- মুফতি মাহতাব উদ্দীন নোমান
যারা নবীজী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঈমান অবস্থায় স্বচক্ষে দেখেছেন এবং ঈমান অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন তাদেরকে সাহাবী বলে। কোরআনের বিশেষ কিছু আয়াতে দৃষ্টি দিলে স্পষ্ট বুঝা যায়, সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মনোনীত ও নির্বাচিত একটি বিশেষ জামাত, যারা নিজেদের জীবনের মায়া উপেক্ষা করে সবসময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গ দিয়েছেন এবং নিজেদের জান মাল ব্যয় করে ইসলামের যে পরিমাণ খেদমত করেছেন। যা অন্য কারোর পক্ষে কোনো সময়ই সম্ভব নয়।
তারা আগ্রহ ও নিঃসঙ্কোচতার সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ পালন করত। তাদের উঠাবসা চলাফেরা খাওয়া-দাওয়া হত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্জি অনুযায়ী। তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দৃষ্টান্ত হীন আত্মদানের মাধ্যমেই দুনিয়াতে ইসলাম টিকে আছে। যাদের এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ আল্লাহ তা’আলার নিকট অনেক পছন্দনীয় ছিল। এই জন্যই তিনি তাদের ওপর নিজের সন্তষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। দিয়েছেন ক্ষমা ও উত্তম প্রতিদান এর প্রতিশ্রুতিও। তিনি পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যাহারা প্রথম অগ্রগামী এবং যাহারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাহাদের অনুসরণ করে আল্লাহ্ তাহাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তাহারাও তাহাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন জান্নাত, যাহার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তাহারা চিরস্থায়ী হইবে। ইহা মহাসাফল্য।’ (সূরা তাওবা, আয়াত: ১০০)
‘আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যেসব মুহাজির ও আনসারগণ নবীর আনুগত্য করেছে তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন৷ যদিও তাদের মধ্য থেকে কিছু লোকের অন্তর বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন৷ নিঃসন্দেহে এ লোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও দয়ালু।’ (সূরা তাওবা, আয়াত: ১১৭)
‘আল্লাহ তো মুমিনগণের উপর সন্তুষ্ট হইলেন যখন তাহারা বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করিল।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত: ১৮)
যাদের একদল আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসায় নিজেদের ভিটাবাড়ি, আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে অন্যত্র হিজরত করেছেন আর অন্যদল তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন। ভালোবাসায় এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দুই দলের জন্য আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে পূর্ণ ঈমানদার হওয়ার সার্টিফিকেট কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। আর পরকালে তো তাদের জন্য রয়েছে অতি উত্তম রিযিক। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
‘যাহারা ঈমান আনিয়াছে, হিজরত করিয়াছে ও আল্লাহর পথে জিহাদ করিয়াছে আর যাহারা আশ্রয় দান করিয়াছে ও সাহায্য করিয়াছে, তাহারাই প্রকৃত মু’মিন; তাহাদের জন্য ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা রহিয়াছে।’ (সূরা আল আনফাল, আয়াত: ৭৪)
আল্লাহ তাআলা যাদের কাছে ঈমানকে সবচাইতে প্রিয় বস্তু বানিয়েছেন এবং তাদের অন্তরকে ঈমানের নূরে আলোকিত করেছিলেন। কুফরি, পাপাচার ও আল্লাহ-রাসূলের অবাধ্যতার ছিল তাদের নিকট অপ্রিয় বস্তু। যাহারা ছিল সৎপথ অবলম্বনকারী। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন-
‘কিন্তু আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করিয়াছেন এবং উহাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করিয়াছেন ; কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করিয়াছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। উহারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ৭)
যাদের ঈমান পরবর্তী সকল উম্মতের ঈমান সঠিক হওয়ার মাপকাঠি। অর্থাৎ তাদের মত ঈমান আনলেই সেই ঈমানটা আল্লাহ তা’আলার নিকট গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-
‘তোমরা যাহাতে ঈমান আনয়ন করিয়াছ তাহারা যদি সেইরূপ ঈমান আনয়ন করে তবে নিশ্চয় তাহারা হিদায়াত পাইবে। আর যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া নেয়, তবে তাহারা নিশ্চয়ই বিরুদ্ধভাবাপন্ন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৩৭)
যারা শুধু নিজেদের মঙ্গলই চায় না, বরং অন্যদেরও মঙ্গল কামনা করে। অন্যদেরকেও ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে। তারা একে অন্যের প্রতি হয় দয়াশীল এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে হয় কঠোর। তাদের এই মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে উত্তম উম্মত বলে আখ্যা দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে-
‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হইয়াছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান কর, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস কর।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ১১০)
‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; তাঁহার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাহাদেরকে রুকূ‘ ও সিজ্দায় অবনত দেখিবে। তাহাদের লক্ষণ তাহাদের মুখমণ্ডলে সিজ্দার প্রভাবে পরিস্ফুটিত থাকিবে।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত: ২৯)
আল্লাহ তাআলার নিকট উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মর্যাদার অধিকারী তারাই। আর তারাই হলো সফলকাম। দুনিয়াতে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে দয়া ও সন্তুষ্টি এবং আখেরাতে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান ও পুরস্কার স্বরূপ রয়েছে স্থায়ী সুখ শান্তির জায়গা জান্নাত। কোরআনে বর্ণিত হচ্ছে-
‘যাহারা ঈমান আনে, হিজরত করে এবং নিজেদের সম্পদ ও নিজেদের জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তাহারা আল্লাহর নিকট মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, আর তাহারাই সফলকাম। উহাদের প্রতিপালক উহাদেরকে সুসংবাদ দিতেছেন স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, যেখানে আছে তাহাদের জন্য স্থায়ী সুখ-শান্তি।’ (সূরা তাওবা, আয়াত: ২০-২১)
হাদীস শরীফে এরশাদ হচ্ছে, ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম আমার যুগের লোকেরা। এরপর তারা যারা তাদের সন্নিহিত। এরপর যারা তাদের সন্নিহিত যুগ।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৩৪)
এছাড়াও কোরআনে তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করে আরো অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। এই সকল আয়াতের দিকে দৃষ্টি করলে অবশ্যই বোঝা যায় যে, এই সাহাবায়ে কেরাম এমন একটা দল ছিলেন যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সাহাবী হওয়ার জন্য মনোনীত ও নির্বাচিত করেছিলেন। তাদের জন্য দোয়া করার পদ্ধতি আল্লাহ তাআলা পরবর্তীদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি কোরআনে এরশাদ করেন-
‘যাহারা উহাদের পরে আসিয়াছে, তাহারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখিও না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।’ (সূরা হাশর, আয়াত: ১০)
কোরআনের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজের সাহাবায়ে কেরামের অনেক প্রশংসা করেছেন। তিনি তাদের ফাজায়েল বর্ণনা করতে বলেন-
‘জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ জাহান্নামের আগুন এমন মুসলিম লোককে ছুবে না যে আমাকে দেখেছে অথবা আমার দর্শনলাভকারীকে দেখেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৮৫৮)
তারা তো এমন এক জাতি যারা দুনিয়াতে থাকলে দুনিয়াবাসী কল্যাণের সাথে থাকবে। তাদের ওপর প্রকাশ্যে কোনো অকল্যাণ বা অমঙ্গল আসবেনা। তারা হচ্ছে দুনিয়াবাসীর জন্য নিরাপত্তা স্বরূপ। হযরত আবু মুসা আশআরী রা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমি আমার সাহাবীদের জন্য নিরাপত্তা স্বরূপ। আমার অবর্তমানে তাদের ওপর ওইসব বিপর্যয় আসবে যে ব্যাপারে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আমার সাহাবীরা উম্মতের জন্য নিরাপত্তা স্বরূপ। তাদের অবর্তমানে উম্মত এমন সব বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে যে ব্যাপারে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৩১)
সাহাবীগণের মধ্যে যারা বদরে ও বাইয়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের জন্য বিশেষ ফজিলত এর কথা হাদিস বর্ণিত রয়েছে-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, নিশ্চয়ই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদেরকে দেখে শুনেই আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের যা ইচ্ছা কর” তোমাদের জন্য জান্নাত অবধারিত অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৯৮৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, যারা (হুদায়বিয়ার দিন) বৃক্ষের নীচে বাইআত করেছে, তাদের কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬০, আবু দাউদ, হাদিস: ৪৬৫৩)
স্বয়ং রাসুল তাদের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করে গেছেন- সাহল ইবনু সা’দ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন, আমরা তখন পরিখা (খন্দক) খনন করছিলাম এবং কাঁধে করে মাটি একস্থান থেকে অন্যস্থানে ফেলছিলাম। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আখিরাতের সুখ ছাড়া সুখ নেই, মুহাজির ও আনসারদেরকে আপনি ক্ষমা করুন।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৮০৪)
সুতরাং আল্লাহ তাআলা সাহাবী হওয়ার মর্যাদা শুধু বিশেষ বান্দাদেরকেই দিয়েছেন। পরবর্তীতে কেউ নিজের চেষ্টা ও মেহনতের মাধ্যমে কোন সাহাবীর মর্যাদার আশেপাশেও পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের ও আফসোসের বিষয় হলো, বর্তমানকালে এমন কিছু লোকদেরকে দেখা যায়, যারা তেরোশো বছর পর এসে সাহাবায়ে কেরামের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল এবং স্খলন গুলো চর্চা করেন। সাহাবায়ে কেরামকে গালিগালাজ ও কাফের বলতেও তাদের মুখ আটকায় না।
তারা সাহাবায়ে কেরামের ওপর মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা রটনার মাধ্যমে তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কেমন যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, আল্লাহ তাআলা যাদের ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন এবং রাসুল যাদের জান্নাতের সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তারা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা কোরআন সুন্নাহর সর্বপ্রথম বাহকদের উপর আঙ্গুল তুলে দ্বীনের সব বিষয়গুলোকে গুরুত্বহীন প্রমাণ করতে চায়। উম্মতের আস্থাভাজনদের আস্থা নষ্ট করে দিতে চায়। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতায় প্রশ্ন তুলতে চায়। যাতে পুরো দ্বীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের মধ্যেই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।
অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে গালি দেওয়া থেকে স্পষ্ট ভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি এরশাদ করেছেন- ‘অর্থাৎ তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিওনা। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ উহুদ সমপরিমাণ স্বর্ণও যদি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে,তবেও তাঁদের এক মুদ্দ বা তার অর্ধেক পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার সমতূল্য হবে না। (বুখারী, হাদীস: ৩৭১৭, মুসলিম, হাদীস: ২৫৪০)
অর্থাৎ-সাবধান! তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। কারণ, যে তাদের ভালোবাসবে সে আমার মুহাব্বতেই তাদের ভালোবাসবে। আর যে তাঁদের অপছন্দ করবে সে আমাকে অপছন্দ করার ফলেই তাদের অপছন্দ করবে। আর যে তাঁদের কষ্ট দেবে সে আমাকেই কষ্ট দেবে। আর যে আমাকে কষ্ট দেবে সে যেন আল্লাহকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহকে কষ্ট দেবে অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন।’ (তিরমিযী, হাদীস: ৩৪৬২)
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছাহাবীদের গালাগাল করো না। কেননা তাদের (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সহচর্যে) এক মুহূর্তের মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে বেশি।’ (ইবন মাজাহ, হাদীস: ১৬২)
অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ সা. আনসারী সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ রাখাকে মুনাফিকের আলামত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘হযরত আনাস থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমানের নিদর্শন হলো, আনসারী সাহাবীদের মহব্বত এবং মুনাফেকীর নিদর্শন হলো, আনসারীদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ।’ (বুখারি, হাদিস: ১৭)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আনসারী সাহাবীদেরকে শুধুমাত্র মুমিনরাই ভালবাসে। আর মুনাফিকরা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবে, আল্লাহ তার সাথে বিদ্বেষ রাখবেন। (মুসলিম, হাদীস: ৭৫)
সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ বাদ দিয়ে তাদের আদর্শ ও চিন্তা-চেতনার একনিষ্ঠতার সাথে অনুসরণ করার মধ্যেই পরবর্তী উম্মতদের মুক্তি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই বনি ইসরাইল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল অতিশীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর(৭৩) দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে মাত্র একটি দলই মুক্তিপ্রাপ্ত এবং জান্নাতী হবে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেনঃ সেই মুক্তিপ্রাপ্ত সৌভাগ্যশালী দলটি কারা? নবীজী বললেন, যে নীতি, তরীকা ও আদর্শের উপর আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরাম আছেন।’ (তিরমিজী, হাদীস: ২৬৪০; ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৪৭৯)
সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম সকলেই ন্যায়পরায়ন ছিলেন। আমরা নিজেরাও কখনো সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা বা তাদের দোষ বর্ণনা করব না এবং অন্যকেও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করতে দিব না। নবীজী সা. এর ইন্তেকালের পরে কোন ব্যক্তি যদি সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করত তখন উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামও কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করতেন। ঠিক সেইভাবে আমরাও সাহাবীগণের অনুসরণে সাহাবীগণের সমালোচকদের কঠোরভাবে বিরোধিতা করবো। কারণ তারা আমাদের দ্বীনকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা আমাদের দ্বীন ও ধর্মের শত্রু। আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: খতীব ও শিক্ষক
আরও পড়ুন: সন্তানের জন্মে পরিবারের দায়িত্বঃ ইসলামী দিকনির্দেশনা