আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ড্র দিয়ে শুরু হলো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ

আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ড্র দিয়ে শুরু হলো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ

ক্রীড়া ডেস্ক : আগের দিন পর্তুগালের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করে প্রত্যাশার সীমাটা আকাশে তুলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আজ লিওনেল মেসি কী করেন, এ নিয়েই ছিল সবার আগ্রহ। কিন্তু ৬৪ মিনিটে সেই মেসিই করলেন পেনাল্টি মিস! পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পারা মেসির সেই পুরোনো রোগটাই ২ পয়েন্ট হারাতে বাধ্য করল আর্জেন্টিনাকে। পুঁচকে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ড্র দিয়ে শুরু হলো আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ। ডি গ্রুপটা মৃত্যুকূপ না হলেও জটিল সমীকরণ তৈরি করে দিতে পারে। সেই হিসাবে প্রথম ম্যাচে ড্র আর্জেন্টিনাকে আরও বড় শঙ্কার মুখে ঠেলে দিতে পারে।

ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনাই। ১৯ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরো বক্সের মধ্যে দারুণ এক টার্ন থেকে গোল এনে দেন খাদের কিনার থেকে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠে আসা আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু আর্জেন্টিনার দুর্বল রক্ষণ লিডটা ধরে রাখতে পারেনি। ২৩ মিনিটে ফিন বোগাসনের গোলে সমতায় ফেরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা ৩ লাখের দেশ আইসল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টাতেও আইসল্যান্ডের বরফ-জমাট রক্ষণ গলাতে পারেনি আর্জেন্টিনার আক্রমণ। ম্যাচের সবচেয়ে ফ্লপ খেলোয়াড়টির নাম? লিওনেল মেসি!

ম্যাচে প্রথম মিনিটেই আক্রমণে উঠেছিল আইসল্যান্ড। ১৭ সেকেন্ডের সে আক্রমণে অবশ্য কোনো ধার ছিল না। ৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার প্রথম আক্রমণে ধার-ভার সবই ছিল। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে নেওয়া মেসির ফ্রিকিকে মাথা ছুঁয়েছিলেন নিকোলাস ওটামেন্ডি। আইসল্যান্ডবাসীর বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়েও সে বল গেল পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৮ মিনিটে মাঠের ডান দিক থেকে নেওয়া মেসির আরেকটি ফ্রিকিক থেকে কাঙ্ক্ষিত গোলটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির বাড়িয়ে দেওয়া ক্রস মাথার পেছন দিক দিয়ে কীভাবে যেন গোলমুখে পাঠিয়েছিলেন আরেক নিকোলাস, তাগলিয়াফিকো। কিন্তু এবারও বলটা পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে।পরের মিনিটেই বার দু-এক বেঁচে গেছে আর্জেন্টিনা। উইলি কাবায়েরোর ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিল আইসল্যান্ড। কিন্তু চমৎকার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি ইয়োহান বার্গ গুডমুন্ডসন। ফিরতি বল ফাঁকা জায়গায় পেয়ে গিয়েছিলেন বিরকির বিয়ারনাসন। কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারেনি আইসল্যান্ড।

১৭ মিনিটে মেসির নেওয়া দারুণ এক শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন হানেস হলডরসন। ১৯ মিনিটে রোহোর আরেকটি শটও যখন জালে গেল না, তখন মনে হচ্ছিল আজ আর গোল পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। ভুল ভাঙতে এক মিনিটও লাগেনি। প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাঁ পায়ের দারুণ এক শটে গোল পেল আর্জেন্টিনা। তবে সেটি মেসির বাঁ পা নয়, সার্জিও আগুয়েরোর।

আর্জেন্টিনার আনন্দ স্থায়ী হয়েছে মাত্র ৪ মিনিট। আর্জেন্টাইন ডি-বক্সে এক জটলার সৃষ্টি হলো। আলফ্রেড ফিনবোগাসনের বানিয়ে দেওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি হরদুর বিয়ুর্গভিন মাগনুসন। ফিরতি বলে নিজেই তাই কাজ সারলেন ফিনবোগাসন। ম্যাচে ফিরল আইসল্যান্ড (১-১)।

প্রথমার্ধের বাকি সময়টা খুবই বিরক্তিকর। একের পর এক আক্রমণ করে গেছে আর্জেন্টিনা আর ১১ আইসল্যান্ডার মিলে জীবন বাজি রেখে ঠেকিয়ে গেছেন সেসব আক্রমণ। প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি আর কোনো দল। ৮০ ভাগ সময় বল পায়ে রেখেও লাভ হয়নি মেসিদের।

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচটা হলো পুরোই একপেশে। একদিকে আর্জেন্টিনা আক্রমণের পর আক্রমণ করে যাচ্ছে, আর উল্টো দিকে রক্ষণে ব্যতিব্যস্ত আইসল্যান্ড। তবে এত এত আক্রমণ করেও গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি আকাশি-সাদারা। প্রথম ভালো সুযোগ এল ৫৯ মিনিটে। কিন্তু মেসির পা থেকে বল পেয়ে আবার ফিরতি দিতে ইচ্ছে হলো না বদলি নামা এভার বানেগার। নিজের শট নিতে গেলেন। সে শটে এতটুকু ভয় জাগেনি আইসল্যান্ডের রক্ষণে।

৬৩ মিনিটে তবু গোলের দেখা পেয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাক্সিমিলিয়ানো মেসাকে ডি-বক্সে ফেলে দিলেন হরদুর বিয়ুর্গভিন মাগনুসন, পেনাল্টি! ব্যস, ম্যাচে তো এগিয়ে গেলই আর্জেন্টিনা। হাজার হলেও শটটা নেবেন মেসি। কিন্তু ওই সময়েই মেসির পুরোনো রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বাঁ দিকে দুর্বল এক শট, ঠেকাতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি হলডরসনের। ম্যাচ সমতাতেই থাকল।

একটু পরে দায় মেটানোর সুযোগ পেলেন মেসি। ডি-বক্সের বাইরে ফ্রিকিকের সুযোগ। বার্সেলোনার জার্সিতে এবার ফ্রিকিক থেকে গোলের পসরা সাজানো মেসির জন্য সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু হায়, মেসির শট নিয়ে গোলরক্ষককে কোনো দুশ্চিন্তাই করতে হলো না। বারের অনেক ওপর দিয়ে গেল বল। ৬৯ মিনিটে সালভিওর শটও জালের দেখা পেল না।

৭৩ মিনিটে আবারও চেষ্টা করেছিলেন মেসি। কিন্তু এবারও গোলের দেখা পেলেন না আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ৭৭ মিনিটে রেফারি আরেকটু সতর্ক দৃষ্টি রাখলেই হয়তো আরেকটি পেনাল্টি পেতে পারত আর্জেন্টিনা। কিন্তু আজ যে আর্জেন্টিনার ভাগ্যে গোল নেই! ৮১ মিনিটে এ কারণেই হয়তো মেসির অমন দারুণ শটটা বারের ছয় ইঞ্চি দূর দিয়ে গেল। ৮৪ মিনিটে মেসির আরেকটি শট অসাধারণ দক্ষতায় আবারও ঠেকিয়ে দিলেন হলডরসন। এরপরই ম্যাচে দারুণ খেলা মেসাকে তুলে পাঠানো হলো গঞ্জালো হিগুয়েইনকে। গোল পেতে হবে যে!

৮৮ মিনিটে উপায় না দেখে হাভিয়ের মাসচেরানোও একটি শট নিলেন। কিন্তু এতক্ষণ দারুণ সব ঠেকানো হলডরসনের জন্য অমন শট ঠেকানো কোনো ব্যাপার! ৯২ মিনিটে মেসি আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ডি-বক্স থেকে তাঁর ডান পায়ের শটটি ‘গোলবার কেন ২০ ফুট উঁচু নয়’—এমন প্রশ্নই শুধু তুলতে পারল!

ম্যাচের যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তেও (৯৪ মিনিটে) আর্জেন্টিনাকে জয় এনে দিতে পারতেন। দারুণ এক জায়গায় ফ্রি কিক পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু আজ যে মেসির হতাশ করারই দিন!

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *