সৌদি আরব আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো মিত্র

সৌদি আরব আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো মিত্র

সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক ঐতিহাসিক,৮০ বছরের পুরনো

মোহাম্মদ বিন সালমান আল-সৌদ। জন্ম ৩১ আগস্ট ১৯৮৫। সৌদি আরবের যুবরাজ, উপপ্রধানমন্ত্রী ও পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়সী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। সৌদির রাজদরবারের প্রধান এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। বাবা বাদশাহ সালমানের পরেই তার ক্ষমতা বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালের ২১ জুন মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ মনোনীত করা হয়। একই সঙ্গে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে নায়েফকে তার সব পদ থেকে অপসারণ করে তার সকল ক্ষমতা মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেয়া হয়। ভবিষ্যৎ সৌদি রাজা হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানের অভিষেক, ১৫০০০ প্রিন্সের দেশে নারীদের অধিকার নিয়ে নতুন আইন, সৌদিতে সংগীত ও সিনেমার প্রচলন, দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ রক্ষণশীল সৌদি সমাজ সংস্কারের নানা উদ্যোগ, ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ ও জামাল খাসোগজি হত্যাকান্ড- এগুলোর সাথে তার নাম জড়িয়ে যাওয়ার কারণে সারাবিশ্বে মোহাম্মদ ইতোমধ্যে হয়েছেন আলোচিত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার সমালোচিত। অনেকেই তাকে আধুনিক সৌদি রাজতন্ত্রের মুখ বলে মনে করেন। সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটিকে তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের করে আনতে ‘ভিশন: ২০৩০’ ঘোষণার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

এবিএস নিউজ ডটকম-এ মোহাম্মদ বিন সালমানের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। এই নবীন নেতা সাক্ষাৎকারটিতে নিজের কথা, দেশ কথা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে সৌদি আরবের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি আরবি-ইংরেজি দুই ভাষা কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ‘নোরা ওডনেল’। সাক্ষাৎকারটি পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন আদিল মাহমুদ। সাক্ষাৎকারটি পরিবেশন করা হলো।-

নোরা ওডনেল : বেশির ভাগ আমেরিকান সৌদি আরব বলতে উসামা বিন লাদেন ও নাইন-ইলেভেনের কথা বোঝেন। তারা মনে করে, আমেরিকার মাটিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ওসামা বিন লাদেন নিয়ে এসেছে।
মোহাম্মদ বিন সালমান : তাদের কথা সত্য। খুব স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে উসামা বিন লাদেন নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী আক্রমণের জন্য ১৫ জন সৌদিকে দলে নিয়েছিল। সিআইএ নথিপত্র আর কংগ্রেসের তদন্ত অনুযায়ী, উসামা বিন লাদেন চেয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে, সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বিভেদ তৈরি করতে।

নোরা ওডনেল : আপনার কি মনে হয়, কেন উসামা বিন লাদেন পশ্চিমা বিশ্ব ও সৌদি আরবের মাঝে বিভেদ তৈরি করতে চেয়েছিল?
মোহাম্মদ বিন সালমান : উসামা বিন লাদেনের মৌলবাদী ধারণার প্রচার-প্রসার ও মানুষকে তার দলে টানবার জন্য প্রয়োজন ছিল অনুকূল একটা পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সে তার এই ধারণা প্রচার করতে পারবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব তোমাদের ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। আর সে সফলই হয়েছে এই বিভেদ তৈরিতে।

নোরা ওডনেল : নতুন যুবরাজ মনোনীত হলেন। খুব কাজের চাপ বুঝি?
মোহাম্মদ বিন সালমান : জি, সারাক্ষণ।

নোরা ওডনেল : এখন পর্যন্ত আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি ছিল?
মোহাম্মদ বিন সালমান : অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার মতে প্রথম বড় চ্যালেঞ্জটা হলো, আমি যা করছি তাতে মানুষের আস্থা আনা। মানুষের কাছে বিশ্বস্ত হওয়া।

নোরা ওডনেল : সারাবিশ্বে প্রসিদ্ধ একটি প্রচলিত ধারণা আছে, সৌদি আরবে প্রচলিত ইসলাম অনেক কড়া, কঠোর, অনমনীয়। এই কথা কি সত্য?
মোহাম্মদ বিন সালমান : ১৯৭৯ সালের পর থেকে সত্য। কারণ আমরা পরিস্থিতির স্বীকার। বিশেষ করে আমার প্রজন্ম থেকে।

নোরা ওডনেল : সৌদি আরবে কি চলছে গত চল্লিশ বছর ধরে? এটা কি আসল সৌদি আরব?
মোহাম্মদ বিন সালমান : কখনোই না! এটা আসল সৌদি আরব না। আমি বলবো, স্মার্টফোনে একটা সার্চ করে জেনে নিতে। গুগল করলেই তারা দেখতে পাবেন ষাট আর সত্তরের দশকের সৌদি আরব কেমন ছিল। সেখানেই সহজ ও সুন্দর পাবেন সত্যিকারের সৌদি আরব ও ইসলাম।

নোরা ওডনেল : সৌদি আরব ১৯৭৯ সালের আগে কেমন ছিল?
মোহাম্মদ বিন সালমান : অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মতোই স্বাভাবিক জীবন ছিল সৌদি আরবের মানুষের। নারীরা গাড়ি চালাত, ছিল মুভি থিয়েটার। নারীরা সবখানে কাজ করত। ১৯৭৯ এর আগে স্বাভাবিক একটি দেশ ছিল সৌদি।

নোরা ওডনেল : নারীরা কি পুরুষের মত স্বাধীন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : জি, পুরোপুরি। আমরা সবাই মানুষ। আমাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

নোরা ওডনেল : আপনি বলেছেন যে আপনি সৌদি আরবকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আসল রূপে, আগের রূপে, মডারেট ইসলামে। এর মানে টা আসলে কি, একটু বুঝিয়ে বলবেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : আমাদের মাঝে কিচু চরমপন্থী আছেন, যারা নারী পুরুষের মেলামেশা নিষিদ্ধ করেন, এমনকি কর্মক্ষেত্রেও। তাদের পোষণ করা এরকম অনেক ধারণাই মুহাম্মদ সা. ও খলিফাদের যুগের সাথে মেলে না। অথচ সেটা হলো সত্যিকারের উদাহরণ, রোল মডেল। শরিয়া আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, নারীরা পুরুষদের মতোই স্বাধীন। তারা শালীন ও ভদ্র পোশাক পরিধান করবে। এর মানে এই না যে, নারীদের একটা কালো আবায়া আর মাথা ঢাকবার কালো কাপড় পরে থাকতে হবে। একটি মেয়ে কি রকম ভদ্র ও শালীন পোশাক পরবে সেটা সম্পূর্ণ তার সিদ্ধান্ত।

নোরা ওডনেল : আপনি তো এখন অনেক সুন্দরভাবে বিষয়টা উপস্থাপন করছেন। স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, সরকারের বিরোধিতা করায় ডজন ডজন লোককে আপনি জেলে ঢুকিয়েছেন গত বছর। এর মাঝে নারী, অর্থনীতিবিদ, আলেম ও বুদ্ধিজীবীরাও আছেন। এটা কি কোন মুক্ত সমাজ হলো?
মোহাম্মদ বিন সালমান : খবরের অনেক ভুল তথ্য প্রচার হয়। যাদেরকে আমি জেলে ঢুকিয়েছি তাদের সতিকারের তথ্য আমরা যতটা দ্রুত সম্ভব প্রচার করার চেষ্টা করবো, যেন বিশ্ব জানতে পারে সৌদি সরকার আসলে মৌলবাদ প্রতিহত করছে।

নোরা ওডনেল : সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আপনার অভিমত কি, একটু বলেন শুনি?
মোহাম্মদ বিন সালমান : সৌদি আরব মানবাধিকার নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু কথা হলো, আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড আর সৌদি স্ট্যান্ডার্ড যে এক না সেটা আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে। বলছি না যে আমাদের অপারগতা নেই একদমই। অবশ্যই আছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করতে।

নোরা ওডনেল : আচ্ছা, রিৎজ-কার্লটন হোটেলে কি হয়েছিল? আপনি তো রিৎজ-কার্লটনকে জেল বানিয়ে ফেলেছেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান : আমরা যেটা করেছি সেটা সৌদি আরবের জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। যা যা করা হয়েছে সবই দেশের আইন মেনে করা হয়েছে।

নোরা ওডনেল : এটা কি ক্ষমতা দখলের জন্য করেনি?
মোহাম্মদ বিন সালমান : আমার যদি ক্ষমতা থাকে বা রাজার যদি ক্ষমতা থাকে এরকম প্রভাবশালী মানুষদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবার, তাহলে আমরা ইতোমধ্যে ক্ষমতাশালী। তাই ক্ষমতায় আরোহণ দখলের জন্য এসব করা-এরকম অভিযোগ ভিত্তিহীন মনে করি।

নোরা ওডনেল : কিছু দিন আগে নিউ ইয়র্ক টাইস-এর খবর আসে, সম্প্রতি সৌদি প্রিন্স নিজে অর্ধ বিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি প্রমোদ তরী কিনেছেন। আর একটি ফ্রেঞ্চ অট্টালিকা। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
মোহাম্মদ বিন সালমান : দেখুন, ব্যক্তিগত জীবন আমি ব্যক্তিগতই রাখতে চাই, সেটার ব্যাপারে মিডিয়ার মনোযোগ আনার ইচ্ছা নেই। কোনো পত্রিকা সেটা নিয়ে রিপোর্ট করতে চাইলে, এটা তাদের ব্যাপার। আমার খরচের বিষয়ে বলতে গেলে, আমি ধনী মানুষ, দরিদ্র নই। আমি গান্ধী বা ম্যান্ডেলা নই। আমি এমন এক পরিবারের সদস্য, যাদের শত শত বছর ঐতিহ্য ছিল এবং আছি। এমনকি সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই। আমাদের অনেক জমি আছে। আমার ব্যক্তিগত জীবনে ১০ কি ২০ বছর আগে যেমনটা ছিল, তেমনই আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার সম্পদের একটা অংশ দান করি, ৫১% ব্যয় করি মানুষের জন্য, আর ৪৯% আমার নিজের জন্য।

নোরা ওডনেল : আপনার প্রতিবেশী ইয়েমেনের সাথে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি কেন হয়েছিল?
মোহাম্মদ বিন সালমান : ইয়েমেনের কিছু অংশে ইরানি আদর্শ ঢুকেছিল। তখন সেনাবাহিনী আমাদের সীমানার কাছে মিলিটারি কাজকর্ম চালাচ্ছিল, এমনকি আমাদের দিকে মিসাইল তাক করছিল। ইরানি মদদপুষ্ট বিদ্রোহীরা ইয়েমেন দেশটিকে ব্যবহার করেছে রিয়াদের দিকে মিসাইল ছুড়তে। আমি কল্পনাও করতে পারি না, একদিন মেক্সিকোতে মিলিশিয়া ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্ক আর লস এঞ্জেলেসের দিকে মিসাইল ছুড়ছে, অথচ মার্কিনিরা চুপচাপ বসে বসে দেখছে। এজন্যই মূলত এমনটা হয়েছে।

নোরা ওডনেল : আপনি কি মানেন যে একটা মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে ওখানে? প্রায় ৫০০০ মানুষ মারা গেছেন, শিশুরা না খেয়ে মরছে!
মোহাম্মদ বিন সালমান : সত্যি এটা খুব দুঃখজনক। আমি আশা করি, এই মানবিক দুরবস্থার জের ধরে মিলিশিয়া আন্তর্জাতিক মহল থেকে সহানুভূতি কোড়ানো বন্ধ করবে। তারাই সাহায্য ঢুকতে দিচ্ছে না, যেন দুর্ভিক্ষ ও মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়।

নোরা ওডনেল : আপনি ইয়েমেনের সাথে যা করছেন, তা কি ইরানের জন্য প্রক্সি যুদ্ধ? মানে একজনকে মেরে আরেকজনকে শাসন করার চেষ্টা?
মোহাম্মদ বিন সালমান : ইরান যা করছে তা খুবই ক্ষতিকর। ইরানি শাসনব্যবস্থার অধীনে অনেক আল কায়েদা অপারেটিভ লুকিয়ে আছে, ন্যায্য বিচারের অধীনে তাদের আনা যাচ্ছে না। ইরান তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সমর্পণ করছে না। এদের মধ্যে আছে আল কায়েদার নতুন নেতা, ওসামা বিন লাদেনের ছেলে। সে ইরানেই বাস করে, ইরান থেকেই কাজ চালায়। ইরান তাকে সমর্থন দিচ্ছে। ইরানকেই শাসন করা আমার উদ্দেশ্য।

নোরা ওডনেল : ইরান বনাম সৌদি আরবের শিয়া সুন্নি বিভেদের গোড়ায় কি আছে? এটা কি ইসলামের জন্য দ্বন্দ্ব?
মোহাম্মদ বিন সালমান : ইরান সৌদির শত্রু না। এমনকি ইরানের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের সেরা পাঁচেও নেই। ইরানি অর্থনীতির তুলনায় অনেক বড় সৌদি অর্থনীতি। সৌদির সমকক্ষ হতে অনেক দেরি ইরানের।

নোরা ওডনেল : আপনি ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনিকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘নতুন হিটলার’ ডেকেছেন। কিন্তু কেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : একদম ঠিক। কারণ তিনি চান রাজ্যবিস্তার। তিনি চান হিটলার ইউরোপে যেমন করছিল তেমন করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রজেক্ট বানাতে। বিশ্বের অনেক দেশ, এমনকি ইউরোপেও অনেকে বোঝেনি হিটলার কত ভয়ংকর, যতক্ষণ না ঘটনা ঘটেই গেল। আমি চাই না মধ্যপ্রাচ্যেও একই ব্যাপার ঘটুক।

নোরা ওডনেল : ইরানকে মোকাবেলা করবার জন্য সৌদি আরবের কি পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োজন আছে?
মোহাম্মদ বিন সালমান : সৌদি আরব কোনো পারমাণবিক বোমা চায় না। কিন্তু নিঃসন্দেহে যদি ইরান পারমাণবিক বোমা বানায়, তবে আমরাও শীঘ্রই একই কাজ করবো।

নোরা ওডনেল : সৌদি আরবকে বেছে নেয়া হয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য। আপনি তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। আর সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক তো ঐতিহাসিক, প্রায় ৮০ বছরের পুরনো। সত্যি বলতে, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো মিত্র।

নোরা ওডনেল : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কথা বলেছেন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে। তিনি জামাতা জ্যারেড কুশনারকে এ কাজে নিয়োগ করেছেন। তার সাথে আপনার দেখা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির বিষয়ে কি আপনারা কথা বলেছেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : হ্যাঁ ঠিক, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির বিষয়ক কথা বলেছি। জ্যারেড জ্যারেড কুশনার এ কাজে নিয়োগ পেয়েছেন। সৌদি হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আমাদের সকল মিত্র ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায়ে রাখা।

নোরা ওডনেল : আচ্ছা, তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার পক্ষে না বিপক্ষে কাজ করবে?
মোহাম্মদ বিন সালমান : আমি এমন কাজের উপর মনোযোগ দেই যাতে সবার শান্তি আসে। এমন কিছুর উপর মনোযোগ দেই না যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমি সবসময় পজিটিভ থাকতে পছন্দ করি, এটাই আমার স্বভাব। তাই আমি ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে যা যাবে তার পক্ষে এবং সকলের শান্তির পক্ষে।

নোরা ওডনেল : রিয়াদের ইরগাহ প্রাসাদের অফিসেই কি আপনি বেশির ভাগ রাত কাটান?
মোহাম্মদ বিন সালমান : বেশিরভাগ সময়ই। কাজপাগল মন্ত্রীদের সবাই অফিসেই রাত কাটাতো। আমি দুঃখিত, যদি অফিসটাকে বিশ্রী লাগে দেখতে।

নোরা ওডনেল : কি যে বলছেন, এটা মোটেও বিশ্রী না! আপনি এখানে সকাল কয়টার দিকে আসেন, কয়টা পর্যন্ত থাকেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : প্রায় দিন দুপুরের দিকে এসে শেষ রাত পর্যন্ত থাকি।

নোরা ওডনেল : আপনি কি সৌদি আরবের স্কুল ও শিক্ষাব্যবস্থা ঘাটিয়ে দেখছেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : জি, দেখেছি। মুসলিম ব্রাদারহুড কর্তৃক বড়ভাবেই প্রভাবান্বিত হচ্ছে সৌদি স্কুলগুলো। একটু সময় লাগবে তাদের তাড়াতে।

নোরা ওডনেল : তার মানে কি, আপনি বলছেন এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মৌলবাদ দূর করবেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : অবশ্যই। বিশ্বের কোনো দেশই চাইবে না, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কোন চরমপন্থি গ্রুপের দ্বারা প্রভাবিত থাকুক।

নোরা ওডনেল : এখানে এসে যত তরুণীর সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, সবাই স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে। তারা আমাকেও অ্যাড করতে চাচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিবর্তন করে দিচ্ছে এ সমাজটাকে।
মোহাম্মদ বিন সালমান : এ ব্যাপারে সফলতা আমি দাবি করতে পারি না। সৌদি নাগরিকেরা সবসময়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তির বিষয়ে এগিয়ে আছে।

নোরা ওডনেল : সৌদি আরবের কত % নারীরা কাজ করে?
মোহাম্মদ বিন সালমান : এখন ২২% নারী কাজ করে। সামনে আরো বাড়বে। শীঘ্রই নারী ও পুরুষের বেতনও সমান হবে।

নোরা ওডনেল : আপনি সমান বেতনের কথা বলছেন? সৌদিতে তো নারীরা ড্রাইভ পর্যন্ত করতে পারেন না! পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে নারীর অধিকার নেই গাড়ি চালাবার।
মোহাম্মদ বিন সালমান : এটা এখন আর ইস্যু না। কয়েক মাসের মাঝে নারীরা গাড়ি চালাবেন সৌদি আরবে। জায়গায় জায়গায় ড্রাইভিং স্কুল বানানো হচ্ছে, শীঘ্রই খুলে যাবে। আমরা এমন একটা দুঃখজনক পর্যায়কালের ইতি টানছি যার বিষয়ে সাফাই গাইবার মুখ আমাদের নেই।

নোরা ওডনেল : এটা একটি ভালো চিন্তা। কিন্তু আমরা জানি আপনাদের দেশে নারীদের বাইরে যেতে হলে একজন পুরুষ অভিভাবক লাগবে, এরকম আইনও তো আছে! এটা তো একটা পশ্চাৎপদতা।
মোহাম্মদ বিন সালমান : এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের নারীরা পূর্ণ অধিকার পায়নি। ইসলামে অনেক অধিকারের কথা আছে নারীদের, যেগুলো তাদের এখনও নেই। আমরা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি, আর এটুকু পথ বাকি আছে। তারপর সব দেখবেন।

নোরা ওডনেল : আপনি আপনার বাবার কাছ থেকে কি কি শিখেছেন?
মোহাম্মদ বিন সালমান : অনেক কিছু। তিনি ইতিহাস অনেক ভালোবাসেন, ইতিহাসের বই অনেক পড়েন। প্রতি সপ্তাহে তিনি আমাদের প্রত্যেককে একটা করে বই শেষ করতে দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদেরকে ডেকে প্রশ্ন ধরতেন সে বই থেকে। তিনি সবসময় বলেন, ‘তুমি যদি এক হাজার বছরের ইতিহাস পড়ে ফেলো, তবে তোমার ঝুলিতে থাকবে হাজার বছরের অভিজ্ঞতা।’

নোরা ওডনেল : আপনার বয়স মাত্র ৩২; আপনি তো চাইলে আরও ৫০ বছর দেশটা শাসন করতে পারেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান : একমাত্র আল্লাহ্‌ জানেন কে কত দিন বাঁচবে। কেউ ৫০ বছর বাঁচবে কি বাঁচবে না, যদি সব স্বাভাবিক থাকে তবে আপনি যা বললেন সেটাই প্রত্যাশিত।

নোরা ওডনেল : কোন বাঁধা কি আপনাকে থামাতে পারবে?
প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান : না, কেবল মৃত্যু ছাড়া।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *