পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : লতিয়ে লতিয়ে মাটি থেকে মাচায় জড়ানো প্রতিটা গাছ। গাছের ডালগুলোতে ঝুলে আছে থোকায় থোকায় আঙুর। একেকটি গাছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কেজি আঙুর ধরেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা আনোয়ারপুর মহল্লার আমিরুল ইসলামের আঙুর বাগানে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
মাত্র এক বছর আগে আঙুর চাষ শুরু করেন আমিরুল ইসলাম। কৃষি নিয়ে ছিল তার নানামুখি চিন্তা-ভাবনা। অনেক আগে থেকেই তিনি ভাবতেন কৃষি নিয়ে কিছু একটা করার। তার মাথায় ঢোকে কীভাবে আঙুর ফল চাষ করা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি আঙুর চাষ সরেজমিন দেখার জন্য ভ্রমণ করেন ভারতে। ভারতের মুম্বাইয়ের নাসিক অঞ্চলের আঙুর বাগানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং দেখে আসেন তাদের চাষ প্রণালীও।
এরপর এক বছর আগে তিনি ভারত থেকে আঙুরের চারা কিনে নিয়ে এসে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর শুরু করেন আঙুর ফলের চাষ। সেই থেকেই তার শুরু।
আঙুর চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কৃষি ও মাটির সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। বছর খানেক আগে আমি আঙুর চাষে মনোযোগী হয়ে উঠি। ভারতে গিয়ে চাষ প্রণালী দেখে এসে দেশে শুরু করি আঙুরের চাষ। আঙুরের চারা রোপণের পর থেকেই নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলছি। প্রথম দিকে আঙুরের ফলন অল্প হয়। তবে আমি থেমে যাইনি। হতাশ না হয়ে পরিচর্যা বাড়িয়ে দেই। ফলে দেখা যায় এক বছর পর মাচায় বেড়ে ওঠা গাছগুলোর ডালে ডালে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে আঙুর। আঙুরের পরিপক্কতাও এসেছে, মিষ্টিও হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, একেকটি আঙুর গাছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি আঙুর পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
আঙুর চাষে খরচ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে আঙুর চাষ করতে চারা কেনা থেকে ফল ধরা পর্যন্ত ব্যয় আসতে পারে ৫০ হাজার টাকার মতো। ফলন ভালো হলে বছর শেষে প্রায় তিন থেকে চার লাখ টাকার আঙুর বিক্রি করা সম্ভব। দেশে আঙুরের চাহিদা মেটাতে এ ধরনের আবাদ ব্যাপক সহায়তা করবে তার বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দেশের মাটিতে বিদেশি ফলের আবাদ এবং থোকায় থোকায় আঙুর ধরে থাকার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিনই মানুষজন নিজ চোখে দেখার জন্য বাগানে আসছেন।
বাগান দেখতে আসা মঈনুল ইসলাম জানান, তার বাড়ি পাশের উপজেলার আকন্দবাড়িয়া গ্রামে। তিনি দর্শনাতে আঙুর ফলের চাষ হচ্ছে শুনে নিজ চোখে দেখতে এসেছেন। দেশি আঙুর দেখে বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। দেশের মাটিতে মিষ্টি আঙুর হচ্ছে দেখে অবাক হয়েছেন তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমিরুল ইসলাম অনেক পরিশ্রম করে আঙুর ফল চাষ করছেন। তার বাণিজ্যিকভাবে অঙুর চাষে সার্বিক সহযোগিতা করবে কৃষি অফিস। এছাড়াও নতুন কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য বলবো, কেউ যদি এ ধরনের চাষ করতে চান তাহলে কৃষি অফিস নানা ধরনের পরামর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে।’
/এএ