হাত ধরে এদেশের চলচ্চিত্র স্থান নেবে বিশ্বাঙ্গনে : তথ্যমন্ত্রী

হাত ধরে এদেশের চলচ্চিত্র স্থান নেবে বিশ্বাঙ্গনে : তথ্যমন্ত্রী

 

বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত এফডিসির

হাত ধরে এদেশের চলচ্চিত্র স্থান নেবে বিশ্বাঙ্গনে : তথ্যমন্ত্রী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি)  হাত ধরে এদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আবার শুধু তার স্বর্ণালী সময়ই ফিরে পাবে, তা নয়, বিশ্ববাজারেও সম্মানজনক স্থান করে নেবে।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী একথা বলেন। এর আগে তথ্যমন্ত্রী বিএফডিসি প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। কর্পোরেশন ও চলচ্চিত্র পরিবারের প্রতিনিধিবৃন্দও এসময় জাতির পিতাকে স্মরণ করে পুষ্পিত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ঢাকায় এফডিসি প্রতিষ্ঠাকে বঙ্গবন্ধুর অনন্য দূরদর্শিতার পরিচায়ক হিসেবে বর্ণনা করে মন্ত্রী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে সংসদে উত্থাপিত বিলের মাধ্যমে যে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন, তা বহু কালজয়ী সিনেমা ও গুণী শিল্পীর জন্ম দিয়েছে। এই সিনেমাগুলো আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতাপরবর্তী দেশ গড়তে ভূমিকা রেখেছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিকে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ শ্লোগান দিয়ে জাগিয়ে তুলে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন’।

ড. হাছান বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে তিনিই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেজন্যই তিনি জাতির পিতা এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, যিনি শুধু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই নয়, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এনে দিয়েছেন, তিনকোটি গৃহহারা মানুষকে পুণর্বাসন করেছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। যেসব আইনী কাঠামো গড়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা সমুদ্র ও স্থলসীমা জয় করেছি, তেল-গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিজেদের অধিকারে আনতে পেরেছি। মন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সকল সদস্য, শহীদ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন।

এর পরপরই বিএফডিসি চত্বরে চলচ্চিত্র পরিবার আয়োজিত শোক দিবসের সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের আওতায় আনার জন্য আজ দেশের সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিক সমাজ দাবি জানিয়েছে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি যে, শুধু এই হত্যাকান্ডের কুশীলবই নয়, যারা এর পটভূমি তৈরি করেছিলো, তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করে বিচারের জন্য এখনই একটি কমিশন গঠন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, এই হত্যাকান্ডের পর যারা এটিকে সমর্থন করেছিলো, দায় তাদেরও আছে।”

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৫৭ সালে আগে যখন এখানে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হতো না। তখন এখানকার চলচ্চিত্রের বাজারটি ভারতীয় বাংলা ছবি এবং পাকিস্তানি উর্দু ছবির দখলে ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তা করেছিলেন আমাদের দেশেও চলচ্চিত্র নিমার্ণ করতে হবে। জাতির জনকের এই সিদ্ধান্ত যে কতটা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল, কত যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল সেটি পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে শুধু একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তা নয়, দেশটিকে একটি শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করে গেছেন। যাদের বয়স এখন ৫০ বছর তারা জানেন স্বাধীনতার পর দেশের অবস্থা কেমন ছিল। ১৯৭১ সালে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। বাংলাদেশের ভিতরে দুই কোটি মানুষ গৃহহীন ছিলেন। হাজার হাজার লাখ লাখ বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের গ্রামে বা এলাকায় একদিনে ১ হাজার ২শত বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাই নয় ধানের গোলা থেকে শুরু করে সব কিছু জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে মানুষ অনাহারে মৃত্যু বরণ করেন। পুরো গ্রামের পর গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিল, নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছিলেন। এগুলো আমার চোখের দেখা। বঙ্গবন্ধু সারে তিন বছরের মধ্যে এই তিন কোটি মানুষকে পুর্নবাসন করেছিলেন। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে তিন কোটি মানুষকে পুর্নবাসন করা চারটিখানি কথা নয়। আজকের প্রেক্ষাপতেও যদি এক কোটি মানুষকে পুর্নবাসন করতে হয় তাহলে যে কোনো মানুষকে হিমশিম খেতে হবে। অথচ বঙ্গবন্ধু সেই পরিস্থিতিতে তিন কোটির বেশি মানুষকে পুর্নবাসন করেছিলেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু যখন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে সুখি সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতাকে হত্যা করার চেষ্টা চালানে হয়েছিল , কিন্তু তারা স্বাধীনতাকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ উল্টোপথে হাটতে শুরু করে। আবার বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দিকে দেশ পুনরায় এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এসব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্বের কারণে।

বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন অর রশীদ, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হোসনে আরা তালুকদার ও বিএফডিসির পরিচালক আইয়ুব আলী।

চলচ্চিত্র পরিবারের সভায় প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রতারকা রোজিনা, দিলারা, রিয়াজ, মৌসুমী, ওমর সানি, শাকিব, অনন্ত জলিল, অপু বিশ্বাস, নিপুণ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরসহ চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলীবৃন্দ সভায় যোগ দেন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *