয়েছে ৩১তম অবস্থানে। ২০০৬ সালের পর প্রায় ১৪ বছর শীর্ষ দশের বাইরে থেকে, ২০২১ সাল থেকে আবার মূল সূচকটিতে শীর্ষ দশে প্রবেশ করেছে পাকিস্তান।

সামরিক ব্যয় ক্যাটাগরিতে ৩৮৯ কোটি ডলারের কিছু বেশি বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ ৪৯তম, ২২৮ কোটি ডলারের বেশি বাজেট নিয়ে মিয়ানমার ৬২তম, ১৮৬ কোটি ডলার বাজেট নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৬৯তম, ৪৩ কোটি ডলারের বেশি বাজেট নিয়ে নেপাল ৯৯তম, প্রায় ১০ কোটি ডলার বাজেট নিয়ে আফগানিস্তান ১২৮তম এবং প্রায় ৩ কোটি ডলার বাজেট নিয়ে ভুটান ১৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।

তালিকাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে সবচেয়ে কম ব্যয় করে লাইবেরিয়া। এ বছর তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার।

তবে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্সটি তৈরির ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র দেশগুলোর প্রচলিত বা সাধারণ সামরিক সক্ষমতার বিষয়গুলোই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ও প্রযুক্তিগত মান, সামরিক প্রশিক্ষণের মান, সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে উন্নততর প্রযুক্তির ব্যাপকতা, সামরিক গবেষণা, ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ-রাজনৈতিক সক্ষমতা, কূটনৈতিক কৌশল, অর্থনৈতিক সক্ষমতা, অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই যুদ্ধকালীন সামরিক সক্ষমতার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *