কাউসার মাহমুদের দু’টি কবিতা
১.
সে এক গভীর বিষণ্নতা আমার
সে এক গভীর বিষণ্নতা আমার, জন্মের মতো আপন
সমতল মরুভূমি জুড়ে আহরিত অস্থির অস্ফুটে
মৃগনাভ ধুয়ে মুছে কোথায় যে হারালো অপজাত-
আমি তার ঠিকানা জানি না।
যেন এক দূরূহ সকাল
খঞ্জরে বাঁধা কুসুমিত রোদ বেয়ে যায়।
ইহুদি বণিকের পাছে
সারে সারে বাঁধা কোন গণিকার দল!
এখানের কারো মুখ আমি চিনি
বর্ষার ভিজে যাওয়া কদম ফুলের মতো-
সহসাই নিস্তেজ গড়িয়ে পড়েছে আমার উপরে
আমি তারে দিয়েছি কামনার ‘সন্ধ্যা আরতি।’
সে এক গণিকা ছিলো, ভীষণ মদের মতো বৈভব তার
আমি তারে দিয়াছি সকাল, সমূহ আকাল।
তবুও সে কাঁদেনি, কোনদিন দুঃখ করেনি-
শুধু এক; জীবনের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিল,
‘আমাদের দুঃখ সমান প্রবাল।’
২.
পরাভূত বিষাদ
এই রাত- যার চার কোণাজুড়ে বিমর্ষ সংগীত বয়ে চলছে। নিয়ত প্রবাহমান জলের মতোই গম্ভীর ও সশব্দে ভরপুর এই দূরবর্তী রাতে; আমাদের জীবনকে মিথ্যে মনে হয়। গোধূলির দুঃখের মতো এমন নত, নির্যাতিত জীবনে কোথাও কোন জন্মের গন্ধ নেই৷ যেন সুদূর পরাহত সুখ-স্মৃতি বারবার আমাদের ধোঁকা দেয়। আর তমসার ভৌতিক জালে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে পড়ে আমাদের সমস্ত রাগ ও অনুরাগ।
আমাদের মনে হয় কোনদিন এই মাটি মুক্ত হবে না। তবুও বিক্ষুব্ধ জনজীবন কখনো গর্জে ওঠে। ইতিহাস বলে, ছোটছোট অগ্নিচূর্ণ ভোরের পা বেয়ে বিস্তৃত অগ্নিপাত ঘটিয়ে তোলে। যেখানে অসুর ও সমস্ত অপদেবতা পুড়ে যায়। ক্ষয় ও লীন তো মহাসত্যের মতোই ফুটে থাকবে সমস্ত সৃষ্টি ও জন্মের নাভিপাত্রে।
তখন রাক্ষস বিদায়ের পর বেঁচে থাকা সমস্ত নাগরিক শান্ত হবে। ভোরের স্নিগ্ধ গন্ধ মাড়িয়ে ছুটে যাবে সুধীর জোৎস্নার দিকে। আর সমুদ্রমন্থনে উৎপন্ন পারিজাত ছড়িয়ে পড়বে আমাদের এই মৃত মাটির উপরে।