২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৮ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পাকিস্তানের সঙ্গে ৬২ বছরের পুরোনো ‘সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি’ (আইডব্লিউটি) সংশোধনের পথেই হাঁটতে চায় ভারত। এ জন্য প্রতিবেশী পাকিস্তানকে নোটিশ দিয়েছে দেশটি। এর আগেও এ দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে। অবশেষে সে চুক্তি নিয়েই এবার কড়া অবস্থানে ভারত। গত বুধবার সিন্ধু পানিবণ্টন প্রকল্পের কমিশনারের মাধ্যমে এ বিষয়ে পাকিস্তানকে একটি নোটিশ পাঠায় ভারত।১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরের এ চুক্তি হয়েছিল।
ভারত সরকারের ভাষ্য, পাকিস্তানের একাধিক ভুল পদক্ষেপের ফলেই ‘সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি’ বাস্তবায়নের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ চুক্তি সংশোধনের জন্য নোটিশ দিতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার। এ চুক্তি হওয়ার পর পানিবণ্টনে ভারত বরাবরই নরম মনোভাব দেখিয়ে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সঙ্গে সিন্ধু নদীর পানি ব্যবহারসংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই সিন্ধু নদীর পানি ব্যবহার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে টানাপোড়েন চলছে। দীর্ঘ ৬ বছর আলাপ–আলোচনার পর ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে গিয়ে নেহরু এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।
পাকিস্তানের কার্যকলাপে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত সরকার আরও বলেছে, ভারত অক্ষরে অক্ষরে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি বাস্তবায়নে নমনীয় মনোভাব দেখিয়ে আসছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থেকে কোনো সাহায্য পায়নি ভারত। ভারত সরকার বলেছে, ভারত পারস্পরিকভাবে সিন্ধু পানি চুক্তিতে একটি মধ্যস্থতার পথ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, পাকিস্তান ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের ৫টি বৈঠকের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছে। এ কারণেই এখন পাকিস্তানকে নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
নোটিশের উদ্দেশ্য
এ নোটিশের উদ্দেশ্য হলো সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘন সংশোধন করার জন্য পাকিস্তানকে তিন মাসের মধ্যে আন্তসরকারি আলোচনায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া। এ প্রক্রিয়াটি গত ৬২ বছরে পরিস্থিতির পরিবর্তন অনুসারে সিন্ধু পানি চুক্তি সংশোধন করবে। ভারত ও পাকিস্তান ৯ বছরের আলোচনার পর ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে বিশ্বব্যাংকও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অংশ নেয়। পাকিস্তান এ চুক্তির নিয়মকানুনকে ক্রমাগত উপেক্ষা করার পর এ বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এই প্রথমবার তাতে পরিবর্তন করার নোটিশ জারি করা হলো। সিন্ধু পানি চুক্তির লঙ্ঘন সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে ৯০ দিনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনার একটি সুযোগ করে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে গত ৬২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুযায়ী চুক্তিতে প্রয়োজনীয় বদল আনা যেতে পারে।
২০১৫ সালে ভারতের ঝিলম নদীতে কিষেনগঙ্গা এবং রাতলে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছিল পাকিস্তান। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সিন্ধু পানি চুক্তি মেনেই প্রকল্পে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি ব্যবহার করবে ভারত। কিন্তু তাতে কান দেয়নি পাকিস্তান।
ভারতের নোটিশ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে কোর্ট অব আরবিট্রেশনে কিষেনগঙ্গা এবং রাতলে পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি নিয়ে শুনানি চলছে। সেদিক থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই ভারত এ পন্থা অবলম্বন করেছে।
ভারত বলছে, সিন্ধু চুক্তি নিয়ে পারস্পরিকভাবে আলাপ-আলোচনার পথেও বসতে নারাজ পাকিস্তান। ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিন্ধু কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু এ সম্পর্কে আলোচনা করতে অস্বীকার করে পাকিস্তান। সেই জন্য চুক্তি সংশোধনের পথে হাঁটতে চাইছে ভারত। পাকিস্তান শুরু থেকে ভারতের উদারতাকে হালকাভাবে নিয়ে চলেছে। এ চুক্তির বিধান উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় আপত্তিও তুলেছে।
৬২ বছরের পুরনো ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে পাকিস্তানকে নোটিশ দিয়েছে ভারত। ২৫ জানুয়ারি, চুক্তির ৭(৩) ধারার অধীন ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির সংশোধনের বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। নোটিশে ‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ লঙ্ঘন সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। আইডব্লিউটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে বিরোধগুলোর সমাধান করা হবে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তান বারবার চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ ভারতের। এবার সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানকে নোটিশ দিয়ে ফের চুক্তির সংশোধনের বিষয়ে আলোচনার পথে এগোতে চাইছে ভারত।