সৃষ্টির অপার বিষ্ময়; ফেরেশতা (পর্ব-১)

সৃষ্টির অপার বিষ্ময়; ফেরেশতা (পর্ব-১)

  • মুফতি মাহতাব উদ্দীন নোমান

ঈমানের মৌলিক রোকনসমূহের অন্যতম হল ফেরেশতাগণের উপর ঈমান আনা। এই সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন–

‘রাসূল, তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছেন এবং মু’মিনগণও। তাঁরা সকলে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৫)

ইমাম মুসলিম রহ. সহীহ মুসলিমে ‘হাদীসে জিবরাইলে’ উল্লেখ করেছেন –

উমর ইবনে খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, আমরা একদিন -রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর নিকটে বসেছিলাম। হঠাৎ একটি লোক আমাদের কাছে এল। তার পরনে ধবধবে সাদা কাপড় এবং তার চুল কুচকুচে কাল ছিল। (বাহ্যতঃ) সফরের কোন চিহ্ন তার উপর দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনছিল না। শেষ পর্যন্ত সে নবি – সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সামনে বসল; তার দুই হাঁটু তাঁর (নবির) হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে দিল এবং তার হাতের দুই করতলকে নিজ জানুর উপরে রেখে বলল, হে মুহাম্মাদ!…

সে (আবার) বলল, আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলসমূহ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে। (মুসলিম ৮, তিরমিযি ২৬১০, নাসায়ি ৪৯৯০, আবু দাউদ ৪৬৯৫,)

সুতরাং তাদেরকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য ফরজ। যদি কেউ তাদেরকে অবিশ্বাস করে তাহলে সে আর মুমিন থাকবে না। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন–

“এবং কেউ যদি আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতা, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁহার রাসূলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করে সে ঘোরতর পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৩৬)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন–

‘যে কেউ আল্লাহ্ তাঁর ফিরিশতাণ, তাঁর রাসূলগণ এবং জিবরীল ও মীকাঈলের শত্রু সে জেনে রাখুক, আল্লাহ নিশ্চয়ই কাফিরদের শত্রু। (সূরা বাকারা, আয়াত– ৯৮)

ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনার অর্থ হলো, তাদের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করা। জ্বীন ও মানুষের মতো তারাও আল্লাহ তা’আলার সম্মানিত বান্দা এবং তাঁর নির্দেশ পালনে বাধ্যগত। আল্লাহর আদেশ অমান্য করার শক্তিই তাদের নেই। তাঁরা মানবীয় দুর্বলতা ও কামনা বাসনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং সকল সম্মানজনক ও উৎকৃষ্ট গুণে গুণান্বিত। তবে তাঁরা আল্লাহ তাআলার সন্তান না এবং তাঁদেরকে উপাসনা করাও যাবে না। তাঁরাও মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবেন এবং পুনর্জীবিত হবেন। আল্লাহ তাআলার নির্দেশে সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করাই তাঁদের কাজ।
কোরআন-হাদীসে বর্ণিত তাঁদের নাম, আকৃতি ও গুণাবলী সম্পর্কেও বিশ্বাস রাখা জরুরী।

ফেরেশতার সংজ্ঞা

ফেরেশতা হলেন এমন পুতপবিত্র ও সম্মানিত বান্দা, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ কাজের জন্য বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছেন। তারা আল্লাহ তাআলার নৈকট্যশীল ও অনুগত বান্দা। সর্বদাই তারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কাজে লিপ্ত থাকেন। কখনোই আল্লাহ তাআলার আদেশ অমান্য করেন না। বিমূর্ত অবয়বের অধিকারী, তবে তারা যেকোন আকৃতি ধারণ করে মূর্ত হতে পারেন। তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ নেই, নেই বিবাহ ও যৌন আকাংখ্যা। তারা পানাহারও করেন না, ক্লান্ত-পরিশ্রান্তও হন না। তারা মানুষের শিরা উপশিরা, এমনকি অন্তরাত্মা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন।

তাঁদের পাখার প্রকৃত সংখ্যা কতো তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে জিবরাঈল (আঃ)-এর সম্পর্কে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর ছয়’শ পাখা আছে।

ফেরেশতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য

আমরা দুনিয়াতে দেখতে পাই, সকল রাষ্ট্রপ্রধানই সুষ্ঠুভাবে তার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে নির্ধারণ করেন, যারা রাষ্ট্রপরিচালনায় রাষ্ট্রপ্রধানকে সাহায্য করেন। সেসব ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত রাষ্ট্রপ্রধান যেমন রাষ্ট্রপরিচালনা করতে সক্ষম নয়, ঠিক তেমনি ভাবে ওই ব্যক্তিবর্গও রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া পরস্পরে মতানৈক্যের কারণে সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। সুতরাং রাষ্ট্রপ্রধান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের নিঃস্বার্থ আত্মনিয়োগের সমন্বয়েই একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।

এইনিয়মটি শুধু রাষ্ট্রের সাথে এই নির্ধারিত নয়। একটি গ্রাম, একটি সমাজ অথবা একটি ছোট পরিবারও তার প্রধান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সমন্বয় ব্যতীত সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়া অসম্ভব। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে এই পৃথিবীতে তার খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। তারা এখানে আল্লাহ তাআলার দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী খেলাফত কায়েম করবে, রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। তারা তাদের রাষ্ট্র, গ্রাম, সমাজ অথবা পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে এই দুনিয়াবী নিয়মের মুখাপেক্ষী হবে।

আল্লাহ তাআলা কোরআনের বহু জায়গায় দ্ব্যর্থহীন ভাবে উল্লেখ করেছেন, একমাত্র তিনিই এই বিশ্বজগতের পরিচালনাকারী। এই বিশ্বজগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন এবং এর পরিচালনার দায়িত্ব তাকে ক্লান্ত করতে পারে না। তারপরেও আল্লাহ তাআলা মানুষকে রাষ্ট্রপরিচালনার সুষ্ঠু ও সঠিক পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়ার জন্যই ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং বিশ্বজগতের বিভিন্ন নিয়োজিত করেছেন। তারা বিশ্বজগত পরিচালনায় আল্লাহর সেই ইচ্ছা ও নির্দেশেরই বাস্তবায়ন করেন।

ফেরেশতাদের আকার-আকৃতি

ফেরেশতাদের মূল আকৃতি কেমন তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ –সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – ব্যতীত এই উম্মতের কোন মানুষ তাদেরকে মূল আকৃতিতে দেখতে পারেনি। তবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে তারা তাদের আকৃতি পরিবর্তন করলে মানুষ তাদেরকে দেখতে পারে। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় তাদের আকৃতির কথা উল্লেখ রয়েছে।

এক. আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে বিশেষ এক নূর দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।

আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন–’ফেরেশতাদেরকে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে’ (মুসলিম, হাদিস ২৯৯৬)

দুই. তারা পাখা বিশিষ্ট। তাদের মধ্যে কারোর দুটি করে, কারোর তিনটি করে, কারোর চারটি করে, কারোর আরো বেশি পাখা রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন–

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, ফেরেশতাদেরকে বাণীবাহকরূপে নিযুক্তকারী, যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতির, আয়াত ১)

হাদীসের মধ্যেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

হযরত আবুদ্দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন–

ইলম অন্বেষণকারীর সন্তুুষ্টির জন্য ফিরিশতাগণও তাদের পাখা নামিয়ে দেন। ( তিরমিজি, হাদিস ২৬৮২/ আবু দাউদ, হাদিস ৩৬৪১)

তবে তাঁদের পাখার প্রকৃত সংখ্যা কতো তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে জিবরাঈল (আঃ)-এর সম্পর্কে এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁর ছয়’শ পাখা আছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন :-

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে তাঁর ছয়শ ডানাযুক্ত অবস্থায় দেখেছেন। (বুখারী-৪৮৫৬, মুসলিম-১৭৪)

আল্লাহ তাআলা কোরআনের বহু জায়গায় দ্ব্যর্থহীন ভাবে উল্লেখ করেছেন, একমাত্র তিনিই এই বিশ্বজগতের পরিচালনাকারী। এই বিশ্বজগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন এবং এর পরিচালনার দায়িত্ব তাকে ক্লান্ত করতে পারে না।

তিন. তারা বিশাল আকৃতির অধিকারী। নিম্নে দুটি হাদীস দ্বারা তাদের আকৃতির বিশালতা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়।

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– আমাকে আরশবাহী একজন ফেরেশতা সম্পর্কে কিছু বর্ণনা দেয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। তা এরূপ, তার কানের লতীকা থেকে কাঁধের দূরত্ব হলো, সাত’শ বছরের রাস্তা! (আবু দাউদ-৪৭২৭)

আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রা. এর এক প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহর রাসূল –সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম– বলেছেন,

তিনি তো ছিলেন জিবরীল, কেবলমাত্র এ দু-বারই আমি তাঁকে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখেছি। তাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও যমীনের মধ্যবতী সবটুকু স্থান। (বুখারী ৩২৩৫, মুসলিম ১৭৭)

চার. কোরআন ও হাদীসের দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত যে, আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতাগণ কখনো কখনো মানুষের আকৃতি ধারন করতে পারে।

আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ থেকে বর্ণিত,

একবার হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিকট ওহী কিরূপে আসে? তিনি বললেন, ‘এর সব ধরণের ওহী নিয়ে ফিরিশতা আসেন। কোন কোন সময় ঘণ্টার আওয়াজের ন্যায় শব্দ করে (আসে) যখন ওহী আমার নিকট আসা শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি যা বলেছেন আমি তা মুখস্ত করে ফেলি। আর এরূপ শব্দ করে ওহী আসাটা আমার নিকট কঠিন মনে হয়। কখনও কখনও ফিরিশতা আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে আসেন এবং আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্ত করে নেই।’ (বুখারী ৩২১৫, মুসলিম ৩৩৯)

এই হাদীসে ওহী আসার পদ্ধতির পাশাপাশি ফেরেশতাদের মানুষ রূপ ধারণ করে নবীজি কাছে আসার বিষয়টি প্রমাণিত হলো। কোরআন দ্বারাও এই বিষয়টি স্পষ্ট প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,

অতঃপর আমি তাহার নিকট আমার রূহ্কে পাঠাইলাম, সে তাহার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করিল। (মারইয়াম-১৭)

রূহ বলতে জিবরীল (আঃ)। যাকে পূর্ণ মনুষ্য আকৃতিতে হযরত মারইয়ামের নিকট পাঠানো হয়েছিল।

এছাড়াও ইব্রাহীম আঃ এর কাছে ফিরিশতাগণ মানুষের আকৃতিতে এসেছেন। যেমন সূরা যারিয়াতের ২৪ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

পাঁচ. তাদের মধ্যে নারী-পুরুষ নেই। মক্কার কোন কোন কাফের ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করেছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদেরকে নারী রূপে সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তাআলা তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ধমকের সুরে বলেন–

এখন তআদেরকে জিজ্ঞেস কর, ‘তোমার প্রতিপালকের জন্যই কি রয়েছে কন্যা সন্তান এবং তাদের জন্য পুত্র সন্তান?’ অথবা আমি কি ফিরেশতাদেরকে নারীরূপে সৃষ্টি করেছিলাম, আর তারা প্রত্যক্ষ করছিলো?

দেখ, তারা তো মনগড়া কথা বলে যে,আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেনে। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। তিনি কি পুত্র সন্তানের পরিবর্তে কন্যা সন্তান পছন্দ করতেন? তোমাদের কী হয়েছে, এ তোমাদের কেমন বিচার? তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তোমাদের কী সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ আছে? (সূরা সাফফাত, আয়াত ১৪৯-১৫৬)

তোমাদের রব কি পুত্র সন্তানের জন্য তোমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? নিশ্চয় তোমরা জঘন্য কথা বলে থাক। (বনি ইসরায়েল ৪০)

কেয়ামতের দিন তাদেরকে এ বিষয়ে তাদেরকে শক্তভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে,

তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা –ফিরিশতাদের–কে নারী অভিহিত করেছে; এদের সৃষ্টি কি তারা প্রত্যক্ষ করেছিলো? তাদের উক্তি অবশ্যই লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।

তিনি আরো বলেন–

যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তারাই নারীবাচক নাম দিয়া থাকে ফিরিশতাদেরকে। (সূরা নাজম ২৭)

সুতরাং যে ব্যক্তি ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কণ্যা মনে করবে, সে নিশ্চিত কাফের হয়ে যাবে।

 

ফেরেশতাদের সংখ্যা

ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট এক অদৃশ্য জাতি, যার প্রকৃত সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত ৩১)

ফেরেশতাগণের সংখ্যা মানুষের ক্ষুদ্র মেধা দিয়ে কখনোই গণনা করা সম্ভব নয়। এজন্যই তাদের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জানান নাই। তবে কিছু হাদীস দ্বারা তাদের অবর্ণনীয় সংখ্যার কিছুটা অনুমান করা যায়। এজাতীয় দুটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা দেখি তোমরা তা দেখ না, আমি যা শুনি তোমরা তা শুনো না, আকাশ তো চরচর শব্দ করছে আর এই শব্দ করার সে যোগ্য। সেখানে চার আঙ্গুল জায়গাও এমন নেই যেখানে কোন ফিরিশতা কপাল রেখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করছে না। আল্লাহর কসম, আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে অবশ্যই তোমরা কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে। বিছানায় কোন নারীর আস্বাদ নিতে না। তোমরা অবশ্যই মাঠে ময়দানে চলে যেতে এবং আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করতে থাকতে। (ইবনু মাজাহ ৪১৯০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৩১২)

আকাশ কত বড়? এই প্রশ্নের উত্তর আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান বলতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত কোনদিন বলতেও পারবে না। সূর্য চন্দ্র ও যত তারা আমরা দেখতে পাই এগুলো সব প্রথম আসমানের নিচে। বিজ্ঞানের মতে সূর্য পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুন বড়। সূর্যের উপরে আরও হাজার হাজার কোটি কোটি তারা রয়েছে। তাহলে অনুমান করুন প্রথম আসমান কত বড়। দ্বিতীয় আসমান, তৃতীয় আসমান এভাবে সপ্তম আসমান কত বড় হবে। সেই আসমানসমূহের চার আঙ্গুল জায়গাও খালি নেই যেখানে কোন ফিরিশতা কপাল রেখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করছেনা। এর পরিসংখ্যা আমাদের কোন বিজ্ঞানী বা অত্যাধুনিক হিসাব যন্ত্রও করতে পারবে না।

অন্য একটি হাদীস পড়ুন–

মালিক ইবনু সা’সা’আ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মেরাজের রাতের বর্ণনায়) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
এরপর বায়তুল মা’মুরকে আমার সামনে প্রকাশ করা হল। আমি জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফিরিশতা সালাত নামাজ আদায় করেন। এরা এখান থেকে একবার বের হলে দ্বিতীয় বার ফিরে আসেন না। এটাই তাদের শেষ প্রবেশ। (বুখারী ৩২০৭)

মুসলিম শরিফ এর বর্ণনাটি এমন,

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন– তারপর আমাদের জন্য (সপ্তম আকাশের) দ্বার খুলে দেয়া হলো। সেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর সাক্ষাৎ পেলাম। তিনি বায়তুল মা’মুরে হেলান দিয়ে বসে আছেন। বায়তুল মামুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন, যারা আর সেখানে পুনরায় ফিরে আসার সুযোগ পান না। (মুসলিম ৩০৮)

পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কতদিন হবে? এটা মানুষের গণনার বাইরে। ঐদিন গুলোকে ৭০ হাজার দিয়ে গুণ করলে পরিসংখ্যান কি দাঁড়াবে তা মনুষ্য মস্তিষ্কের জন্য অনুমান করা দুষ্কর।

তবে উপরোক্ত দুটি হাদীস দ্বারা আমরা ফেরেশতাদের বিপুল সংখ্যক হওয়ার বিষয়টা অনুমান করতে পারি।

চলবে…

লেখক, মুফতি ও সিনিয়র শিক্ষক, আল জামি’আ দারুল উলুম মাদরাসা, হাড়িনাল, গাজীপুর।

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়ুন:

হযরত ঈসা আলাইহিস সালামঃ আমাদের নবী

সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা

মহাররম ও আশুরা সম্পর্কিত আয়াত এবং হাদিস

ঈদ ও কোরবানি; ইতিহাস ও শিক্ষা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *