আন্দোলনে জনদুর্ভোগ কাম্য নয়

আন্দোলনে জনদুর্ভোগ কাম্য নয়

আন্দোলনে জনদুর্ভোগ কাম্য নয়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, দেশের সব আন্দোলনই মানুষ মেরে হয়। মানুষকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়ে সব দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হয়। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সামাজিকভাবে পরিবারতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করি। একটি পরিবার অসুস্থ মানুষদের কতটা অসহায় হয় তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু এরপরও মানুষজিম্মি আন্দোলন থামছে না। যারা আন্দোলন করেন তারাও আবার মানুষদ্বারাই আক্রান্ত।

আমরা দেখেছি, আন্দোলনের নামে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা রেলপথ-রাজপথ অবরোধ করে যেভাবে জনদুর্ভোগের অবতারণা ঘটিয়েছেন তা দুর্ভাগ্যজনক।

বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ শ্রমিকরা নয় দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন। তাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতাও অনস্বীকার্য। তার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বদলে রাজপথ অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং ট্রেনে ও পুলিশের ওপর হামলা আদৌ গ্রহণযোগ্য কিনা ভেবে দেখার বিষয়। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো জন্ম থেকেই জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয়ের পাপে বিদ্ধ। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে এসব শ্বেতহস্তী-জাতীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিলেও হয়তো লোকসানের মাত্রা কম হবে।

বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের মাধ্যমে জাতিকে রেহাই দেওয়াই সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। তা না করে দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকায় পাটকলগুলোকে কৃত্রিমভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। রেলপথ-সড়কপথ অবরোধ করে প্রকারান্তরে সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত হানা হয়েছে, যা কৃতঘœতার নামান্তর।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের টানা ৭২ ঘণ্টার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে গত বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশের বিভিন্ন স্থান। এদিন খুলনায় পুলিশ বক্স ও নরসিংদীতে ট্রেনে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। বিভিন্ন স্থানে রাজপথ-রেলপথের ওপর আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করা হয়। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে যানবাহন ও রেল চলাচল ব্যাহত হয়। খুলনায় শ্রমিকদের আক্রমণে আহত হয়েছেন চার পুলিশ সদস্য। নরসিংদীতে ট্রেন থামানোর চেষ্টায় শ্রমিকরা পাথর নিক্ষেপ করলে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার শ্রমিক দুপুর পর্যন্ত রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করে রাখলে মানুষের ভোগান্তি চরমে ওঠে। শ্রমিক বিক্ষোভে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সমস্যার স্থায়ী সমাধানের তাগিদ সৃষ্টি করেছে। আমরা আশাবাদি, পাটকলের লোকসান আর শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে জাতিকে যাতে ভবিষ্যতে আর ভোগান্তির সম্মুখীন না হতে হয়, সরকার এমন একটি পথ বেছে নেবে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *