স্বেচ্ছায় ১শ বার রক্ত দিয়েছেন মাসুদ ইকবাল

স্বেচ্ছায় ১শ বার রক্ত দিয়েছেন মাসুদ ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক ● প্রমাণসহ ১০০ বারের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা হয়ে গেলেন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নিয়মিত রক্তদাতা ৪৮ বছর বয়স্ক মাসুদ ইকবাল। স্বেচ্ছায় রক্তদানে যুক্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়- মাসুদ ইকবালই বাংলাদেশে প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রমাণসহ ১০০ বারের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে ফরিদপুর শহরের সন্তান, অবিবাহিত মাসুদ ইকবালের ১০০ বার স্বেচ্ছায় রক্তদানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সোসাইটির রক্ত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. তারেক মেহেদী সোমবার বলেন, মাসুদ ইকবালের এই অর্জন নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত, আনন্দিত। আমরা চাই, তার মতন অন্যরাও রক্তদানে এগিয়ে আসুক। খুব দ্রুত মাসুদ ইকবালকে নিয়ে একটি জাঁকজমক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের চেয়াম্যান অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম বলেন, মাসুদ ইকবালের রক্তদান সম্পর্কে যেহেতু দৃশ্যমান প্রমাণ আছে, সেহেতু এটি মেনে নেয়া যায়। আমার জানা মতে- প্রমাণসহ বাংলাদেশে ১০০ বারের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা নেই।

সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির প্রাক্তন সভাপতি (দু’বার) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আসগড় মোড়ল জানান, তার জানা মতে- বাংলাদেশে প্রমাণসহ ১০০ বারের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা নেই।

গত বছরের অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখে তিনি রেডক্রিসেন্টে টানা ১০০ বার রক্তদান সমাপ্ত করেন। এরপর আর রক্ত দেননি। কর্মসূত্রে চট্টগ্রামে অবস্থানরত মাসুদ মোবাইল ফোনে সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, এখন আর রক্ত দেব না। ১০০ বার পূরণ করা আমার লক্ষ্য ছিল। এমনিতে শরীরে কোনো সমস্যা হয়নি।

মাসুদ ইকবালের হিসাবে তিনি রক্তদান করেছেন, ১০৪ বার। এর মধ্যে ১০০ বার রেডক্রিসেন্টে, দুইবার সন্ধানীতে এবং দুইবার পরিচিতজনদের ডাকে সাড়া দিয়ে দান করেন।

রক্তদানে অনুপ্রেরণার উৎস জানতে চাইলে মাসুদ ইকবাল ফিরে যান যুবক বয়সের স্মৃতিতে। তিনি বলেন, জীবনে প্রথম রক্ত দেবার পর সুঁচ ফোটানোর স্থানে তুলা জড়ানো অবস্থায় বাসায় আসি। বাবা দেখে জানাতে চান তুলা কেন। আমি নির্দ্বিধায় বলি রক্ত দানের কথা। বাবা ও মা কেউই আমাকে এ বিষয় নিয়ে আপত্তি তো করেইনি। বরং উৎসাহ যুগিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মরহুম মাহবুবুর রহমান ও ফারুক হোসেন দম্পত্তির মেজো সন্তান মাসুদ ইকবালের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর শহরে। ছোট থেকে বড় হয়েছেন ঢাকায়। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন।

প্রথম ১০-১২ বছর তিনি বছরে চারবার রক্ত দিতেন। পরে দেশে বছরে তিনবার রক্তদানের নিয়ম প্রবর্তন হওয়ায়- তিনিও বছরে তিনবার করে রক্ত দিতে শুরু করেন। কারও তাগিদ লাগে না, সময় হলে স্ব-ইচ্ছায় চলে যান রাজধানীর রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির রক্তদান কেন্দ্রে। কর্মসূত্রে তিনি চট্টগ্রামে থাকলেও রক্তদানের সময় হলে ছুটে আসেন ঢাকায়। তার ভাইবোনেরা থাকেন ঢাকার মোহাম্মদপুরে।

রেডক্রিসেন্টের ব্লাড ব্যাংকে কেন সবসময় রক্তদান করেন- প্রশ্নের জবাবে মাসুদ ইকবাল বলেন, এখানে রক্ত সংগ্রহের পদ্ধতি নিরাপদ। স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। বর্তমানে হাসপাতালগুলোর যা অবস্থা ওখানে রক্ত দিতে সাহস পাই না। তাছাড়া আমার রক্তদান শুরু এই রেডক্রিসেন্টে, তাই এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার ভালবাসা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *