স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষায় জনসচেতনতাই রক্ষাকবচ
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : করোনাকালে দুনিয়াজুড়ে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন- জীবন নাকি জীবিকা। জীবিকার জন্য সারা দুনিয়াতেই মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে এসেছে। করোনা একই রকম প্রাণঘাতী থাকলে সেই ভয় আর নেই। কিন্তু বাংলাদেশে আতঙ্কের সঙ্গে করোনা সচেতনতাও গেছে। পাত্তাই পাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।
করোনা সংক্রমণের ভয় শেখা সামাজিক দূরত্ব আর নেই পথে, হাটে, ঘাটে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশের সেই হাঁকডাক, সরকারি তৎপরতাও নেই। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে কাঁচাবাজারের সঙ্গে মার্কেট কিংবা বিপণিবিতানের তফাৎ নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার মাস্ক থাকলেও তা নাকের ওপরে, কানে, থুতনিতে, পকেটে কিংবা হাতে ঝুলে। নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। গত জুনে মার্কেট খুলেছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে। তবে তা পালনে এখন ব্যবসায়ী সমিতিগুলো নীরব। ক্রেতা-বিক্রেতার শরীরের তাপমাত্রা মাপা ও জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে মৌচাক, নূরজাহানসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে। অবশ্য নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মো. ফারুকের দাবি, ক্রেতাদের অনুরোধ করলেও নিয়ম মানেন না বলেই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অকার্যকর।
রাজধানীর বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার চিত্র আরও খারাপ। গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের গাঙ্গিনাপারের বিপণিবিতানে দেখা যায় মাস্ক ব্যবহারকারী হাতেগোনা। ‘বারি প্লাজা’, ‘পালিকা’সহ বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনের জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা অচল। আগের দিন বুধবারও একই চিত্র দেখা গেছে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঘুরে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কভিড-১৯ মহামারী আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না শিগগিরই। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো কিছু সহজ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই করোনার সংক্রমণ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। তবু মানুষ এগুলো মানছে না। ১০ মে থেকে সারা দেশে সীমিত আকারে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউনমুক্ত পরিবেশে লোকজন সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে যথেচ্ছ চলাফেরা করার ফলে শীতের মধ্যে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
অফিস, হাসপাতাল থেকে বাস, ট্রেনসহ অন্যান্য গণপরিবহন, শপিং মল, কাঁচাবাজার সর্বত্র মাস্ক ব্যবহারের পরিমাণ কমে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি ও কভিড-১৯ নিয়ে সরকারের সব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হচ্ছে। ৮ মার্চ দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটির মাধ্যমে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তী সময়ে সরকার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করে দেয়। গণমাধ্যমে এ নিয়ে নিয়মিত প্রচার চালানোর পরও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মানুষ উদাসীন। ঢাকার বাইরে দেশের অন্য ছোট-বড় শহরগুলো থেকে শুরু করে গ্রামীণ হাটবাজার কোথাও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না। মাস্ক ব্যবহারে মোটেই উৎসাহ দেখাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। আর সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি শুধুই কাগজপত্রে। ইতিমধ্যে কভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে।
ইউরোপের কোনো কোনো দেশে ইতিমধ্যে জারি হয়েছে সতর্কতা। বাংলাদেশে এখনো প্রতিদিন গড়ে ২৫ জনের বেশি লোক কভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানলেই কভিডের আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সচেতনায় ফিরতে সবাইকে। সচেতন হলেই মানুষ বাঁচবে, বাঁচবে দেশ। সচেতনতা বাড়াতেই কড়াকড়ি আরোপ জরুরি বলেই আমরা মনে করি।