সড়কে মৃত্যু : দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই
সড়ক যেনো মৃত্যুর ফাঁদ। এখনো কমছে না দুর্ঘটনা। প্রতিটি দুর্ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? বেপরোয়া চালকরাই এসব মৃত্যুর জন্য দায়ি। কোথাও কোথাও রাস্তার বেহাল দশাও অনেকটাই দায়ি। খানাখন্দের সড়কেও ঘটে দুর্ঘটনা। পথে পথে দখলদারদের দৌরাত্মের কারণেও ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বাংলাদেশে যেসব সড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অনেক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা-ও বলা যায়। লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। যেসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তারাও উদাসীন। ফলে এসব দুর্ঘটনাকে অনেকেই দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা-ই বলে থাকেন। সড়কের এই নিরাপত্তাহীনতা কি চলতেই থাকবে?
গত শুক্রবার পাবনার সাঁথিয়ায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে প্রাণ যায় বাবা-মেয়ের। একই দিনে বনভোজন শেষে পটুয়াখালীর দুমকিতে কুয়াকাটা থেকে ফেরার পথে নিহত হয়েছে এক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নাটোরের লালপুর, বরিশালের গৌরনদী, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এবং রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে আরো ছয়জন। ওদিকে সারা দেশে ৪২৭টি দুর্ঘটনার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জানুয়ারি মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ৯২ জন ও শিশু ৪৭ জন। এ ছাড়া ৬৭৩ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৪০২টি। এতে নিহত হয় ৪৬৪ জন এবং আহত হয় ৫১৩ জন।
আমরা কোনো মতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। প্রতিদিনের এই মৃত্যুও কাম্য নয়। এ জন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন হচ্ছে। দেশের সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্ঘটনার হার যেমন কমবে, তেমনি দেশে আহত ও পঙ্গু মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। সড়ক দুর্ঘটনার মতো অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে সবার আগে চাই সদিচ্ছা। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনা নামের হত্যাকা-রোধে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।