আমলকীর গুণবলী

আমলকীর গুণবলী

পাথেয় ডেস্ক : টক আর তেতো স্বাদের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল আমলকী। আমরা কম বেশি অনেকেই আমলকী পছন্দ করি। এর স্বাদ প্রথমে কষটে লাগলেও খাওয়া শেষে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করা ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তুলতেও আমলকী দারুণ সাহায্য করে। আর আমলকীর জুস স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দি-কাশি ঠেকাতে পারে।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একটি আমলকীতে প্রায় ২০টি কমলার সমান ভিটামিন সি থাকে। ১০০ গ্রাম তাজা আমলকীতে থাকে প্রায় ৪৭০-৬৮০ মিলিগ্রাম খাঁটি ভিটামিন সি। বিজ্ঞানে এই ফলকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর ভিটামিন সি দেহকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে, হাড়কে মজবুত করে, প্রতিরোধক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং leukocytes বা শ্বেতকণিকা উৎপাদন করে।

আমলকীতে শুধু যে ভিটামিন সি-ই থাকে তা নয়। এতে আরো থাকে ফ্লেভোনয়েড, ট্যানিন এবং খনিজ পদার্থ। আমলকী খেলে সর্দি, কাশি থেকে শুরু করে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিসের মতো শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগগুলো থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। আমলকীর কিছু উপকারিতা এখানে উল্লেখ করা হলো—

যকৃতের বিষাক্ততা দূর করে : গবেষণায় দেখা যায় যে, আমলকী যকৃতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগের ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ফলে যেসব বিষাক্ততার সৃষ্টি হয় তা দূর করতে সাহায্য করে।

ডায়বেটিস রোগীর জন্য উপকারী : যকৃতের এবং অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, ফোলা, ব্যথা দূর করতে এবং সঠিকভাবে অগ্ন্যাশয়ের কাজে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকী খেলে তা ইনসুলিনের নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করে ডায়বেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়বেটিসের ক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা যায় যে মাত্র ৩ গ্রাম আমলকীর গুঁড়ো অন্য যেকোনো ডায়বেটিসের ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকরী।

পেটের ব্যথা দূর করতে : পেটের ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি, পেট মোচড়ানো, প্রদাহসহ বিভিন্ন ধরনের হজমজনিত পেটের সমস্যা আমলকীর দ্বারা দূর করা সম্ভব।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে : যখন দেহ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন দেহের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনেক সময় ক্যান্সার প্রতিরোধও করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের প্রদাহ এবং নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

ত্বকের সমস্যা দূর করতে : ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমলকীর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্রণ, ফুসকুড়ি, রুক্ষ ত্বক, ইত্যাদি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ ত্বকের অনেক ধরনের প্রদাহ দূর করতে পারে এই আমলকী।

চুলের সুরক্ষায় : শুকনো আমলকীর গুঁড়ো সামান্য কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিয়ে তারপর সেই মিশ্রণটি পুরো চুলে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে আধা থেকে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে দ্রুত চুলের বৃদ্ধি হবে, আর্দ্রতা বজায় থাকবে, চুল হবে মসৃণ এবং উজ্জ্বল।

সুন্দর ত্বক, চুল ও নখের জন্য : আমলকী দেহ কোষের পুনর্গঠনে যার ফলে দেহে পুনর্যৌবন লাভ করে। নিয়মিত আমলকী খেলে এবং ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়, বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, অকালে চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় হচ্ছে এই আমলকী। শ্যাম্পু, ফেসিয়াল ক্রিম, চুলের মাস্ক এবং অন্যান্য আরো অনেক কিছুতেই আমলকী ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এছাড়াও প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে। আমলকীর টক ও তেতো স্বাদ মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকী খেতে পারেন। আমলকীর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। আমলকি জ্বর, বদহজম, সানবার্ন, সানস্ট্রোক থেকে রক্ষা করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *