৩২ নম্বরে মানুষের ঢল

৩২ নম্বরে মানুষের ঢল

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুসহ শহীদদের স্মরণ

৩২ নম্বরে মানুষের ঢল

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ, ধানমন্ডি ৩২ থেকে ২৭ নম্বর— সবখানেই হাজার হাজার মানুষের ঢল। করোনা উপেক্ষা করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এসেছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। এ সময় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত ভবনের ভেতর-বাহির ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড়ও বেড়ে চলেছে। পরনে শোকাবহ পোশাক আর বুকে কালো ব্যাজ নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত ভবনে গেছেন নারী-পুরুষ, শিশু কিশোর। হাতে ফুল ও কালো পতাকা। কারও কারও হাতে ছিল পুষ্পস্তবক।

শনিবার জাতীয় শোক ও বঙ্গবন্ধুর ৪৫ তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষ বিনম্র চিত্তে জাতির পিতাকে স্মরণ করে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। এরপর সর্বস্তরের মানুষের জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বর চত্ত্বর উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। শুরু হয় সর্বস্তরের নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের ঢল। করোনায় সীমিত পরিসরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আহ্বান জানানো হলেও তা উপেক্ষিত ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি সাধারণ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

শনিবার সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এরপর একের পর এক শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এবং ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, আইনজীবী সমিতি, জয়বাংলা, সাংস্কৃতিক ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, বাংলাদেশ বেতার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক-প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। একইসঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মানুষেও ফুল দিয়ে মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।  .এ সময় বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অনেককেই শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরতে, হাতে কালো পতাকা এবং বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করতে দেখা যায়।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও বিভিন্ন সংগঠন এবং সাধারণ মানুষকে মহান নেতাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ সময় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, পলাতক খুনিদের ফাঁসি চাই, ’সহ বঙ্গবন্ধুর নামে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এমনটাই চাওয়া জাতীয় শোকদিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষদের।

কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব খান বলেন, যিনি জন্ম না নিলে হয়তো বাঙালী, বাংলার অস্তিত্বই থাকতো না। আজ সেই শ্রেষ্ঠ মানুষের শাহাদাতবার্ষিকী। প্রিয় নেতা, যার আদর্শে ছাত্র রাজনীতি করি সেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দেখে আমি নিজেও অভিভূত। ভেবেছিলাম করোনার কারণে হয়তো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তেমন আসবে না। কিন্তু সত্যি কথা হলো, করোনা কিংবা কোন দুর্যোগ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাধা হতে পারবে না। এটাই প্রমাণিত হলো।

একই কথা বললেন হাজারীবাগ থেকে আসা আওয়ামী লীগের কর্মী তৌফিক এলাহি। তিনি বলেন, শুধু করোনা নয়, কোনো দুর্যোগই প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বাধা হতে পারবে না। যার জন্য রাজনীতি করি, যার আদর্শের রাজনীতি করি সেই প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আসবো। এতে আরও বেশি তৃপ্ত হই।

ঝিগাতলা মনেশ্বর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাইসা জামান তার বাবা সিদ্দিক জামানের সঙ্গে ৩২ নম্বরে আসেন বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে। রাইসার বাবা বলেন, সে এখনও ছোট। কিন্তু গতকয়েক বছর তাকে নিয়েই আসি। যদিও এবার করোনার কারণে আসবো কি না দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু মেয়ে নিজেই তাগাদা দিচ্ছিলো। সে ফুল কিনে প্রস্তুত ছিল। তাই আর বাসায় বসে থাকতে পারিনি। চলে আসলাম বাঙালীর কিংবদন্তি নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *