ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোরবানির ঈদের আগে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম; দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নিত্যপণ্যটির দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করলেও বিষয়টিকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। গত জুনের শুরুতে কারওয়ান বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৪ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সোমবার ঢাকার অধিকাংশ কাঁচা বাজারেই দেশী পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপনন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি অন্তত ১০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম অন্তত পাঁচ টাকা বেড়েছে। ফরিদপুরে পেঁয়াজের অন্যতম পাইকারি বাজার কানাইপুর হাটের ইজারাদার সেলিম আহমেদ বলেন, ফরিদপুরের পাইকারি বাজারেই প্রতিকেজি ৩৫ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

গ্রামের যেসব কৃষক কোরবানের মওসুমে ভালো দাম পাওয়ার আশায় পেঁয়াজ মজুদ রেখেছিলেন, তারা দাম বৃদ্ধির সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। আমদানি করা পেঁয়াজের উৎস দেশ ভারত গত নভেম্বরে পেঁয়াজ সংকট সামাল দিতে নূন্যতম রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করে। তখন ভারতীয় বাজারে পেঁয়াজের দর প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ রুপিতে পৌঁছে। দাম কমতে থাকায় গত ১৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন রপ্তানিসীমা দেড়শ ডলার কমিয়ে ৭০০ ডলার নির্ধারণ করে দেশটি। এর পর বাজারে সরবরাহ আরও বেড়ে যাওয়ায় ২ ফেব্রুয়ারি পেঁয়াজের নূন্যতম রপ্তানিমূল্য প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। এখন পেঁয়াজ রপ্তানি হচ্ছে স্বাভাবিক বাজার দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে পেঁয়াজ আসে মূলত বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এই বন্দরের আমদানিকারকদের দাবি, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে বাড়ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ এখন বেনাপোল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি আর দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, বেনাপোলে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ২০৫ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। সে হিসাবে আমদানি খরচ, ট্রাক ভাড়া দিয়ে বেনাপোল পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য পড়ছে ২০ টাকা। ২০ টাকার পেঁয়াজ বাজারে কীভাবে ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে তা পরিষ্কার নয়।

বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক শাহিন রেজা বলেন, আমদানি করা মূল্যের উপর সামান্য লাভ রেখেই আমরা পেঁয়াজ তুলে দিচ্ছি কিন্তু পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ক্রেতাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, বাজার সহনশীল রাখতে ও পেঁয়াজের আমদানি গতিশীল করতে বেনাপোল বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকরা যে মূল্য ঘোষণা দিচ্ছে সে মূল্যেই শুল্কায়ন করা হচ্ছে। তারপরও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে, ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশেও দেশীয় পেঁয়াজের দাম একটু বেশি হয়েছে। দেশীয় পেঁয়াজ আমাদের এই মুহূর্তে যতটা দরকার ছিল ততটা নাই। আর কোরবানের ঈদের আগে পেঁয়াজের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। একটা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উঠানামা করে এটাই স্বাভাবিক। এখানে কারও কোনো হাত নেই।

ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার মনোবৃত্তিকেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, কোরবানির আগে এই ঈদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া অবশ্যই উদ্বেগের। এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আমাদের সরকার যেহেতু ব্যবসাবান্ধব, তাই তারা ব্যবসায়ীদের স্বার্থটুকুই ভালোমতো দেখছে। ফলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের কিছুই করার নেই। পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, উনি কী জনগণের মন্ত্রী, নাকি ব্যবসায়ীদের মন্ত্রী আমরা সেটা বুঝতেছি না। সরকার যদি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা না করে, তাহলে মন্ত্রীদের কাছ থেকে এ ধরনের কথা আমরা শুনতেই থাকবো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *