সৃষ্টির অপার বিষ্ময়; ফেরেশতা (পর্ব-২)

সৃষ্টির অপার বিষ্ময়; ফেরেশতা (পর্ব-২)

  • মুফতি মাহতাব উদ্দীন নোমান

গত পর্বের পর 

ফেরেশতাদের গুণসমষ্টি

ফেরেশতাদের বিশেষ কিছু গুণ কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এখানে বিশেষ চারটি গুণ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। মূল আলোচনায় প্রবেশের পূর্বে পাঠক সমীপে অনুরোধ যে, তাদের এই গুণাবলী যেন আমরা কেবল পড়েই ক্ষান্ত না হই বরং বাস্তব জীবনেও সেসব গুণে গুণান্বিত হওয়ার চেষ্টা করি। ফেরেশতারা যেহেতু আল্লাহ তাআলার নৈকট্যশীল সম্মানিত বান্দা, সুতরাং তাদের গুণাবলী অবলম্বনে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভে হয়তো আমরাও কিছুপথ অগ্রসর হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

এক. ফেরেশতাগণের গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো লজ্জাশীলতা। আম্মাজান আয়েশা রা. এর হাদীস দ্বারা এটা প্রমাণিত। তিনি বলেন –

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে শোয়া ছিলেন তার উরু অথবা পায়ের গোছা উন্মক্ত ছিলো। আবূ বকর (রাঃ) এসে অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্থাতেই কথাবার্তা বললেন। এরপর উমর (রাঃ) অনুমতি চাইলে অনুমতি দিলেন এবং এ অবস্থায়ই কথাবার্তা বললেন। উসমান (রাঃ) অনুমতি চাইতেই রাসুলুল্লাহ – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করলেন। এরপর উসমান (রাঃ) কথা বার্তা শেষ করে চলে যাওয়ার পর আয়েশা (রাঃ) বললেন,’আবূ বকর (রাঃ) এলেন, আপনি পরিবর্তিত হলেন না এবং বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করলেন না, উমর (রাঃ) এলেন, আপনি পরিবর্তিত হলেন না এবং বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করলেন না, অথচ উসমান (রাঃ) আসতেই আপনি উঠে বসলেন এবং কাপড় ঠিক করে নিলেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- আমি কি সে ব্যক্তিকে লজ্জা করবো না, ফিরিশতারা যাকে লজ্জা করে থাকেন ? (মুসলিম, হাদিস- ২৪০১)

এই হাদীস দ্বারা জানা গেল, ফেরেশতারা সকলেই লজ্জাশীলতার গুণে গুণান্বিত। তাদের কেউই নির্লজ্জ ও অশ্লীল নন। অশ্লীল ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হওয়া তো দূরের কথা সেই কাজের চিন্তাও তারা কখনো করেন না। আমাদের সকলকেই এই গুনে গুণান্বিত হওয়া জরুরী। কেননা লজ্জাশীলতা মানুষের স্বভাবগত বিষয় হওয়ার পাশাপাশি ঈমানের অঙ্গও বটে। সুতরাং এই গুণ ছাড়া আমাদের ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। ঈমানে অপূর্ণতা রয়ে যাবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – বলেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি। অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখাটি হচ্ছে ‘আল্লাহ ব্যাতিত কোনো ইলাহ নেই’ এ সাক্ষ্য দেওয়া, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে- পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা। (বুখারি, হাদিস ৯, মুসলিম, হাদিস ৩৫)

লজ্জাশীলতা এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অশ্লীল ও ঘৃণ্য কাজ এবং অন্যের হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে

প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল কাদীরে লজ্জাশীলতার সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছেন যে, ‘লজ্জাশীলতা এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অশ্লীল ও ঘৃণ্য কাজ এবং অন্যের হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে’।

সকল মানুষ যখন অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং অন্যের হক যথাযথ আদায় করবে তখন তার কাছে সকল কল্যাণ ধরা দিবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে সে সম্মানিত, মর্যাদাবান ও প্রিয় পাত্র হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি এই গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তাইতো তিনি আজ পর্যন্ত সকল সভ্য জাতির অনুসৃতজন।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন,

‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ গৃহে অবস্থানরত কুমারী মেয়েদের চেয়েও বেশি লাজুক ছিলেন’। (বুখারী ৩৫৬২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন–

লজ্জাশীলতা কেবল কল্যাণই বয়ে আনে। (বুখারি, হাদিস ৬১১৭ / মুসলিম, হাদিস ৩৭)

সুতরাং আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করা এবং প্রভূত কল্যাণ অর্জন করার জন্য এই গুণে গুণান্বিত হওয়া একান্ত জরুরী।

দুই. ফেরেশতাগণের গুণাবলীর মধ্যে আরেকটি হলো, তারা খুব শক্তিশালী। নিম্নে বর্ণিত হাদীস দ্বারা একজন সাধারন ফেরেশতার শক্তি সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়—

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একবার তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, উহুদের দিনের চাইতে কঠিন কোন দিন আপনার উপর এসেছিল? তিনি বললেন, আমি তোমার কওম থেকে যে বিপদের সম্মুখিন হয়েছি, তা তো হয়েছি। তাদের চেয়ে সবচেয়ে বেশী কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন আমি যখন ইবনু আবদে ইয়ালীল ইবনু আবদ কুলালের সম্মুখিন হয়েছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার জবাব দেয়নি। তখন আমি এমন বিষন্ন চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌঁছা পর্যন্ত আমার চিন্তা লাঘব হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠালাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম এক টুকরা মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে দৃষ্টি দিলাম। তার মধ্যে ছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)।

তিনি আমাকে ডেকে বললেন, আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার কাছে পাহাড়ের (দায়িত্বে নিয়োজিত) ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছা আপনি তাঁকে হুকুম দিতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফিরিশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, হে মুহাম্মদ! এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছাধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাদের উপর আখশাবাইন (দুটি কঠিন শিলার পাহাড়) কে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (না, তা হতে পারে না) বরং আমি আশা করি মহান আল্লাহ তাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যে, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। (বুখারী ৩২৩১)

এটি ছিল তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময়ের ঘটনা। “আখশাবাইন” বলা হয় দুটি বিশালাকৃতির পাহাড়কে। একজন সাধারন ফেরেশতা যদি বিশাল আকৃতির দুটি পাহাড়কে তায়েফবাসীর উপর চাপিয়ে পিষ্ট করতে সক্ষম হন, তাহলে অন্যান্য ফেরেশতাদের কী পরিমান শক্তি হবে তা কিছুটা অনুমান করা যায়।

ফেরেশতাদের এই গুণ থেকে আমাদের শিক্ষনীয় বিষয় হলো শক্তির অপব্যবহার না করা। পাহাড় চাপিয়ে দেওয়ার শক্তির ফেরেশতাদের ছিল, শুধুমাত্র আল্লাহর রাসূলের নিষেধের কারণেই তারা চাপিয়ে দেননি। তারা তাদের শক্তিকে আল্লাহ ও তার রাসূলের মর্জি মোতাবেক পরিচালনা করেছে। আমাদেরও আমাদের শক্তিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মর্জি মোতাবেক পরিচালনা করতে হবে।

আমার শক্তি আছে বলেই আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও অধীনস্থ ব্যক্তির উপর জুলুম করবো, সেই অধিকার শরীয়ত আমাকে দেয়নি

আমার শক্তি আছে বলেই আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও অধীনস্থ ব্যক্তির উপর জুলুম করবো, সেই অধিকার শরীয়ত আমাকে দেয়নি। তবে শরীয়ত যেখানে যতটুকু শক্তি ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছে সেখানে ততটুকই শক্তি ব্যয় করা জরুরি। এর থেকে বেশি শক্তি ব্যয় করা অথবা শক্তির অপব্যবহার করে অন্যের উপর জুলুম করা অত্যন্ত জঘন্য, নিন্দনীয় ও শরীয়ত বিরোধী কাজ। এর থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য আবশ্যক।

এই ক্ষেত্রে আমরা আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম আদর্শ গ্রহণ করতে পারি। মক্কার কাফেররা তার উপর সীমাতিরিক্ত জুলুম নির্যাতন এবং তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করার পরও তিনি যখন মক্কার অধিপতি হলেন, তখন প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে সকলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। এর চেয়ে উত্তম আদর্শ আর কী হতে পারে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই মহৎ গুণ দেখে মক্কার সকল কাফের ওই সময়ই ইসলাম গ্রহণ করেন।

আল্লাহ তা’আলাও কোরআনের মধ্যে মুত্তাকীদের গুনাগুন এভাবে বর্ণনা করেন–

যাহারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আল ইমরান আয়াত ১৩৪)

অর্থাৎ, ক্রোধ তাদেরকে উত্তেজিত করলে তারা তা কার্যকরী না করে সংবরণ করে নেয় এবং তাদের সাথে কেউ অন্যায় করলে প্রতিশোধ গ্রহণের শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা তাকে ক্ষমা করে দেয়।

আল্লাহ তা’আলা কোরআনের অন্যত্র বলেন–

যারা গুরুতর পাপ ও খারাপ কাজ হতে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাবিষ্ট এ ক্ষমা করে দেয়, (সূরা শুরা, আয়াত ৩৭)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই শক্তির অপব্যবহার থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন। ক্রোধ দমন ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।

তিন. ফিরিশতাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তারা মানবীয় দূর্বলতা, ক্লান্তি, কামনা বাসনা বা পাপ আসক্তি থেকে পরিপূর্ণ মুক্ত। তাঁরা সর্বদা ক্লান্তিহীনভাবে আল্লাহর গুণগান করেন এবং তাঁর নিদের্শ পালন করেন। তার আদেশ পালনে কখনো অহংকার করেন না এবং সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকেন।
আল্লাহ তাআলা তাদের গুণাগুণ কোরআনে এভাবে বর্ণনা করেন –

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই তাঁর (আল্লাহর) এবং তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহঙ্কারবশে তাঁর ‘ইবাদত করা থেকে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না। তারা দিবারাত্র তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তারা শৈথিল্য করে না। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ১৯-২০)

আর আল্লাহকেই সিজদা করে আসমানসমূহে যা আছে এবং যমীনে যে প্রাণী আছে, আর ফেরেশতারা এবং তারা অহঙ্কার করে না। (নাহাল ৪৯)

‘তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের ছাড়া আর কারো জন্য তারা সুপারিশ করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।’’ সূরা আম্বিয়া: ২৬-২৮ আয়াত।

ফেরেশতাদের এই গুনাগুন থেকে আমাদের শিক্ষণীয় হলো, কখনোই আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালনে অহংকার এবং শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। যখন যে অবস্থাতেই আমাদের সামনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ আসবে, তখন নিঃসংকোচে তা পালন করতে হবে। “মুসলিম” হওয়ার অর্থই হল আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী। যদি আল্লাহর নির্দেশ আমরা বিনাবাক্যে মানতে নাই পারি, তার আদেশ পালনে নিজেকে মিটিয়ে দিতে নাই পারি, তাহলে আমরা কিভাবে মুসলিম হলাম।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন –

অতঃপর যদি তারা যদি অহঙ্কার করে, তবে যারা তোমার রবের নিকটে রয়েছে তারা দিন-রাত তাঁরই তাসবীহ পাঠ করছে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। (হা মিম সিজদাহ ৩৮)

মাসীহ কখনো আল্লাহর বান্দা হতে (নিজকে) হেয় মনে করে না এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারাও না, আর যারা তাঁর ইবাদাতকে হেয় জ্ঞান করে এবং অহঙ্কার করে, তবে অচিরেই আল্লাহ তাদের সবাইকে তাঁর নিকট সমবেত করবেন

মসীহ আল্লাহর দাস হবে, তাতে সে কোন মতেই উন্নাসিকতা প্রদর্শন করে না এবং নৈকট্যপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণও নয়,বস্তুতঃ যারা তাঁর দাসত্ব (ইবাদত) করতে উন্নাসিকতা প্রদর্শন করে ও অহংকার করে, তিনি তাদের সকলকে অচিরেই তাঁর নিকট একত্র করবেন

(নিসা ১৭২-১৭৩)

আল্লাহর নির্দেশের সামনে যে অহংকার প্রদর্শন করে, তার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেন,

অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা আল্লাহর ইবাদতে অহংকার প্রদর্শন করে, তারা অচিরে লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা গাফির ৬০)

ফেরেশতাগণ কী পরিমান আল্লাহর আদেশের অনুগত এবং তাঁর নির্দেশ পালনে নিজেকে মিটিয়ে দেয়, এর জলজ্যান্ত উদাহরণগুলো আমরা কোরআন থেকে পাই।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন–

‘আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।
আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।

তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’।

তিনি বললেন, ‘হে আদম, এগুলোর নাম তাদেরকে জানাও’। অতঃপর যখন সে এগুলোর নাম তাদেরকে জানাল, তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ ও যমীনের গায়েব জানি এবং জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন করতে’?

আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা বাকারা ৩০-৩৪)

চলবে… 

 

লেখক, মুফতি ও সিনিয়র শিক্ষক, আল জামি’আ দারুল উলুম মাদরাসা, হাড়িনাল, গাজীপুর।  

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়ুন:

হযরত ঈসা আলাইহিস সালামঃ আমাদের নবী

সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা

মহাররম ও আশুরা সম্পর্কিত আয়াত এবং হাদিস

ঈদ ও কোরবানি; ইতিহাস ও শিক্ষা 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *