কাউসার মাহমুদ : রাতের শেষ আবেশটুকু এখনো বাকী। আধো আলো অাধো অন্ধকার ধরে এখনও জেগে আছে আকাশ। দিগন্তে লালচে আভার চিক্কণ রেখাটি খুব ক্ষীণ হয়ে জ্বলে উঠবে এখনি। কিন্তু এ আলো ফুটবার আগেই বাংলার ইতিহাসে মুদ্রাঙ্কিত হলো একটি বীভৎস অধ্যায়ের। নৃশংস বর্বর হত্যাকাণ্ডে নিভে গেলো বাঙালির জাতিসত্বায় বিভা ছড়ানো মুজিবের পরিবার।
সেদিন একটি শিশু ভয়ে কেঁপে উঠছিল বারবার। ফুটফুটে এমন কোমল মুখের বলিরেখায় ভেসে উঠেছিল তার দাগ। রক্তের স্রোত বয়ে যাওয়া ঘরের মেঝ জুড়ে বাবা, মা, ভাইয়া, ভাবিসহ সবকক’টি নিথর দেহ দেখে একদম কুঁকড়ে গিয়েছে সে। একটি অপরিচিত পৃথিবী তার সামনে মৃত্যুপুরী হয়ে ধেয়ে এলো তখন । কোথাও কেউ নেই। এ যেন ঘুমিয়ে থাকা এক প্রাণহীন ঘর। মায়ের কাছে গিয়ে দেখে তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এতো ডাকে তবুও জাগে না মা। কেন কথা বলে না ‘মা’। ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে বলে ‘আমি হাসু আপার কাছে যাবো’।
ঘাতকেরা আরো নির্মম হয়ে ওঠে। নারকীয় জিঘাংসায় উন্মাদ হয়ে ওঠে তাদের অপ্রকৃতস্থ বোধ। দশ বছর বয়সী শিশুর আর্তনাদ সামান্যও রেখাপাত করেনি এই পাষণ্ডদের। তারা একেও গুলি করে । ছোট্ট খুকুর মস্তক আর বের হওয়া চোখ নিঃসাড় পড়ে থাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। ছেলেটিকে ‘রাসেল’ বলে ডাকবার কেউ বেঁচে ছিলো না তখন। তার হাসু আপা তখন খুব দূরে। অদূরে। তার ডাক পৌঁছে না কোথাও। ভয়ার্ত এই আহ্বান জানালার ফাঁক গলে আকাশে মিলিয়ে যায়।