সৃষ্টির অপার বিষ্ময়; ফেরেশতা ।। পর্ব-৬

সৃষ্টির অপার বিষ্ময়; ফেরেশতা ।। পর্ব-৬

  • মুফতি মাহতাব উদ্দীন নোমান

আলোচনা চলছিলো ফেরেশতাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে। বিগত পর্বগুলোয় আমরা তাঁদের আটটি দায়িত্বের কথা জেনেছি । সে ধারাবাহিকতায় আমরা তাদের আরও কিছু দায়িত্ব নিয়ে আজ  আলোচনা করবো

গত পর্বের পর 

নয়. ভালো মানুষদের জন্য যেমন ফেরেশতারা দোয়া করেন, সুপারিশ করেন, ঠিক তেমনিভাবে কিছু হতভাগা ও আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য বান্দাদের জন্য তারা বদদোয়া বা লানতও করেন। হতভাগা ঐসকল ব্যক্তি যাদের জন্য সম্মানিত ফেরেশতাগণও বদ দোয়া করেন।

কাদের জন্য ফেরেশতারা বদদোয়া করেন?

ক. যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের জন্য ফেরেশতারা বদ দোয়া করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে এবং কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লা’নত’। (বাকারা ১৬১)

খ. যারা সাহাবায়ে কেরামকে গালি দেয় তাদের উপরও ফেরেশতারা লানত করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

‘ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সে ব্যক্তি আমার সাহাবাগণকে গালি দেবে, তার উপর আল্লাহ, ফিরিশতাবর্গ এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ’।

এক বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে, ‘‘আল্লাহ তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না।’’

(ত্বাবারানী কাবীর ১২৫৪১, সিলসিলাতুল আহাদিস আস সহীহাহ ৩৩৪০)

গ. যে ব্যক্তি তার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অন্যায় ভাবে লোহার অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে ভয় দেখায়, ওই ব্যক্তিকে ফেরেশতারা অভিশাপ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-

‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের প্রতি কোন লৌহদণ্ড (লোহার অস্ত্র) দ্বারা ইঙ্গিত করে সে ব্যক্তিকে ফিরিশতাবর্গ অভিশাপ করেন; যদিও সে তার নিজের সহোদর ভাই হোক না কেন। (অর্থাৎ, তাকে মারার ইচ্ছা না থাকলেও ইঙ্গিত করে ভয় দেখানো গোনাহর কাজ।) (মুসলিম ২৬১৬)

ঘ. জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা এর হাদিস দ্বারা আরো তিন শ্রেণীর মানুষকে ফেরেশতারা লানত করে বলে জানা যায়। তারা হল- ১. ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পাওয়ার পরেও তওবা-ইস্তেগফার এর দ্বারা নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারে নাই। ২. যে পিতামাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়ে তাদের সেবা-যত্ন করে জান্নাত অর্জন করতে পারেনি। ৩. যার সামনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উচ্চারণ করার পরেও সে দুরূদ পড়েনি।

মূল হাদীসটি এমন-

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে উঠলেন। তিনি প্রথম সিঁড়িতে উঠে বলেনঃ আমীন। তিনি দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে উঠেও বলেনঃ আমীন। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আপনাকে তিনবার আমীন বলতে শুনলাম। তিনি বলেনঃ আমি প্রথম সিঁড়িতে উঠতেই জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে রমযান মাস পেলো এবং তা শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও তার গুনাহর ক্ষমা হলো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে নিজ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেলো, অথচ তারা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করালো না। আমি বললামঃ আমীন। অতঃপর তৃতীয় ধাপে উঠতেই তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যার নিকট আপনার উল্লেখ হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়েনি। আমি বললামঃ আমীন।

এছাড়াও আরও অনেক অপকর্ম রয়েছে, যে ব্যক্তি সেগুলো করবে, তার ওপর ফেরেশতারা বদদোয়া করে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে ফেরেশতার বদদোয়া অভিশাপ থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।

দশ. তাদের আরেক দলের দায়িত্ব হল মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া। কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে এ বিষয়টিও প্রমাণিত যে, প্রত্যেক মানুষের সঙ্গেই একটি জিন বা শয়তান থাকে। যা মানুষকে গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতার দিকে কুমন্ত্রণা দেয়। তাকে অন্যায়-অশ্লীল কাজের দিকে প্ররোচিত করে। আর তাতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের সাথেই একজন ফেরেশতা থাকেন। সে তাকে ভালো ও কল্যাণকর কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। নেককাজ ও শরীয়তের উপর চলতে সাহস যোগায়।

‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার সঙ্গে তার সহচর জিন (শয়তান) এবং সহচর ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি।’ (মুসলিম ২৮১৪)

আর ওই দুষ্টু শয়তানের আক্রমণ ও কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে একটি দোয়া মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন –  رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ – وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার প্রভু! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুরা মুমিনূন, আয়াত ৯৭-৯৮)

এগার. ফেরেশতাদের আরেক দলের দায়িত্ব হলো তারা মৃত্যুর সময় জান কবজ করেন। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন-

বল, ‘তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফিরিশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যানীত হবে।’ (সুরা সাজদাহ: আয়াত: ৩২)

‘অবশেষে যখন তোমাদের কারো কাছে মৃত্যু আসে, আমার প্রেরিত দূতগণ তার মৃত্যু ঘটায়। আর তারা কোন ত্রুটি করে না। (আনআম ৬১)

মৃত্যুবরণকারীর আমল অনুযায়ী ফেরেশতাদের আকৃতি ও জান কবজের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হয়। একজন মুমিন ও নেককারের জান কবজ তারা যত সহজ ভাবে করে, কাফের, বেঈমান ও গুনাহগারের জান কবজ তত সহজে হয় না। বরং অনেক কঠিন ও কষ্টদায়ক হয়ে থাকে।

একজন মুমিনের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসেন। তাকে নির্ভয় দেন এবং বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এরশাদ করছেন-

‘নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাযিল হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’।

‘আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু এবং আখিরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা দাবী করবে। পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ।  (হা মিম সিজদাহ ৩০-৩১)

ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটায় উত্তম অবস্থায়, তারা বলে, ‘তোমাদের উপর সালাম। জান্নাতে প্রবেশ কর, যে আমল তোমরা করতে তার কারণে। (নাহাল ৩২)

এর বিপরীত, কাফের ও গুনাগারের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তাদের চেহারায় ও পশ্চাতদেশে  আঘাত করেন এবং জ্বলন্ত আগুনের দুঃসংবাদ দেন। কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-

‘আর যদি তুমি দেখতে, যখন ফেরেশতারা কাফিরদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের চেহারায় ও পশ্চাতে আঘাত করে, আর (বলছিল) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন কর’। (আনফাল ৫০)

একজন মুমিন ও কাফেরের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাদের অবস্থার বিবরণ আমরা একটি হাদীস থেকে পাই। ইমাম নাসাঈ রহ. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে উল্লেখ করেন-

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হয় তখন তার কাছে একদল রহমতের ফেরেশতা সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে এসে (তার) তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, “তুমি আল্লাহ তা’আলার রহমত এবং সন্তুষ্টির পানে বের হয়ে আস আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর রুষ্ট নন; তুমি তার উপর সন্তুষ্ট, তিনিও তোমার উপর সন্তুষ্ট। তখন আত্না মেশকের সুঘ্রাণ অপেক্ষাও অধিক সুঘ্রান ছড়াতে ছড়াতে বের হয়ে আসে।

যখন ফেরেশতাগণ সলামের খাতিরে আত্নাকে পর্যায়ক্রমে একজনের হাত থেকে অন্যজনের হাতে দিয়ে আসমানের দরজায় নিয়ে আসেন তখন তথাকার ফেরেশতাগণ বলতে থাকেন, এ সূগন্ধি কত না উত্তম! যা তোমরা নিয়ে আসলে। আর তারা তাকে মু’মিনদের রুহ সমূহের কাছে নিয়ে যান। তোমাদের কেউ প্রবাস থেকে আসলে তোমরা যেরূপ আনন্দিত হও, মু’মিনদের রূহও ঐ নবাগত রূহকে পেয়ে ততোধিক আনন্দিত হয়।

মুমিনদের রূহ নবাগত রূহকে জিজ্ঞাসা করে যে, অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কি কাজ করেছে? অমুক ব্যক্তি দুনিয়াতে কি কাজ করেছে? তখন ফেরেশতারা বলেন, তার সম্পর্কে তোমরা কি জিজ্ঞাসা করবে? সে দুনিয়ার চিন্তা-ভাবনায় ছিল। যখন নবাগত রূহ বলেঃ সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? তখন আসমানের ফেরেশতারা বলেনঃ তাকে তার বাসস্থান হাবিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর কাফির যখন মৃত্যুর সম্মুখীন হয় তখন তার কাছে আযাবের ফেরেশতারা চটের ছালা নিয়ে আগমন করে এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বলে থাকে, “তুমি আল্লাহ তা’আলার আযাবের পানে বের হয়ে আস, তুমিও আল্লাহ তা’আলার উপর অসন্তুষ্ট, আল্লাহ তা’আলাও তোমার উপর অসন্তুষ্ট। তখন সে মুর্দারের দুর্গন্ধ থেকেও অধিকতর দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে রের হয়ে আসে। যখন ফেরেশতারা তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানের দরজায় পৌছে তখন তথাকার ফেরেশতারা বলতে থাকে এ কি দুর্গন্ধ! এরপর ফেরেশতারা তাকে কাফিরদের আত্না সমূহের কাছে নিয়ে যায়’। (নাসাঈ, হাদিস ১৮৮৩)

এরকম আরেকটি হাদীস ইবনে মাজাহ রহ. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন,

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মৃত্যুর সময় মানুষের নিকট ফেরেশতা আগমন করেন। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তি উত্তম লোক হলে তারা বলেন, হে পবিত্র আত্মা! পবিত্র দেহ থেকে প্রশংসিত অবস্থায় বের হয়ে এসো এবং আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকে। অতঃপর রূহ বের হয়ে আসলে তারা তা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন। এ রূহের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়।

জিজ্ঞেস করা হয়, সে কে? ফেরেশতাগণ বলেন, অমুক ব্যক্তি। তখন বলা হয়, পবিত্র আত্মাকে স্বাগতম, যা ছিল পবিত্র দেহে। প্রশংসিত অবস্থায় তুমি প্রবেশ করো, আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। তাকে অবিরতভাবে এ সংবাদ প্রদান করা হয়, যাবত না তা মহামহিম আল্লাহ যে আসমানে অবস্থান করেন সেখানে পৌঁছে যায়। মুমূর্ষু ব্যক্তি পাপাচারী হলে ফেরেশতা বলেন, হে নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মা! নিন্দিত অবস্থায় বের হয়ে আয় এবং উত্তপ্ত গরম পানি ও রক্ত-পুঁজের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর এবং অনুরূপ বহু বিষাক্ত বস্ত্তর। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকেন। অতঃপর তারা রূহসহ উর্দ্ধাকাশে আরোহণ করেন। কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হয় না।

জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি কে? বলা হয়, অমুক। তখন বলা হয়, নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মার জন্য নাই কোন সাদর সম্ভাষণ। তুই নিন্দিত অবস্থায় ফিরে যা। কারণ তোর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খোলা হবে না। অতঃপর একে আসমান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তা কবরে ফিরে আসে’। (ইবনে মাজাহ হাদীস ৪২৬২, আহমাদ ৮৫৫১)

(চলবে)

লেখক, মুফতি ও সিনিয়র শিক্ষক, আল জামি’আ দারুল উলুম মাদরাসা, হাড়িনাল, গাজীপুর। 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *