পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিদায়ী আগস্টে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০৩টি। এতে ৩৭৮ জন নিহত এবং ৭৯৪ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৪ জন নারী, ৫১ জন শিশু।
গত মাসে ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, অর্থাৎ ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের আগস্ট মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত মাসে ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ৯ জন আহত এবং ছয় জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছে।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৪৬ জন (৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ), বাস যাত্রী ১৮ জন (৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-লরি আরোহী ১৭ জন (৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশভ্যান আরোহী ২১ জন (৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-লেগুনা) ৫৬ জন (১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু) ১৩ জন (৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৪ জন (৩ দশমিক ৭০ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৯টি (৪১ দশমিক ৯৩ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি (৩৬ দশমিক ৭২ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৫টি (১১ দশমিক ১৬ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৩৭টি (৯ দশমিক ১৮ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে চারটি (শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর ৬৮টি (১৬ দশমিক ৮৭ শাতংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮২টি (৪৫ দশমিক ১৬ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৪টি (২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪২টি (১০ দশমিক ৪২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৭টি (৪ দশমিক ২১ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-হ্যান্ডট্রলি তেলবাহী ট্যাঙ্কার-চল্লিশ টনের লং ভেহিক্যাল-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো-পুলিশভ্যান ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক ০২ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-মিশুক লেগুনা) ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু-লাটাহাম্বা) ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৪৭টি। (বাস ১১৪, ট্রাক ৯৪টি, কাভার্ডভ্যান ২২টি, পিকআপ ১৫টি, ট্রাক্টর তিনটি, ট্রলি সাতটি, লরি আটটি, হ্যান্ডট্রলি একটি, ড্রাম ট্রাক পাঁচটি, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ছয়টি, চল্লিশ টনের লং ভেহিক্যাল একটি, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক একটি, মাইক্রোবাস ১৪টি, প্রাইভেটকার ১২টি, অ্যাম্বুলেন্স সাতটি, পাজেরো দুইটি, পুলিশভ্যান একটি, মোটরসাইকেল ১৪৯টি, থ্রি-হুইলার ১০৭টি (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-মিশুক-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩২টি (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-ডাইসু-লাটাহাম্বা), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২৪টি এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২২টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, সকালে ২৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, দুপুরে ২৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বিকালে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং রাতে ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, প্রাণহানি ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রাণহানি ১০ দশমিক ৩১ শাতংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ০২ শতাংশ ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৪৩টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ জেলায় ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও মৌলভীবাজারে। এই পাঁচটি জেলায় ৯টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকায় ২৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৩২ জন আহত হয়েছেন।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে সাবেক এমপি একজন, পুলিশ সদস্য পাঁচ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক সাত জন, চিকিৎসক চার জন, নার্স একজন, সাংবাদিক চার জন, প্রকৌশলী দুই জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী চার জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, পরিসংখ্যান অফিসার একজন, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা একজন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৮ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৩ জন, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১১ জন, পোশাক শ্রমিক আট জন, রঙমিস্ত্রি একজন, পাটকল শ্রমিক একজন, মানসিক প্রতিবন্ধী দুই জন এবং দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।