স্বঘোষিত যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই মধ্যরাতে ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার

স্বঘোষিত যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই মধ্যরাতে ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : স্বঘোষিত যুদ্ধবিরতি শেষ হতেই ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় রোববার (৮ জানুয়ারি) মধ্যরাতে এই হামলা শুরু করে রুশ সামরিক বাহিনী। স্বঘোষিত ক্রিসমাস এই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার হামলায় অন্তত একজন নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। অন্যদিকে বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মস্কো।

টানা প্রায় সাড়ে ১০ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ এই সময়ে ইউক্রেন কোনও যুদ্ধবিরতি দেখেনি, এমনকি বড়দিনের উৎসবের সময়েও না। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ আকস্মিক ভাবেই গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।

তিনি সেনাদের নির্দেশ দেন, তারা যেন ৬ ও ৭ জানুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকেন। মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেনে বসবাসরত অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যেন নির্বিঘ্নে বড়দিন পালন করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করতেই এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

তবে ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি ভ্লাদিমির পুতিনের এই সিদ্ধান্তকে কৌশলগত চক্রান্ত বলেও আখ্যায়িত করেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সম্মুখ সমরে গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল।

রয়টার্স বলছে, স্বঘোষিত যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর রাশিয়ার হামলায় খারকিভের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে ওই অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ সিনহুবভ টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে বলেছেন। হামলা ও প্রাণহানির খবরটি মস্কোতে মধ্যরাতের কয়েক মিনিট পরই সামনে আসে।

মূলত রোমান ক্যাথলিকদের শীর্ষ ধর্মগুরুর পদবি ‘পোপ’, আর রাশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অর্থোডক্সপন্থিদের শীর্ষ ধর্মগুরুর পদবি ‘প্যাট্রিয়ার্ক’। রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টপন্থিরা ২৫ ডিসেম্বর তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালন করলেও অর্থোডক্সপন্থিরা তাদের বড়দিন পালন করেন ৬ ও ৭ জানুয়ারি।

বর্তমানে অর্থডক্সপন্থিদের প্রধান ধর্মগুরু হলেন প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল অব মস্কো; একই সঙ্গে রাশিয়ার সব অর্থোডক্স গির্জার শীর্ষ নির্বাহীও তিনি। গত বৃহস্পতিবার এক লিখিত বার্তায় তিনি অর্থোডক্স বড়দিন উপলক্ষে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে ৬ ও ৭ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

প্যাট্রিয়ার্ক এই আহ্বান জানানোর পর অল্প সময়ের মধ্যে তাতে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ক্রেমলিন থেকে বলা হয়, রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধানের ক্রিসমাস যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন।

রয়টার্স বলছে, বেশিরভাগ ইউক্রেনীয় অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা ঐতিহ্যগতভাবে ৭ জানুয়ারি ক্রিসমাস উদযাপন করে থাকেন, যেমনটি করেন রাশিয়ার অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা। কিন্তু এই বছর, ইউক্রেনের বৃহত্তম অর্থোডক্স চার্চ ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উদযাপনের জন্য অনুমতি দিয়েছিল।

তবুও ইউক্রেনের অনেকে শনিবার ছুটির দিনটি পালন করেছেন এবং এ উপলক্ষে গির্জা ও ক্যাথেড্রালগুলোতে ভিড় করেন।

এদিকে ক্রেমলিন বলেছে, মস্কো ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ অব্যাহত রাখবে। এছাড়া রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা তাস পুতিনের ফার্স্ট ডেপুটি চিফ অব স্টাফ সের্গেই কিরিয়েনকোকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্ধারিত কাজগুলো এখন পূরণ করা হবে। এবং অবশ্যই বিজয় ছিনিয়ে আনা হবে।’

রয়টার্স বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর এখন ১১তম মাস চলছে এবং চলমান এই যুদ্ধের এখনও কোনও শেষ দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ এই যুদ্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া ইউক্রেনীয় শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বিস্তৃত ডনবাস অঞ্চলে বিস্ফোরণের কথা জানিয়েছেন। ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাভলো কিরিলেঙ্কো বলেছেন, সেখানকার ক্রামতোরস্ক শহরে সাতটিসহ রাতারাতি ওই অঞ্চলটিতে নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এসমব হামলায় হতাহতের কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়া জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের প্রশাসনিক কেন্দ্র জাপোরিঝিয়া শহরেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে একজন স্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন। সেখানেও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের কোনও তাৎক্ষণিক তথ্য সামনে আসেনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত বুধবার বলেন, রাশিয়া নতুন করে বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। এছাড়া মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন গত শুক্রবার বলেছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলের বিষয়ে পুতিনের লক্ষ্য পরিবর্তন হয়নি। যদিও রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনে ব্যর্থতার মাঝেই রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *