৩০ বছর ধরে অনাবাদি কাজুলিয়া বিলের হাজার একর জমি

৩০ বছর ধরে অনাবাদি কাজুলিয়া বিলের হাজার একর জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থায়ীভাবে পানি আটকে থাকায় দীর্ঘ ৩০বছর অনাবাদি রয়েছে গোপালগঞ্জের কাজুলিয়া বিলের হাজার একর জমি। জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে এসব জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না এলাকার কৃষকেরা। অথচ একসময় এই বিলের ধানে গোলা ভরে যেতো এলাকার কৃষকের। বিলের পানি নিষ্কাশন করে এসব জমিতে আবারও সোনালি ধান ফলানো সম্ভব বলে মনে করেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া বিলের ভূমি মালিকদের দুঃখ শুরু হয়। বিলের হাজার হাজার একর জমি থেকে বর্ষার পানি না সরে স্থায়ীভাবে আটকে যায়। অথচ এক সময় এ বিলের জমি থেকেই এলাকার মানুষের সারা বছরের ধান আসতো। যাদের জমি নাই, তারা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবনযাপন করতেন। ফসল কাটার সময় এ অঞ্চলের মানুষের মুখে থাকতো হাসি। কিন্তু সেদিন ফুরিয়েছে। হাজার একর জমি পানির নিচে রেখে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হয় নিম্নবিত্তের মানুষকে। চাষের অযোগ্য হয়ে আছে কাজুলিয়া বিলের বিস্তর জমি, শীতকালেও শুকায়নি পুরোপুরি। এ ব্যাপারে কাজুলিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম আবুল কালাম আজাদ, একই গ্রামের বাসিন্দা আতিয়ার রহমান দাড়িয়া ও সমর চন্দ্র বিশ্বাস জানান-‘কাজুলিয়া বিলের মধ্যে রয়েছে ৫-৬টি বড় আকারের খাল। যেসব খালের মাধ্যমে পুরো বিলের পানি ‘গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া’ নামক আরেকটি বড় খালে পড়ার কথা। আর তাতে কাজুলিয়া বিলটি শুকিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিলের ভেতরের খালের গভীরতা বেশি হওয়ায়, আর গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালের তলদেশ উঁচু হওয়ায় বিলের পানি আর নামতে পারে না। ফলে বিলের জলবদ্ধতাও কমে না। ফসল না ফলাতে ফলাতে সেখানে এক ধরনের ঘাস এমনভাবে জন্মেছে যে, তা পরিষ্কার করাও কষ্টকর। কাজুলিয়া বিলের জমি মালিকদের দুঃখের বিলে পরিণত হয়েছে এখন এটি। এলাকাবাসীর ধারণা, এই বিলের মধ্য দিয়ে যেসব খাল গিয়ে গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া খালে গিয়ে পড়েছে, সেগুলো সুষ্ঠুভাবে খননের মাধমে কাজুলিয়া বিলের স্থায়ী জলাবদ্ধাতা দূর করা সম্ভব।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাখন লাল দাস জানান, কাজুলিয়া বিলের মধ্যে যেসব খাল রয়েছে তা সংস্কার এবং ‘গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া’ খালটি পুনরায় খনন করলে বিলের জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব। এজন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে। হাজার হাজার একর জমি পানির নিচে পড়ে আছে। এসব জমিতে এক সিজনও যদি ধান ফলানো যায়, তাহলেও এলাকার মানুষরা অনেক উপকৃত হবে। ১৯৮৮ সালের বন্যার আগে এখানে অন্তত এক সিজন ধান ফলানো হতো, কিন্তু তারপর থেকে পানি জমে থাকায় আর সম্ভব হচ্ছে না।’

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, কাজুলিয়া বিলের জলাবদ্ধতার কারণে এখানে বিস্তর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। বিলের খাল সংস্কারসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা গেলে এ বিল থেকে প্রচুর ধান উৎপাদন করা সম্ভব। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফি উদ্দিন জানান, আগামী বছর খাল সংস্কারের জন্য বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *