সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তিন বৃহৎ প্রকল্পের উদ্বোধন

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে তিন বৃহৎ প্রকল্পের উদ্বোধন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশের তিন বৃহৎ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার রাজধানীর সেতু ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, মেট্রো রেল ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল এবং ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সেতুমন্ত্রী বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর পথচারী ও বাইসাইকেল চলবে না। আপাতত মোটরসাইকেলও চলাচল করবে না।’

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ অংশের সংযোগ ও ট্রাফিক ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এশিয়ান হাইওয়ে করিডোর এ উন্নত পর্যায়ের সেবা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এটি আঞ্চলিক সংযোগকে উন্নতকরণ ও যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যয় এবং যানবাহন পরিচালন খরচ হ্রাস করতে ২০১১ সালে নেয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার প্রকল্প নেয়া হয় ৩ ভাগে।

এর মধ্যে মূল উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় ৪ বার পিছিয়ে দেয়া হয় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা। এ সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। প্রথমে প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালে শেষ করার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ২০১৮ সালে করা হয়। পরে আবার ২০২২ সাল করা হয়। সর্বশেষ কাজ শেষ করার সময়সীমা পিছিয়ে ২০২৩ সালের ২০২৩ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়।

অন্যদিকে, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রো রেলের লাইন-৬-এর উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটারে উড়াল রেলপথের মধ্যে উত্তরার (দিয়াবাড়ী) অংশ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পর্যায়ক্রমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের সবকটি স্টেশন চালু হয়।

এর আগে গবেষণা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মেট্রোরেল নির্মাণে জাপানের সাথে ঋণচুক্তি করে সরকার। পরের বছর প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। রুট বাড়ানো ও ব্যয় বাড়ার আগে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেয়ায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়।

এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণ থেকে ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এখন নতুন করে যে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বাড়ছে, তার মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে আট হাজার ৪০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা ও জাইকার ঋণ থেকে ব্যয় হবে তিন হাজার ৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা। ১ জুলাই ২০১২ সাল থেকে ৩০ জুন ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের কাজের পরিধি বাড়ছে। সেজন্য পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আরো প্রায় এক বছর বেশি সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে মেট্রোরেল প্রকল্পটি শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর ছয় মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলের স্বপ্নের টানেলটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করবে, যা সরাসরি কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পের বিবরণে বলা হয়েছে, ১১ মিটার ব্যবধানে দুটি টিউব নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোডসহ ৭৪০ মিটার একটি সেতু মূল বন্দর নগরী এবং নদীর পশ্চিম প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে।

প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রধান বন্দরনগরী ও কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশকে নদীর পূর্ব দিকে এবং আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে মোট ৭৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। নদীর মাঝ পয়েন্টে এই গভীরতা প্রায় ১৫০ ফুট। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার। চট্টগ্রামে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নদীর তলদেশ হয়ে টানেলটি চলে গেছে আনোয়ারার চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থানে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।

এই টানেলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে যানবাহন চলবে। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। গত ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *