১০ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ২০শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে গত ৫০ বছরে ১১,৭৭৮টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। এসব দুর্যোগে দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২২ মে) সংস্থাটির প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চরম আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সংক্রান্ত ঘটনার কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে এশিয়ায়।
ডব্লিউএমও বলেছে, জলবায়ু বিপর্যয় এবং চরম আবহাওয়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার ৬০% আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।
ডব্লিউএমও’র প্রতিবেদনে জানা যায়, আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সম্পর্কিত সমস্যার কারণে ১৯৭০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার দুর্যোগ ঘটেছে। স্বল্পোন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো তাদের অর্থনীতির আকারের তুলনায় “অনুপাতিকভাবে” উচ্চ ব্যয়ের শিকার হয়েছে।
ডব্লিউএমও-এর মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা মানুষগুলো আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সম্পর্কিত বিপর্যয়ের প্রভাব সহ্য করছে।”
ডব্লিউএমও বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে গত অর্ধ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি বিপর্যয়ের কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০% পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটিতে দুর্যোগের প্রভাব ছিল জিডিপির “৫%-এর বেশি”, কিছু বিপর্যয় দেশগুলোর পুরো জিডিপিকেই শেষ করে দিয়েছে।”
তারা আরও জানায়, আফ্রিকায় জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে মৃত্যু হওয়া সাত লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৫ জনের মধ্যে ৯৫% খরা’র কারণে মারা গেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে রেকর্ড করা মৃত্যু আগের দশকের গড় থেকে কম ছিল।
গত সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার উদাহরণ দিয়ে তালাস বলেন, “অতীতে এই ধরনের দুর্যোগে উভয় দেশেই মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজার থেকে কয়েক লাখ হয়েছিল।”
সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, দুর্যোগের কথা মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে পাওয়া গেলে, দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি ৩০% কম হতে পারে।
জাতিসংঘের প্রাথমিক সতর্কতা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডব্লিউএমও তার চতুর্বার্ষিক ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল কংগ্রেসের জন্য আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ের মানবিক ও অর্থনৈতিক ব্যয়ের ওপর তার নতুন অনুসন্ধানের ফলাফল উপস্থাপন করেছে, যা সোমবার জেনেভায় শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ পৃথিবীর সকলের কাছে দুর্যোগের আগাম সতর্কতা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করা।
২০২২ সালের নভেম্বরে শারম আল-শেখ-এ কপ২৭ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এটি শুরু করেছিলেন। বর্তমানে, পৃথিবীর মাত্র অর্ধেকই দুর্যোগ পূর্ববর্তী পূর্বাভাস ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে, এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।