সিলেট ও সুনামগঞ্জে ফের বন্যা

সিলেট ও সুনামগঞ্জে ফের বন্যা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সিলেট ও সুনামগঞ্জ আবারও বন্যায় তলিয়ে গেছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। টিলা এলাকা ছাড়া শুকনা স্থান আর অবশিষ্ট নেই। আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। নৌকাসংকটে লোকজনকে উদ্ধারের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।

এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতেও আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। এসএসসি পরীক্ষার তিন দিন আগে বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্বিষহ সময় কাটছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের। তারা পরিস্থিতি বিবেচনায় এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘আগের দিনের তুলনায় কমপক্ষে আড়াই ফুট পানি বেড়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তায় ছয় ফুট উচ্চতার মানুষও ডুবে যাচ্ছে। আমার অফিসের ব্যালকনি পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা সব আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষার জন্য যে সাতটি কেন্দ্র গতকাল পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিলাম সেগুলোও আজকে খুলে দিতে হয়েছে।’ অনেকে প্রত্যন্ত এলাকায় আটকা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের উদ্ধারে আমরা কাজ করছি। ১২০টি নৌকা উদ্ধারকাজে লেগেছে। মানুষের তুলনায় নৌকা পর্যাপ্ত নয়।’

গোয়াইনঘাট উপজেলার সবচেয়ে উঁচু ইউনিয়ন ফতেহপুর। ইউনিয়নের উজান ফতেহপুর গ্রাম ও মহিষখেড়ের মতো গ্রামে কোনো সময় বন্যার পানি ওঠেনি বলে জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। সেসব স্থান গতকাল এক থেকে দুই ফুট পানির নিচে ডুবে যায়। স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যা থেকে শুরু করে ১৯৯৮, ২০০৪ সালে যেসব বড় বন্যা হয়েছিল তার চেয়েও বেশি পানি হয়েছে এবার।

উপজেলার অন্তত ১০ জন বাসিন্দা জানিয়েছে, উপজেলা কমপ্লেক্স, থানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠানে হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি। উপজেলার ৫০০ গ্রামের প্রায় চার লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন যাপন করছে। তিন দিন ধরে উপজেলায় বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল ফোন চার্জ দিতে না পারায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। অনেকে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে আছে। হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকলেও দোকানপাট বন্ধ থাকায় খাবার কেনা যাচ্ছে না।

এদিকে সিলেট নগর এলাকায় পানি ঢুকছে বুধবার রাত থেকে। গতকাল নগর ঘুরে দেখা গেছে, শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, সাদিপুর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপার, কালীঘাট, তেরোরতন, তালতলা, জামতলা, মণিপুরী রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। নগরের উপশহর ‘বি’ ব্লকের বাসিন্দা সামরান আহমদ বলেন, ‘চার সপ্তাহ আগের বন্যার নানামুখী সংকট না কাটতেই আবার বন্যা। এক ধরনের মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার শহর, গ্রাম, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা নিমজ্জিত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সড়ক ও সেতুর। সুনামগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলা শহরসহ প্রতিটি পাড়া-মহল্লার প্রায় ৯০ শতাংশ বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে। নিমজ্জিত হওয়ায় ১০৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর শহরের গাড়ির সড়কে এখন নৌকায় যাতায়াত করছে মানুষজন। জেলার পাঁচটি হাসপাতাল নিমজ্জিত হওয়ায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, ছাতকের ১৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সদর, দোয়ারা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরে আরো শতাধিক স্কুল নিমজ্জিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, বন্যায় ৮৫০ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ১২০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এর আগের বন্যায়ও আউশ ধান, বাদাম ও সবজি নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে কৃষকরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *