নিজস্ব প্রতিবেদক ● সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন শুরু হয়েছে বুধবার। ২২ মার্চ ও ২৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে কোর্ট প্রাঙ্গণে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও নির্বাচনে মূল লড়াই হবে সরকারসমর্থিত সমন্বিত আওয়ামী লীগ ও সরকারবিরোধী বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক জোটের মধ্যে। এবার আওয়ামী প্রার্থীরা মরিয়া তাদের অবস্থান ধরে রাখতে। আর হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে আপ্রাণ চেষ্টায় বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। দুই দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া নিজ দলীয় আইনজীবীদের নিয়ে সভা ও বৈঠক করেছেন। তাতে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের মাধ্যমে নিজেদের অনুকূলে ফলাফল আনার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তবে কার প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। ২০১৭-১৮ সালের জন্য ১৪ সদস্যের কার্যকরী কমিটি গঠনের এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী উভয় জোট। জানতে চাইলে এবারের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বলেন, এবারের নির্বাচনে অতীতের যে কোনবারের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। অন্যদিকে জয়ের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলও সমান আশাবাদী। জয়ের মাধ্যমে বিএনপিও তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চায়। এ ব্যাপারে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি সেবামূলক সংগঠন। সে কারণে সাধারণ আইনজীবীরা এবারের নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ সমর্থিত প্যানেলকে নির্বাচিত করে সমিতির হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত নির্বাচনে সর্বোচ্চ পদ সভপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পদে আওয়ামী লীগ এবং সম্পাদকসহ অন্যান্য ৬টি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ঐক্য প্যানেল জয় লাভ করে। সারাদেশের আইনজীবী সমিতির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয় সুপ্রিম কোর্ট বারকে। সুপ্রিম কোর্ট বার তত্ত্বাবধায়ক নিমেষ চন্দ্র দাস জানান, আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী (বার অ্যাসোসিয়েশন) নির্বাচন-২০১৭-১৮ তে ১৪টি পদের বিপরীতে ৩১ জন প্রার্থী হয়েছেন। আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মোট ভোটার ৫ হাজার ৮০ জন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে একজন এবং সম্পাদক পদে দুজন অংশগ্রহণ করছেন। তিনি জানান, এ ওয়াই মশিহুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবদুল মতিন খসরু। অন্যান্য পদের মধ্যে সহ-সভাপতি অজিবউল্লাহ ও হোসনে আরা, সম্পাদক রবিউল আলম বুদু, কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম হিরু, সহ-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও সেলিম আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আর কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমার দেবুল দে, এ বি এম নূরে আলম উজ্জ্বল, হাসিনা মমতাজ, রুহুল আমিন তুহিন, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাহমুদুন্নবী উজ্জ্বল ও শেখ মো. মাজু মিয়া। বিএনপিসমর্থিত (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য) প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. জয়নুল আবেদীন। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে উম্মে কুলসুম বেগম (রেখা) ও ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, সম্পাদক পদে এ. এম. মাহবুবব উদ্দিন খোকন, কোষাধ্যক্ষ পদে এ বি এম রফিকুল ইসলাম তালুকদার (রাজা) এবং সহ-সম্পাদক পদে কাজী জয়নুল আবদীন ও শামীমা সুলতানা (দীপ্তি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদস্য পদে লড়ছেন শেখ তাহসিন আলী, মো. এমাদুল হক, আয়েশা আক্তার, মো. আহসানউল্লাহ, মো. মুসাব্বির হাসান ভূঁইয়া (রোমান), মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান ও মৌসুমী আখতার। ওই দুই প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনুছ আলী আকন্দ, সম্পাদক পদে আছেন অশোক কুমার ঘোষ ও মো. আবু এহিয়া দুলাল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আশা করি এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আমরা জয়ী হব। নির্বাচনে জয়ী হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের সব সমস্যা সমাধান করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আবদুল মতিন খসরু ২০০৬ সালে আইনমন্ত্রী ছিলেন। নিজ এলাকা (কুমিল্লা) থেকে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানও মনোনীত হন। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন বলেও জানা গেছে। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে আইনজীবীরা আমাদের পূর্ণ প্যানেলকে বিজয়ী করবেন বলে প্রত্যাশা করছি। আমি বিজয়ী হলে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নতুন অ্যানেক্স ভবন ২০তলা করা হবে। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারের সহ-সম্পাদক এবং ২০১২-১৩ সালে সভাপতি হন। তার জন্মস্থান বরিশাল। বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বুদু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের এ সভাপতি গতবার সম্পাদক পদে নির্বাচনে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। ছাত্র অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বারের সর্বোচ্চসংখ্যক বার অর্থাৎ চারবার সম্পাদক নির্বাচিত হন।