৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা

৯ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : নৌ-পরবহন মন্ত্রী এম শাহজাহান খানের পদত্যাগ দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে রাস্তা অবোরোধ করে ভিক্ষোভে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীতে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় টানা তৃতীয় দিনের মত  মঙ্গলবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বেপরোয়া চালকের সার্বোচ্চ শাস্তিসহ নয় দফা দাবিতে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আহসান খান বলেন, ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে জড়ো হয়ে এই বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে।

মিরপুরের সনি সিনেমা হলের সামনেও বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন মিরপুর কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে মিরপুর ১ থেকে ১০ নম্বর সেকশনের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে ট্রাফিক পুলিশের পশ্চিম বিভাগের সহকারী কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান। এর আগে তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেইটের বাবুল টাওয়ারের সামনে অবস্থান নিলে সকাল ১০টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ওই সময় ফার্মগেইট মোড় হয়ে রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কারওয়ান বাজার ও বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল করতে পারেনি। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেন বলে ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. হারুন জানান। ফার্মগেইটের বাসিন্দা মার্টিন গোমেজ তার স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে আটকা পড়েন। তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাস ভাংচুর করে। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই বাসটি সরিয়ে নেওয়া হয়। অবশ্য তেজগাঁ থানার এসআই তৌফিক আহমেদ বাস ভাংচুরের কোনো খবর পাননি বলে দাবি করেন।

এদিকে ধানম-ির আইডিয়াল, গভার্নমেন্ট ল্যাবরেটরি, সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের কিছু শক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে শাহবাগ ও নিউ মার্কেটের সঙ্গে জিগাতলা ও মিরপুর রোডের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাদের নয় দফা দাবি হলোÑ ১. বেপোরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। ২. নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। ৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। ৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। ৭. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ৮. রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে। ৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।

রতœা বসাক নামের একজন উন্নয়নকর্মী বলেন, ছেলেমেয়েরা যেসব দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তা যৌক্তিক। কিন্তু এভাবে সড়ক অবরোধ করলে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে।

ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার নাজমুল আলম জানান, রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার র‌্যাডিসন হোটেলের সামনের রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়ে আধা ঘণ্টা বিক্ষোভ করে। তবে সেখানে রাস্তা বন্ধ হয়নি। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেনÑ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের মানবিক শাখার দ্বাদশ শ্রেণির আবদুল করিম এবং একাদশ শ্রেণির দিয়া খানম।

ঘটনার পর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।

এ ঘটনায় দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম রোববার রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।

ওই ঘটনায় সোমবারও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের এলাকায় শিক্ষার্থীরা ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের দুই দিক অবরোধ করে কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখায়।

এছাড়া গভার্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিরপুর সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে তাদের তুলে দেয়।

আগের দুদিনের বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার সকালে ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরোধের আহ্বান জানানো হয়।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে এই পেজ থেকে বলা হয়, সবাই যার যার প্রতিষ্ঠানের (শিক্ষা) সামনের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিন। এ্যাম্বুলেন্স ও হজযাত্রী ছাড়া কোনো পিঁপড়ার বাহনও যেন না চলে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সদস্যদের পদত্যাগও দাবি করা হয় ওই ফেসবুক পেইজ থেকে।

রাজধানী জুড়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলনকে ‘সকল রাজনৈতিক মতাদর্শমুক্ত আপামর ছাত্রসমাজের অবরোধ’ হিসেবে বর্ণনা করে ওই পেইজে বলা হয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই ‘অবরোধ’ চলবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *