বেটজেম্যান। ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ একটি কাব্য পুরস্কার। দশ বছর বয়স থেকে তের বছর বয়স্ক কিশোর-কিশোরী কবি এ পুরস্কারের আওতাভুক্ত। ইংরেজ কবি বেটজেম্যানের স্মরণে ২০০৬ সালে এটি প্রবর্তন করা হয়। ২০১৭ সালের এ পুরস্কার লাভ করেন সিরিয়ান শরণার্থী কিশোরী আমিনে আবু কেরেচ। দুই হাজারেরও অধিক প্রতিযোগীকে টপকিয়ে এই সম্মান বহন করে এনে শরণার্থী একটি পরিবারকে আনন্দে ভাসিয়ে দেন আমিনেহ।
আরব বসন্তের ফলে ছড়িয়ে পড়া গৃহযুদ্ধে সিরিয়া প্রায় বিধ্বস্ত। আমিনের বয়স যখন আটবছর তখন সে তার পিতা-মাতা তাম্মাম ও ব্যাসমেহের সঙ্গে ২০১১ সালে মিসরে চলে আসেন। মিসরে পৌঁছানোর আগপর্যন্ত তাদেরকে অনেক কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমিনেহ’র দুই ভাই-বোন। বড়বোন ফতুনÑ যার বয়স এখন চৌদ্দ। ছোট ভাই মোহাম্মদÑ বয়স এগার। এই তিনজনকে নিয়ে তাম্মাম-ব্যাসমেহ দম্পতি নিজ দেশ ত্যাগ করেছিলেন। আমিনেহ’র পরিবার দামেস্কের দারাইয়ায় বাস করতো। দারাইয়া আসাদ সরকারবিরোধী হিসেবে খ্যাত ছিল। তাই এই পরিপার্শ্বিক অবস্থাও তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াতো। আসাদ সরকারের স্বৈরশাসন থেকে বাঁচতে প্রতিনিয়ত তারা পথ খুঁজতো। দারাইয়াতে একটি ফ্যাব্রিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলো আমিনেহরা। সেটি আজ নেই। নিশ্চিহ্ন।
মিসর থেকে আমিনেহরা গত গ্রীষ্মে চলে আসে ইংল্যান্ডে। ইংলান্ডের অক্সফোর্ডে ত্রিশটি ভাষা নিয়ে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানে আমিনেহ ও তার বোন ফতুন ইরাকি কবি আদনান আল সায়েকের কাছে কবিতার কলা শিখছিলো। নিজ মাতৃভূমি সিরিয়ার কথা মনে পড়তেই আমিনেহ মিসর থাকাবস্থায় কবিতা লেখা শুরু করে। সিরিয়ার স্মৃতিকে কবিতায় ভাস্বর করে রাখতে আগ্রহ জাগে আমিনেহ’র। বেটজেম্যান পুরস্কার কমিটিসহ সংবাদ মাধ্যমগুলো এই কিশোরী কবির কবিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। গভীর অনুভূতি সম্পন্ন কবিতা, বিশ্ব বিবেককে নাড়ানো কবিতা, স্বৈরাচারদেরকে ধিক্কার জানানোর কবিতা, কিশোরের খাতায় অঙ্কিত শান্তির শ্বেত কবুতর ইত্যাদি পুরোধা পেয়েছিল আমিনেহ’র কবিতা।
খধসবহঃ ভড়ৎ ঝুৎরধ বা সিরিয়ার জন্য শোকগাঁথা কবিতাটিতে আমিনেহ তার দেশকে অঙ্কন করতে চেয়েছে। আমিনেহ’র কান্না পেয়েছে এ কবিতা লিখতে। আমিনেহ চায় না আর একটি সৈন্যও তার প্রিয় মাতৃভূমি সিরিয়ার জমিনে তা-ব চালাক। এই কবিতাটির প্রথমাংশ ইংরেজিতে, বাকিটুকু আরবি। আরবি অংশের ইংরেজি অনুবাদে আমিনেহ বড় বোন ফতুন এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়েছিলো। আমিনেহ আবু কেরেচের পুরস্কার লাভ করা সেই সাড়া জাগানো কবিতাটির অনুবাদ করেছেন মীম মিজান।
সিরিয়ার জন্য শোকগাঁথা
সিরিয়ার শ্বেত কবুতরগুলো আমার মাথার উপরে বিলাপ করছে
তাদের ডাকগুলো আমার চোখে কান্না করছে।
আমি একটি দেশকে আঁকার চেষ্টা করছি
যেটি আমার কবিতার মতই হবে
আর আমি যখন চিন্তা করব তখন আমার চিন্তাকে ভঙ্গ করবে না
যেখানে সৈন্যরা আমার মুখাবয়বের উপর দিয়ে হাঁটবে না।
আমি এমন একটি দেশ আঁকার চেষ্টা করছি
আমি যদি একজন কবি হই সেই দেশটি আমার যোগ্য হবে
আর অনুমতি দিবে যদি আমি কান্নায় ফেটে পড়ি।
আমি একটি নগর আঁকার চেষ্টা করছি
ভালোবাসার, শান্তির, উৎকর্ষের সম্মিলনের।
অরাজকতা, যুদ্ধ, ধ্বংসাবশেষ ও দুঃখমুক্ত।
মাসিক পাথেয়, ডিসেম্বর ২০১৭