ঈদ উপলক্ষে আমাদের মধ্যে তৈরী হয় প্রীতির সম্পর্ক: মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন

ঈদ উপলক্ষে আমাদের মধ্যে তৈরী হয় প্রীতির সম্পর্ক: মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন

পাথেয় ডেস্ক : প্রতিবছরের মতোই এবারো যথাসময়ে ইকরা ঝিল মসজিদে ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।সকাল ৮টায় ইকরা মসজিদ কমপ্লেক্সে ঈদের জামাতের ইমামতি করেন ইকরা বাংলাদেশের প্রিন্সিপাল মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন।

গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল।ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে শঙ্কাও ছিলো তাই। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানি নামাজ শুরু হওয়ার আগেই আকাশ পরিস্কার দেখা গেছে।এলাকার মুসুল্লিরাও নির্বিঘ্নে আদায় করেছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ।

নামাজের পূর্বে মাওলানা মাকনুন কোরআন ও হাদীসের আলোকে ঈদ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনায় বলেন, ঈদ মুসলমানের জাতীয় উৎসব।প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ খুশী-আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে রাখে আমাদের। হৃদয়ে দ্রবীভূত হয় ভালোলাগা,ভালোবাসা। মাসব্যাপী ইবাদত -অর্চনায় পবিত্র হয়ে ওঠেছে যে মানবাত্মা। রবের সংস্পর্শে থেকে ধুয়ে মুছে হয়েছে পবিত্র। দূর হয়েছে হিংসা,দ্বেষ, লোভ,লালসা, ক্ষোভ, ঘৃণা, প্রতারণা,পরনিন্দা, পরচর্চা। এমন বিশুদ্ধ হয়ে ঈদের দিন কাঁধে কাঁধরেখে দাঁড়িয়ে যাবে সকলে। একই মাঠে এক কাতারে। কোনও অভিযোগ নেই। শুধুইভালোবাসা,ভ্রাতৃত্ববোধে জেগে ওঠে অন্তর। বুকে চলে আসে পুরনো দুশমনও। তৈরী হয় সাম্য,মৈত্র্যি ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা,সমবেদনা, ভালোবাসার উজ্জ্বল পরিবেশ হযরত আনাস রা.সূত্রে বর্ণিত রাসূল সা.বলেছেন,মদিনায় এসে দেখলেন মদিনাবাসীদু’দিন খেলাধুলায় আনন্দ করে।রাসূল সা.এই দু’দিন সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তারাবলেন,আমরা ইসলামপূর্ব অন্ধকার যুগে এই দু’দিন আনন্দ করতাম। রাসূল সা.বলেন,এই দু’দিন অপেক্ষা আল্লাহ তোমাদের উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন,১.ঈদুল ফিতর,২.ঈদুল আযহা।

ঈদের পর মুমিন জীবনের চিত্র এবং যাপিত কালের কথা ফুটে ওঠেছে হযরত নোমান বিন বশীর রা.এর হাদীস থেকে…রাসূল সা.বলেছেন, ” পারস্পপরিক স্নেহ-মমতা,ভালোবাসা ও সহমর্মিতার দিক থেকে ঈমানদারদের উদহারণ হলো একটি দেহের মতো। এর একটি অঙ্গ যদি ব্যাথাপ্রাপ্ত হয়,তাহলে সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে কাতর হয়ে পড়বে।

ঈদ উপলক্ষ করে আমাদের মধ্যে তৈরী হয় প্রীতির সম্পর্ক। সালাম,মোসাফাহ করে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে নেয়া। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়ী যাওয়া। দাওয়াত,মেহমানদারিতে ভরে ওঠে ঘরের পরিবেশ। ছোটদের আদর করে উপহার দেয়া। মুরুব্বিদের থেকা সালাম নেয়া এবং পারস্পরিক হৃদ্য আচরণের মাধ্যমে রচিত হয় অনুপম সৌহার্দের। ভালোবাসার বন্ধন হয় আরোমজবুত। আরো দৃঢ়। প্রতিবেশীদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা।বৈরীতা নয় বরঞ্চ মধুর সম্পর্ক। প্রতিবেশীদের সঙ্গে করণীয় সম্পর্কে রাসূল সা.বলেছেন, “ওই ব্যক্তি মুমিন নয়,যে তৃপ্তি সহকারে খায় অথচ তার প্রতিবেশী অভ্যুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।পবিত্র কোরআনে মুমিন সম্পর্কে আল্লাহর কথা-“মুমিন ধন সম্পদের প্রতি ভালোবাসা সত্বেও আত্মীয় স্বজনদের উপহার দেয়।

ঈদ যেমন আমাদের মাঝে ছড়িয়ে যায় অনাবিল আনন্দ। উৎসবের পবিত্র পরিবেশ। তেমনি ঈদ উপলক্ষ করে হতে পারে সুন্দর সম্পর্কের নবায়ন।কারও সঙ্গে রাগে ক্ষোভে কথা বলছেননা বেশ অনেকদিন ধরেই। সাক্ষাতেও বাতচিত নেই একদম। দীর্ঘদিন গত হওয়ায় সংকোচ আর লজ্জায় আবার যাচ্ছেনও না।তাহলে এইতো সুযোগ।সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করুন প্রতিবেশীর সঙ্গে। ঈদের দিন গিয়ে হাজির হন তাঁর বাসায়।খোঁজ খবর নিন ভালো-মন্দের। সালাম -শুভেচ্ছা, কোলাকুলিতে ভুলে যান অতীত অভিমান। পেছনের সমস্ত ভুলে ঈদের আবহ ছড়িয়ে দিন চারপাশে।রাসূল সা. এক হাদীসে বলেছেন, কোনও মুসলমানের জন্য হালাল নয় তার অপর কোনও ভাই-বন্ধুর সাথে তিন দিনের বেশী কথা বন্ধ রাখবে। অন্যত্র আছে রাসূল সা.বলেছেন, ” কেউ যদি তার ভায়ের সঙ্গে দিনের বেশী কথা বন্ধ করে রাখে এবং সে অবস্থায় মারা যায় তবে সে জাহান্নামেযাবে।

নামাজের পর বিশ্বশান্তি এবং বাংলাদের সার্বিক উন্নয়ন কামনা করে মোনাজাত করেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *