ক্রীড়া ডেস্ক : সৌম্য সরকার এবং ইমরুল কায়েসের জোড়া সেঞ্চুরি আর রেকর্ড পার্টনারশিপে ভর করে জিম্বাবুয়েকে চতুর্থবারের মতো বাংলাওয়াশের স্বাদ দিল বাংলাদেশ। ২৮৭ রানের কঠিন টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭.৫ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলকে নিরাপদে রেখেই সৌম্য ১১৭ এবং ইমরুল ১১৫ রান করে আউট হন। মাশরাফি বাহিনী সিরিজ জিতে নিল ৩-০ ব্যবধানে।
আজ যেন প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন সৌম্য সরকার। সেই সঙ্গে ইমরুল কায়েসও। সৌম্যর প্রতিজ্ঞা ছিল নিজেকে নতুন করে চেনানোর আর ইমরুল পণ করেছিলেন এই সিরিজে যে অসাধারণ ব্যাটিং তিনি করছেন, সেটি চালিয়ে যাওয়ার। ২৮৭ রানের লক্ষ্যমাত্রার সামনে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে অসাধারণ কিছুরই প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা মিটিয়েছেন সৌম্য আর ইমরুল। দুজনই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২২০ রানের জুটি গড়ে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেটি পুরোপুরি হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছেন তাঁরা।
আগে ব্যাট করতে নেমে উইলিয়ামসের সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। অনেকেই ভাবছিলেন সাকিব-তামিম বিহীন দল এই বৈতরণী আদৌ কি পার হতে পারবে? প্রথম বলে ইনফর্ম লিটন দাস আউট হলে চিন্তা আরও বাড়ে। কিন্তু সব দুশ্চিন্তা একেকেটি বাউন্ডারির সঙ্গে সঙ্গে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন সৌম্য সরকার এবং ইমরুল কায়েস।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল ভয় জাগানিয়া। ইনফর্ম ওপেনার লিটন দাস জার্ভিসের করা ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। লিটনের বিদায়ের পর জিম্বাবুয়ে বোলারদের ওপর চড়াও হন সৌম্য সরকার এবং ইমরুল কায়েস। ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ১৫.২ ওভারেই দলের স্কোর ১০০ পার হয়। ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমরুল। ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন সৌম্যও।
এরপর যেন আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন দীর্ঘ ফর্মহীনতায় ভূগতে থাকা সৌম্য সরকার। উইকেটের চারদিকে শুরু হয় চোখ ধাঁধানো সব চার-ছক্কার মার। যেন সেই পুরনো ভয়ডরহীন ব্যাটিং। ৮১ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ৯২ বলে ৯ চার ৬ ছক্কায় ১১৭ রানে থামল সৌম্য ঝড়! ততক্ষণে সাকিব-তামিমের দ্বিতীয় উইকেট জুটির ২০৭ রানের রেকর্ড ভেঙে গেছে। সৌম্য-ইমরুল জুটি ভেঙেছে ২২০ রানে। আর ৫ রান করলেই দেশের হয়ে সাকিব-রিয়াদের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙে যেত।
সৌম্যর বিদায়ের পর আজ আর ভুল করলেন না ইমরুল কায়েস। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাজে শটে আউট হয়েছিলেন ৯০ রানে। আজ চলতি সিরিজে দ্বিতীয় এবং নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিলেন এই ওপেনার। সৌম্য ঝড় চলাকালীন একটু দেখেশুনে খেলছিলেন ইমরুল। তারপরেও তিন অংকে পা রাখলেন ৯৯ বলে ৯ চার ১ ছক্কায়। দল যখন জয় থেকে ১৩ রান দূরে, ১১২ বলে ১০ চার ২ ছক্কায় ১১৫ করা ইমরুল শিকার হলেন মাসাকাদজার।
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী হলেন মিঠুন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এই জুটিই ফিনিশিং টাচ দিয়ে দলকে জিতিয়েছিলেন। আজও একই কাজ সম্পন্ন করে মাঠ ছাড়লেন দুজন। ৭.৫ ওভার এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মুশফিক ২৮ এবং মিঠুন ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ে ২৮৬/৫ রান শুক্রবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে জিম্বাবুয়েকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ দল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৯ রান সংগ্রহ করেন শেন উইলিয়ামস। এছাড়া ৭৫ রান করেন ব্রান্ডন টেইলর।
সূচনালগ্নেই দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে সফরকারীদের চেপে ধরে বাংলাদেশ দল। সিফাস জুওয়াও ক্লিন বোল্ড করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আরেক ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ইনসাইড এজ করে প্যাভিলিয়নে পধ ধরান আবু হায়দার রনি।
৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তবে পরক্ষণে প্রতিপক্ষের ওপর সেই চাপটা ধরে রাখতে পারেননি টাইগার বোলাররা। তারা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও দারুণ খেলেন ব্রেন্ডন টেইলর ও শন উইলিয়ামস। তাদের সোজা ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামলে এগিয়ে যায় সফরকারীরা।
একপর্যায়ে রীতিমতো চোখ রাঙাতে থাকেন এ জুটি। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। হার মানেন টেইলর। নাজমুল ইসলাম অপুর বলে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৭২ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৫ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন এ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। এটি তার ক্যারিয়ারের ৩৬তম ফিফটি। এ নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি হাঁকান তিনি। টেইলরের বিদায়ে ভাঙে ১৩২ রানের জুটি।
পরে উইলিয়ামসকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন সিকান্দার রাজা। মূলত এতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দুজনের জোটে দুরন্ত গতিতে ছুটে তারা। কিন্তু হঠাৎই হার মানেন রাজা। নাজমুল ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৫১ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করেন এ অলরাউন্ডার।
রাজা ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান উইলিয়ামস। টাইগার বোলারদের শাসাতে থাকেন তিনি। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২য় সেঞ্চুরি। তার ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় রোডেশিয়ানরা।
শেষদিকে তাকে সঙ্গ দেন পিটার মুর। ক্রিজে এসেই ঝড় তোলেন তিনি। ২১ বলে ২ ছক্কায় ২৮ রানের ক্যামিও খেলে ফেরেন মুর। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ২৮৬ রান করে লালচাঁদ রাজপুতের দল। উইলিয়ামস ১২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৪৩ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় এ হার না মানা ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ব্যাটার।
অপর প্রান্তে ১ রানে অপরাজিত থাকেন এল্টন চিগুম্বুরা। বাংলাদেশের হয়ে নাজমুল ইসলাম ২টি এবং সাইফউদ্দিন ও আবু হায়দার নেন ১টি করে উইকেট। প্রথম দুই ওয়ানডেতে দাপুটে জয়ে ইতিমধ্যে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছেন টাইগাররা।