অতিমাত্রায় মাংস খেলে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন

অতিমাত্রায় মাংস খেলে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আজ পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। কোরবানির ঈদে প্রায় সবাই প্রচুর মাংস খেয়ে থাকেন। যারা বিভিন্ন কারণে নিজেদের জন্যে ডায়েট চার্ট তৈরি করে থাকেন, তারাও কবজি ডুবিয়ে হামলে পড়েন মাংসের ওপর।

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাংসে অতি প্রয়োজনীয়। তবে অধিক পরিমাণে মাংস খেলে তা শরীরের ওপর ফেলতে পারে বিরূপ প্রভাব। সুতরাং প্রয়োজনের বেশি মাংস খাওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। তাই মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অবলম্বন করতে হবে বাড়তি সতর্কতা।

কিন্তু কেন খাবেন না অত্যধিক মাংস? কি এমন ক্ষতি হবে যে বছরের শেষ ঈদের সাধের মাংস খেতে হবে পরিমিত? অত্যধিক মাংস খাওয়ার নিম্নোক্ত ৮টি কুফল দেখলে নিশ্চিতভাবেই অতিমাত্রায় মাংস গ্রহণে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য হবেন আপনি।

ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হওয়া:

শক্তি যোগানোর জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। কিন্তু আপনি শুনে বিস্মিত হতে পারেন যে অত্যধিক মাংস খাওয়ার ফলে আপনার ক্লান্তি বা ঘুমঘুম ভাব অনুভূত হবে। আপনার শরীরে থাকা প্রোটিন হজম হতে বেশ কিছুটা সময় নেয়, তাই তাৎক্ষণিকভাবে আপনি শক্তি পান না। আপনার শরীরের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে সর্বাধিক দ্রুত সহজলভ্য শক্তির উৎস গ্লুকোজে পরিণত হয়। যেহেতু আপনার মস্তিষ্ক শক্তির জন্য কেবলমাত্র গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে, তাই প্রোটিন হজমে সময় লাগার কারণে শক্তির সরবরাহ ধীরগতিতে হয়। আপনার মস্তিষ্কে এই শক্তি পৌঁছাতে সামান্য দেরি করলেই ফলে আপনার মনোযোগ খানিকটা কমে যাবে। মস্তিষ্কের মত আপনার শরীরের মাংসপেশিও গ্লুকোজ দ্বারা চালিত হয়। যার কারণে আপনি তন্দ্রাভাবাচ্ছন্ন হবেন অবশ্যই।

চুল ও ত্বকের ক্ষতি হওয়া:

যদি আপনি অত্যধিক মাংস খান, তাহলে অন্যান্য গ্রুপের খাবার খাওয়ার ইচ্ছা ধীরে ধীরে কমে যাবে। প্রাণীজ খাবারই হলো “ভিটামিন সি” এর মূল উৎস। তাই যদি আপনি কৃষিজাত খাবারের পরিবর্তে শুধু মাংস খান, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই ভিটামিন সি এর ঘাটতিতে পড়বেন। কোলাজেন উৎপাদনে ভিটামিন সি এর ভূমিকা অত্যাবশ্যকীয়। কোলাজেন হলো এক ধরনের প্রোটিন যা ত্বক, চুল, নখ, হাড় ও অন্যান্য অংশের গঠন তৈরি করে। ভিটামিন সি এর ঘাটতিতে আপনার ত্বক রুক্ষ, অমসৃণ ও তৈলাক্ত হতে পারে। তাছাড়া, শরীরে গজাতে পারে অস্বাভাবিক লোম। অনেক মাংসাহারী গ্রাহকেরা মাংস খাওয়া কমিয়ে বেশি করে উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে ত্বকের প্রাণবন্ত রূপ ফিরিয়ে এনেছিল। প্রতিদিন গাঢ় বর্ণের শাকসবজি খেলে যেমন এক বাটি পাতাকপিতে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়েও বেশি ভিটামিন সি থাকে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া:

সাধারণত ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্য (হোল গ্রেন) আঁশযুক্ত হলেও মাংস মোটেও আঁশযুক্ত খাবার নয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে শরীরে আঁশের ঘাটতির প্রথম লক্ষণ। শরীরে আঁশের ঘাটতি পূরণের অন্যতম সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে ফল ও শাকসবজি, কারণ এসব খাবারে অন্যান্য পুষ্টিও পাওয়া সম্ভব।

হৃদরোগের ঝুঁকি:

আঁশযুক্ত খাবারের আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে, এটি আপনার শরীরকে কোলেস্টেরল শোষণ থেকে দূরে রাখতে পারে, যা আপনার হার্টকে রক্ষা করতে পারে। যদি আপনার মাংস নির্বাচন লাল ও প্রক্রিয়াজাত মাংস হয় (বিশেষ করে গোটা শস্য ও অন্যান্য আঁশের উৎসের পরিবর্তে), তাহলে আপনার হার্টের ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ধরনের মাংসে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্যালামি, হট ডগস ও ব্যাকনের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংস যে হার্টের ক্ষতি করে তা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।

শরীরে প্রদাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা:

মাংসের স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়া, কৃষিজাত খাবারের তুলনায় মাংসে প্রদাহ-বিরোধী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পেতে বিভিন্ন বর্ণের ফল ও শাকসবজি খান, কারণ বিভিন্ন গ্রুপের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন উপকার করে। পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট নিশ্চিত করতে প্রতিদিন একটি অতিরিক্ত ফল বা শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে।

কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া:

অত্যধিক প্রোটিন কিডনির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে প্রাণীজ প্রোটিন পিউরিন নামক কম্পাউন্ডে পূর্ণ থাকে যা ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। আর অতি মাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কারো যদি কিডনি সংক্রান্ত সমস্যার পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে প্রোটিন গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।

ওজন বেড়ে যাওয়া:

শারীরিক সুস্থতার জন্যে প্রোটিনের প্রয়োজন আছে। শরীরের মাংসপেশি পূর্ণগঠনের জন্য প্রোটিনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অত্যধিক প্রোটিন অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে। যদি আপনি শরীরের প্রয়োজনের বেশি প্রোটিন খান, তাহলে এটি প্রোটিন হিসেবে বরং চর্বি হিসেবে শরীরে জমা হয়। ফলে বেড়ে যাবে ওজন। আর বাড়তি ওজনের শরীর রোগাক্রান্ত হয় সহজেই।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া:

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ১৮ আউন্সেরও বেশি লাল মাংস খাওয়ার ফলে কোলরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ অনুসারে, নিয়মিত যেকোনো পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস ভোজন পাকস্থলী ও কোলরেক্টাল ক্যানসার বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এসব খাবারের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের সঙ্গে ক্যানসার সংযোগ থাকতে পারে। ডায়েট থেকে গরুর মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস কমিয়ে পোল্ট্রি অথবা লেগিউমের মতো উদ্ভিজ্জ প্রোটিন গ্রহণ করলে এ ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *