ইসরায়েলকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ইউরোপের তিন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে আজ  

ইসরায়েলকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ইউরোপের তিন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে আজ  

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ইউরোপের তিন দেশ—স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে আজ মঙ্গলবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই ঘটনায় আগেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের প্রতি ইউরোপের আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক দেশের এমন সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে গাজা যুদ্ধের সাত মাস পর ইসরায়েল এখন মনে করছে, বিশ্বে ক্রমেই তারা আরও বেশি একঘরে হয়ে পড়ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইইউর সদস্য মাল্টা ও স্লোভেনিয়াও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের মধ্যে প্রায় ১৪৪টি দেশই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে।

মাদ্রিদ, ডাবলিন ও অসলো বলেছে, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে তাদের এ সিদ্ধান্ত ভূমিকা রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলো স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে ওই তিন দেশের স্বীকৃতি অনেকটা প্রতীকী হিসেবে রয়ে যাবে। তবু তাদের আশা, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশকে অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করবে।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলা ইউরোপের বৃহত্তম ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ স্পেন ও আয়ারল্যান্ড। ২৭ জাতির ইইউর সদস্য সুইডেন, সাইপ্রাস, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইইউর সদস্য মাল্টা ও স্লোভেনিয়াও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

ফ্রান্স বলেছে, ফিলিস্তিনকে এখনো স্বীকৃতিদানের সময় আসেনি। আর ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে জার্মানি। দেশ দুটি এমন ‘একতরফা’ পদক্ষেপ নাকচ করে জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে, মধ্যপ্রাচ্য সংকটে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন এই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অবশ্যই সংলাপের মাধ্যমে হতে হবে।

২২ মে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, আমাদের স্বীকৃতি ও যৌক্তিক আচরণ পশ্চিমা দেশগুলোকে একই সিদ্ধান্ত (ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি) নিতে ভূমিকা রাখবে। কেননা, আমাদের দল যত ভারী হবে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় আমরা তত প্রভাব খাটাতে সক্ষম হব।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ব্যাপক রকেট হামলা চালান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। ওই দিন থেকেই গাজায় নারকীয় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলে। তাদের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার একটি প্রস্তাব সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে পাস হয়। ১১ মে ২০২৪, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর

এদিকে ইসরায়েলের দাবি, দেশটির ৭৫ বছরের ইতিহাসে এমন হামলার ঘটনা আর ঘটেনি। হামাসের ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

১৯৬৭ সালের আগের সীমানাকে বহাল রেখে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। আর জেরুজালেমকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয়ের রাজধানী হিসেবে মানবে দেশ তিনটি। এ পদক্ষেপে ফিলিস্তিন নিয়ে কূটনৈতিক প্রটোকলেও পরিবর্তন আসবে। পশ্চিম তীরে দেশ তিনটির প্রতিনিধিদের কার্যালয় উন্নীত হবে পূর্ণ দূতাবাসে।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে ওই তিন দেশের সিদ্ধান্তের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি মাদ্রিদ, অসলো ও ডাবলিন থেকে তার রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে। পাশাপাশি তলব করছে দেশ তিনটির রাষ্ট্রদূতদের।

পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের কনস্যুলার সেবা দেওয়া থেকে স্পেনকে বিরত রাখার পদক্ষেপও নিয়েছে তেল আবিব। জবাবে স্পেনও ইসরায়েলের প্রতি সমালোচনা জোরদার করেছে। দেশটি বলেছে, গাজায় সত্যিকারের জাতিগত হত্যা চলছে।

স্পেন গতকাল সোমবার বলেছে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলকে অভিযান বন্ধে যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানাতে ইইউর সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবে তারা।

যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলো স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে এ তিন দেশের স্বীকৃতি অনেকটা প্রতীকী হিসেবে রয়ে যাবে। তবু তাদের আশা, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশকে অনুরূপ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এক ‘অপরিহার্য’ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তিনি আজ বলেন, ‘আমরা যদি শান্তি অর্জন করতে চাই, তবে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এক অপরিহার্য বিষয়।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *