১৪ মে সাহরি ০৩.৪৮, ইফতার ০৬.৩৭

১৪ মে সাহরি ০৩.৪৮, ইফতার ০৬.৩৭

১৪ মে সাহরি ০৩.৪৮, ইফতার ০৬.৩৭

ভালোবাসতে উৎসাহিত করে রমজান

মাওলানা মাসউদুল কাদির :: সিয়াম সাধনা অনন্য এক ইবাদত। যা অন্যকে ভালোবাসতে শেখায়। উপবাসের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক কী? স্বাভাবিক উপবাসের সঙ্গে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে যে উপবাস তা কাউকে কাউকে খুশি করার জন্য, কোনো কিছু অর্জনের জন্য সেটা করা হয়। এতে প্রেম ও ভালোবাসার একটা বিষয় নিহিত আছে। রোজার মূল উদ্দেশ্যই হলো মহান আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা, তাকে সন্তুষ্ট করা।

পুরো রোজার উপবাসজুড়েই বান্দার সঙ্গে আল্লাহর এবং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার একটা ভালোবাসার আদান-প্রদান হয়। একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আল্লাহ দেখেন, দেখতে থাকেন, বান্দা নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে বান্দা কিছু মুখে নেয় না। হৃদয়ের দরজায় বার বার আল্লাহর ভালোবাসার শব্দাবলি কড়া নাড়ে। ক্ষুধা, পিপাসা সবকিছু বরণ করে নেয়। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নয় বরং রিপুর তাড়নাকে দমন করে আল্লাহর প্রতি নিজের প্রেমের পরিচয় প্রকাশ পায়। আল্লাহ দেখেন এবং ভালোবাসার টানে বান্দাকে আরো কাছে টেনে নেন।

সিয়াম সাধনা প্রকৃত অর্থেই একটি ভালোবাসা জাগানিয়া গল্পের নাম। আল্লাহর জন্য এই ভালোবাসায় বান্দার ঈমান পরিপূর্ণ হয়। পরিপক্বতা পায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্য বারণ করে, আল্লাহর জন্য মহব্বত করে, আল্লাহর জন্য দুশমনি করে, আল্লাহর জন্য বিবাহ-শাদি দেয়, তার ঈমান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। জামে তিরমিজি।

একজন মুত্তাকি-পরহেজগার, আল্লাহভীরু বান্দা যেমন ইহজগতে অন্যের প্রকৃত বন্ধু হন, পরোপকারী হন, কিয়ামতের দিবসেও সে বন্ধুই থাকবে। শত্রু হবে না। মহান আল্লাহতায়ালাও এ বিষয়টি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদে বলেছেন, সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকিরা ছাড়া। সুরা যুখরুফ : আয়াত ৬৭

রমজানে আমরা কেন রোজা রাখি? রোজায় কী উপলব্ধি হয় আমাদের? আমরা নির্ধারিত সময়ে কিন্তু খাই না। পানাহার ও স্ত্রী সহবাস আর অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকি। এর কারণ কী? যে ভাই ক্ষুধায় কাটায় দিন, নিজে ক্ষুধার্ত না হয়ে তা তো বুঝে আসবার কথা নয়। রোজায় আমরা হতদরিদ্র মানুষের সেই ক্ষুধায় কাতর উপলব্ধি লাভ করতে পারি। গরিবের প্রতি দয়াশীল হতে পারি। এটাই তো বুখারি শরিফেও বিবৃত হয়েছে সুন্দরভাবে।

হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ো না, পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদন করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। আর কোনো মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা ত্যাগ করে। সহিহ বোখারি। তিনি বলেছেন, রোজা হলো সহমর্মিতার মাস।

সিয়াম সাধনায় সত্যিই এক আল্লাহর বান্দা আরেকজনের প্রতি সহমর্মী হয়ে ওঠে। দয়াপ্রবণতা জাগ্রত হয়। অন্যকে ভালোবাসতে শেখায়। আল্লাহতায়ালা আমাদের সিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে অন্যের প্রতি স্নেহপরায়ণ ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক ও গল্পকার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *