৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২১শে মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১২ই রজব, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো ৫-১১ বছরের শিশুদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে আজ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজধানীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬ শিশুকে এই টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দুপুর সাড়ে ১২টায় শিশুদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
পরীক্ষামূলকভাবে টিকা পাওয়া এসব শিশুকে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এ সময় শিশুদের শারীরিক অবস্থা কেমন হয় ও কোনো ধরনের পার্শপ্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা দেখা হবে। পরে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৫ আগস্ট থেকে সারা দেশে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান গতকাল বুধবার বলেন, রাজধানীর ১৬ শিশুশিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে করোনার টিকা দেওয়া হবে। পরে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে। টিকার জন্য বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে টিকার তারিখ ও কেন্দ্র নির্ধারণ করবে। সবকিছু হবে সমন্বয় করে।
এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশেও টিকাদানের নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। এর আগে সরকার গত বছরের ১৪ অক্টোবর থেকে ১২-১৭ বছর বয়সী শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টিকা দেওয়া শুরু করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বয়সী ১ কোটি ৭৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪১ জন টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬১ লাখ ৪ হাজার ৯৪৭ জন। এই বয়সীদের বুস্টার ডোজ এখনো শুরু হয়নি।
প্রথম দিন ১৬ শিক্ষার্থী: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রথম দিন পরীক্ষামূলকভাবে মোহাম্মদপুরের আবুল বাশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৬ শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আটজন ছাত্র ও আটজন ছাত্রীর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণির ১ জন, তৃতীয় শ্রেণির ৭ জন, চতুর্থ শ্রেণির ৬ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ১ শিক্ষার্থী। টিকার জন্য এদের সবার অনলাইন জন্মসনদ নম্বর, জন্ম তারিখ এবং অভিভাবকের নাম ও টেলিফোন নম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও টিকাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ২০ লাখ শিশু: কভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দিন টিকা দেওয়ার পর এসব শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে আগামী ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে পুরোদমে শুরু হবে।
এই কর্মকর্তা জানান, প্রথম দফায় ঢাকাসহ সারা দেশের সকল সিটি করপোরেশন এলাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়া হবে। ২ কোটি ২০ লাখের মতো শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। টিকাদানের জন্য নির্দিষ্ট টিম নির্ধারণ করা হয়েছে। টিকাকেন্দ্র নির্ধারণ করবে সিটি করপোরেশন কর্র্তৃপক্ষ। প্রাথমিকভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীরাই পাবে এবং তাদের অবশ্যই জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে।
দেওয়া হবে ফাইজারের বিশেষ টিকা: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ৫-১১ বছরের শিশুদের বিশেষভাবে তৈরি ফাইজার টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ পাবে। শিশুদের টিকার পরিমাণও কম হবে। বিশেষ সিরিঞ্জে টিকা দেওয়া হবে। প্রত্যেক ডোজে পয়েন্ট ২ এমএল পরিমাণ টিকা পাবে শিশুরা। ইতিমধ্যেই বিশেষভাবে তৈরি ৩০ লাখ ফাইজার টিকা ও বিশেষ সিরিঞ্জ দেশে এসেছে। এই টিকা দিয়ে ১৫ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া যাবে। এর মধ্যে আরও টিকা দেশে চলে আসবে।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ফাইজার টিকা সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। এগুলো রাখতে হয় মাইনাস ৭০-৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। টিকার মিশ্রণ করতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ লাগে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সঙ্গে টিকা দেওয়া হবে, যাতে কোনোরকম ব্যত্যয় না হয়। ছোটদের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নেওয়া হবে না। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই টিকা দেওয়া হবে। সে কারণে প্রথমে সিটি করপোরেশন এলাকার বাচ্চাদের টিকা দেওয়া হবে। কমিউনিটি লেভেলে ও যেসব স্কুল বেশি দূরে, যেখানে এসি রুম ব্যবস্থা করা যাবে না, সেসব জায়গায় পরে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
লাগবে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টিকা দেওয়া হবে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের মাধ্যমে। সেজন্য যেসব শিশুর জন্মসনদ নেই, অভিভাবকরা যেন তাদের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করে ফেলেন। টিকা যখন দেওয়া শুরু হবে, তখন যেন জন্মসনদ দিয়ে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারেন। যত বেশি সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে টিকা দেওয়া যাবে, তত বেশি সুশৃঙ্খল হবে এবং তখন সবাই সনদ পাবে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করা না থাকলে টিকা সনদ পাওয়া নিয়ে জটিলতা হয়।
দেড় বছরে সম্পূর্ণ টিকা জনসংখ্যার ৭১% : বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা শুরুর প্রায় ১ বছর পর ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি পরীক্ষামূলকভাবে ও পরে ৭ আগস্ট সারা দেশে করোনার টিকার গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টিকাদান কর্মসূচি শুরুর দেড় বছরে গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৭১ শতাংশকে দুই ডোজ বা সম্পূর্ণ টিকা দিতে পেরেছে সরকার। এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন মোট জনসংখ্যার ৭৬ শতাংশ এবং তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ।