উদাবাদের জবানে ঈদের সানাখানি

উদাবাদের জবানে ঈদের সানাখানি

  • আব্দুস সালাম

কবি-সাহিত্যকদের চোখে সব বস্তুরই আলাদা একটি রূপ, একটি অবয়ব আছে, যা আমাদের সাধারণ্যের চোখে ধরা পরে না। তারা যখন কাগজে সেই রূপের রূপায়ণ ঘটান, তখনই তা আমাদের সামনে হাজির হয় বৈচিত্রের নানান দিকদিগন্ত নিয়ে।

এই যেমন ঈদের দিনটার কথাই বলুন না; ধর্মীয় উৎসব ছাড়া এর আলাদা কী মাহাত্ম্য ছিলো আমাদের কাছে?

অথচ একজন সাহিত্যকের চোখে—


ঈদ হলো একটি কাল থেকে বের হয়ে আরেকটি কালের মধ্যে প্রবেশ করা, যার মেয়াদ মাত্র এক দিন

এই কথা শুনে আমাদের চৈতন্য জেগে ওঠে; সত্যিই তো ঈদ এক মহাকালের যাতাকল থেকে বের করে এনে ক্ষণিকের জন্য আলাদা করে রাখে আমাদেরকে, যেই মুহুর্তের সাথে কালের অন্যসব দিনক্ষণের কোনো মিল নেই। এ যেন, জঞ্জালপূর্ণ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে নির্মল ছায়াঘেরা কোনো বাগানে বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেওয়ার প্রকৃতি কর্তৃক মনুষ্য প্রজাতির অবকাশ প্রদান।

এইযে ঈদের দিনে আমরা ফিরনি-পায়েস, জর্দা-সেমাই খাই, মিষ্টিমুখ করা ছাড়া এর অন্য কোনো অর্থ আমাদের কাছে ছিলো না, কিন্তু একজন লেখক যখন বললেন—


শুধু মুখ মিষ্টি না, মুখের ভাষাও যেন মিষ্টি হয়ে উঠে এজন্যই এদিনে বাহারি মিষ্টান্নের আয়োজন

এর আগে কখনো কল্পনা করেছেন সেমাই খাওয়ার এমন সুখকর তত্ত্ব?

ঈদকে কেন্দ্র করে এদুটি অর্থ রাফেঈর হাযির করা। সত্যি বলতে কী, এই কথাগুলো যেদিন পড়েছি তারপর থেকে সত্যিই ঈদের অর্থ আমার কাছে নতুন করে ধরা দিয়েছে।

ঈদ নিয়ে গাদাহ সাম্মান (সিরিয়ান লেখিকা)-এর এই আপ্তবাক্য পড়লে কিছুক্ষণের জন্য আপনাকে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে হবে—


ঈদ আছে ঈদ থাকবে; শিশুরা কেবল বদলে যাবে

মুহুর্তেই শৈশবে আমাদের নিয়ে যায় গাদাহ-এর এই চরণটি । হারানো স্মৃতি জাগরুক করে তোলে। ঈদ তো ছিলো, এখনো আছে, কিন্তু কুড়ি বছর আগের রাড়ীখালের মুন্সিবাড়ির সেই শিশুগুলো আর নেই, ওরা হারিয়ে গেছে। আর কখনো ফিরে আসবেনা শিশুর বেশে, রঙিন আবেশে।

আনন্দের মাঝেও সাহিত্যের ভায়োলিন কখনো বিষাদের সুর তোলে। পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের মনে কি ঈদ আনন্দ জাগায়?


হাল তাফরাহু ফিল ঈদী আ‘ইয়ুনুন- তানামু আলা ফাযাইন ওয়া তাসতাইকিযু আলাইহী?

যে চোখগুলো আতঙ্ক নিয়ে ঘুমায়, আতঙ্ক নিয়ে জেগে উঠে, তাদেরও কি কোনো ঈদ আনন্দ থাকে?

কথাগুলো বলেছেন— ইনআম কাজাহজী নামক লেখিকা। আপনি যত বড় পাপাসক্ত হোন না কেনো, এই কথাটি পড়লে ঈদের নামাযের মোনাজাতে আপনার চোখ ভিজে উঠবেই।

আমরা যারা শৈশব-কৈশোরের সীমা পেরিয়ে এসেছি, তাদের কাছে ঈদ যেন পুরোনো দিনের নিরর্থক দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু না, মুতানাব্বির কবিতা প্রতি ঈদেই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঈদ যতবারই আসুক তা কোনো না কোনো নতুন অর্থ নিয়ে আসে। ভিন্ন কোনো বিশেষণ নির্ণয় করে। মুতানাব্বি বলেছেন—


ঈদ, তুমি যতই পুরোনত্ব নিয়ে ফিরে ফিরে আসো না কেনো, তোমার মাঝে আমি ‘নতুন’ খুঁজে পাই

সাহিত্য না থাকলে আনন্দগুলো নিরানন্দ হতো। উল্লাসগুলো হতোদ্যমতায় পর্যবসিত হতো। খুশিগুলো পানসে লাগতো। যারা নিজেদের সৃষ্টিশীলতার দানে আমাদেরকে নিখাদ বিনোদন ও আত্মার আহার যুগিয়ে গেছেন, তারা ওপারে ভালো থাকুন। যারা এখনো দিচ্ছেন তারা এপারে ভালো থাকুন।

কুল্লা আম, ওয়া আনতুম বিখায়র..

 

লেখক : পরিচালক, আত তুরাস একাডেমি অফ এরাবিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *