পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : খেলাপি ঋণ কম দেখাতে ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত পুনঃতফসিলের পথে হাঁটছে। এতে যুক্ত হয়েছে বৃহৎ খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন। আইন অনুযায়ী কোনো ঋণ তিনবারের বেশি পুনঃতফসিলের সুযোগ না থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রভাবশালী গ্রাহকরা ১০ বারেরও বেশি পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়েছেন। এতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা কম দেখালেও দুর্দশাগ্রস্ত বা স্ট্রেসড ঋণের হার বেড়েছে।
অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে ব্যাংকিং খাতের বিতরণকৃত ঋণের এক-চতুর্থাংশই দুর্দশাগ্রস্ত। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৫ সালে বিশেষ বিবেচনায় পুনর্গঠন করা হয়েছিল ১১টি শিল্প গ্রুপের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। সে ঋণেরও সিংহভাগ আবার খেলাপি হয়েছে। এদিকে খেলাপি ঋণের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে ব্যাংকের স্ট্রেসড বা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর হার বৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক হিসেবে চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছে।
বছরের পর বছর চলতে থাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব, সুশাসনের অভাব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কম থাকাসহ নানা কারণে এসব ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। ঋণখেলাপিদের মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা একাধিক সরকারি ব্যাংকে খেলাপি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি। অর্থমন্ত্রী যে তালিকা সংসদে প্রকাশ করেছেন, তারা বর্তমানে কাগজে-কলমে খেলাপি। কিন্তু আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন এবং আদালতে রিট করে খেলাপি তালিকার বাইরে রয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকগুলো অনেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবলোপন করে হিসাবের খাতার বাইরে রেখেছে। এগুলোকে যদি হিসাবে ধরা হয়, তাহলে খেলাপি ঋণের চিত্র আরো ভয়াবহ হবে। দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ যেকোনো সময়ে ব্যাংকের বোঝায় পরিণত হতে পারে। রাজনৈতিক প্রভাব এবং যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ বিতরণের কারণে এটি হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতিও রয়েছে। ব্যাংকাররা যেমন দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ দিয়েছেন, তেমনি প্রকল্প প্রস্তাব নিয়মমাফিক পরীক্ষা না করেও ঋণ দিয়েছেন। ফলে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
উল্টো তাদের খেলাপিও বলা যাবে না। কেউ কেউ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। উচ্চ আদালত থেকে রিট নিয়ে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। অথচ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ঋণখেলাপি গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন না। অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আবার তারা খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই ব্যাংকিং খাত তাদের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে। বড় গ্রাহকদের সব ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে দেয়া উচিত নয়। ব্যাংকগুলো সবাই মিলে একই গ্রাহককে ঋণ দিচ্ছে, ফলে গ্রাহকের ঋণের পরিমাণ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়ছে। ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ নেয়া উচিত। একই সঙ্গে বড় শিল্প গ্রুপের ঋণগুলো কঠোরভাবে তদারকি করা উচিত। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রেও নজরদারি বাড়ানো উচিত।