হেফাজত কমিটিতে নেই ফরিদপুরের কেউ
আমিনুল ইসলাম কাসেমী : মুফতী আব্দুল কাদের রহ. বেঁচে থাকতে ফরিদপুরের আলেমদের মূল্যায়ন করা হত সবচেয়ে বেশী। ঢাকার ওলামায়ে কেরাম ফরিদপুরের আলেম সমাজকে ভিন্ন চোখে দেখতেন। মুফতী আমিনী রহ. এবং শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর সাথে ফরিদপুরের আলেমদের বেশী সখ্যতা ছিল।
মুফতী আমিনী রহ. এর ঘাঁটি ছিল ফরিদপুরে। যে কোন আন্দোলন- সংগ্রামে মুফতী আমিনী সাহেব চলে আসতেন। যত বড় কাজ থাকুক, তিনি ফরিদপুরের প্রোগ্রাম মিস করেননি কখনো।
এর কারণ হল, ফরিদপুরের শামসুল উলুম মাদ্রাসার মোহতামিম মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব রহ, তিনি গোটা দক্ষিণবঙ্গের আলেমদের ছারে তাজ ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের আলেমদের এক প্লাট- ফরমে রাখার কোশেশ করতেন সব সময়। ইসলাম ও নাস্তিক- মুরতাদ বিরোধী যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে মুফতী সাহেব সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সাথে ফরিদপুরের আলেমগণ শরীক হয়েছেন।
মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তাঁর সহকর্মি এবং হাজারো শাগরেদ এখনো রয়েছে। যারা যে কোন আন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে থাকেন। ঢাকা থেকে যখন যে কর্মসুচি দেওয়া হয়,ফরিদপুরের আলেম সমাজ বাস্তবায়ন করেন।
এখনো ঢাকার আলেমদের ফরিদপুরে আসা- যাওয়া হচ্ছে বারবার। মামুনুল হক সাহেব, জুনায়েদ হাবীব সাহেবদের এখন ঘাঁটি হয়েছে ফরিদপুরে। আল্লামা কাসেমী এবং বাবুনগরী সাহেবান ও ফরিদপুরে আসেন মাঝে – মধ্যে।
২০১৩ সনে হেফাজতের প্রোগ্রাম হয়েছিল ফরিদপুরে। দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় প্রোগ্রাম ছিল সেটা। মরহুম মাওলানা খলিললুর রহমান সাহেব, মুফতী আব্দুল কাদের সাহেব রহ, এর সহকর্মি মাওলানা আকরাম আলী সাহেব দামাতবারাকাতুহুম, মাওলানা জহুরুল হক সাহেব পুরুরার হুজুর দামাতবারাকাতুহুম, মুফতী মাহমুদ হাসান ফায়েক দামাতবারকাতুহুম এবং মুফতী ইসমাতুল্লাহ কাসেমী দামাতবারাকাতুহুম এরকম আলেমদের বড় অবদান ছিল সেই প্রোগ্রামে। তাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাদের কোরবানীর বদৌলতে বৃহত্তর ফরিদপুরে হেফাজতের কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে তাঁরা যথেষ্ট অবদান রেখেছে।
হেফাজতের আন্দোলন করতে গিয়ে ফরিদপুরে বহু ওলামায়ে কেরাম কারাবরণ করেছিলেন। মুফতী ইসমাতুল্লাহ কাসেমী পীর সাহেব নগরকান্দা, মাওলানা নিজাম উদ্দিন পুরুরা সহ অনেক আলেম জেলে ছিলেন। বহু আলেম হেনেস্তা হয়েছেন বারবার।
বড় দুঃখের সাথে বলছি, ফরিদপুরের আলেমদের এত্ত অবদান থাকতে তারা এবার হেফাজতের কমিটিতে উপেক্ষিত। বৃহত্তর ফরিদপুরের কোন আলেমের জায়গা হয়নি। অথচ দেশের অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে।অনেক সন্মানিত ওলামায়ে কেরাম এখনো জীবিত। তারা কেন এত অবহেলার পাত্র হল?
ফরিদপুরের বর্তমান মুরুব্বী বাহিরদিয়ার মাওলানা আকরাম আলী সাহেব , পুরুরার হুজুর জহুরুল হক সাহেব, মাওলানা হেলাল উদ্দিন সাহেব চরকমলাপুর, এছাড়া ফরিদপুর শহরের বড় প্রতিষ্ঠান শামসুল উলুম মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা কামরুজ্জামান সাহেব, ইসলামী শরীয়া রিসার্স সেন্টারের পরিচালক মুফতী মাহমুদ হাসান ফায়েক সাহেব, নগরকান্দার পীর ইসমাতুল্লাহ কাসেমী সাহেব প্রমুখ আলেম উলামা হেফাজতের কমিটি থেকে বঞ্চিত হলেন। এসকল আলেমদের অবদান ভোলার নয়।
এমনি ভাবে ফরিদপুরের আরো অনেক ব্যক্তিবর্গ এবং ওলামায়ে কেরাম হেফাজতের জন্য কাজ করেছেন। সংগ্রাম করেছেন, তাদের মুল্যায়ন করা হয়নি। আমরা এমন কিছু লোককে হেফাজতের কমিটিতে দেখছি, যারা বিগত হেফাজতের আন্দোলন – সংগ্রামে কোন ভুমিকা নেই। অথচ তাদের পদ-পদবী দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে।
বড় দৃঃখজনক, ত্যাগী নেতাদের মুল্যায়ন নেই।কিন্তু উড়ে এসে জুড়ে বসছে অনেকে। এভাবে যদি চলতে থাকে, ভবিষ্যতে হেফাজতকে অনেক চড়া মুল্য দিতে হবে।
এজন্য হেফাজতের মুরুব্বীদের প্রতি নিবেদন, ফরিদপুরের বিষয়টা খেয়াল রাখুন। ফরিদপুরের আলেমদের মধ্য থেকে কাউকে সংযুক্ত করুন। হেফাজত দক্ষিন অঞ্চলে মজবুত হোক সেই কামনা করি। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট