বিশেষ চিঠি
উদার হোন মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম
মাওলানা আব্দুল্লাহ : আমার এই ছোট্ট জীবনে এক বড় অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতা হয়ত, অনেকেরই আছে। কিন্তু মুখ খোলার সাহস হয় না কারো।কেননা, কথা বললে কত যে আক্রমণ হবে, তার কোন হিসাব নেই।
একটু লক্ষ্য করলে অনেকেই বুঝতে পারবেন, পাকিস্তানে যারা পড়তে যাচ্ছে, বা সেখান থেকে পড়ে আসছে, তাদের জেহেনের মধ্যে কি যেন একটা বিষয় কাজ করে। যদিও তারা দেওবন্দী মাসলাক দাবি করে। কিন্তু ওনাদের মস্তিষ্কে নতুন নতুন বিষয় সংযুক্ত হচ্ছে।
ওসব পাকিস্তানে পড়ুয়া আলেমদের সংস্পর্শে আবার কিছু দেওবন্দ পড়া আলেমও বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে। উনারা এখন চলনে -বলনে ঐ পাকিস্তান পাকিস্তান ভাব।
পাকিস্তান পড়ুয়া কিছু আলেমের এর বড় সিফাত হলো, আকাবির- আছলাফের দোষ ত্রুটি খুঁজে খুঁজে বের করা। আবার কিছু আছে সংকীর্ণ মনা। হৃদয়ের মাঝে জায়গা একদম কম। সবাইকে মনের মধ্যে জায়গা দিতে পারেন না।
মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব একজন প্রতিভাবান আলেম হিসেবে জানতাম। আমি তার প্রতি কখনো খারাপ ধারনা করিনি। জানি তিনি উম্মাহ এর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু বছর খানেক ধরে তার কিছু লিখনী যা প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে বড় আফসোস হচ্ছে। আসলে আরবীতে একটা প্রবাদ বাক্য আছে, ‘কুল্লু শাইয়্যিন ইয়ারজিয়ু ইলা আছলিহি’ প্রত্যেক জিনিস তার আসল অবস্থার দিকে ফিরে যায়।
মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব সেই আছলের দিকে ফিরে যাচ্ছেন। ঐ যে পাকিস্তানী ভাইদের সোহবতে পড়ে, সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছেন।
কোন বিশেষ ব্যক্তির স্মারক গ্রন্হ বের হয়, সেই ব্যক্তির কর্মময় জীবনের উপর। সাধারণত জাতির জন্য তার রেখে যাওয়া অবদান নিয়ে নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে কাউকে খাঁটো করার কোন মাকসাদ থাকে না।
মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব আবুল ফাতাহ সাহেবের স্মারক গ্রন্থে যেটা লিখেছেন, ওটা কিন্তু না লিখলে পারতেন।
এধরনের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা না ছড়ালেই হত। কিন্তু কেন জানি তিনি, অনেক দিন ধরে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সাহেবের পিছে লেগে আছেন। জানি না তার উদ্দেশ্যটা কি।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব সম্পর্কে তার কথা গুলো বলে তিনি যে নিজের অবস্হানে পচন ধরাচ্ছেন, এটা হয়ত তিনি জানেন কিনা আমি জানি না।
আমি আবুল ফাতাহ ইয়াহইয়া সাহেবের সরাসরি ছাত্র। দীর্ঘ চার বছর তাঁর কাছে পড়েছি। হুজুরের সাথে আমার ব্যক্তিগত তায়াল্লুক ছিল। এই দীর্ঘ সম্পর্কে কোন দিন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেব সম্পর্কে কোন মানহানিকর মন্তব্য করতে দেখিনি। এমন কথাও বলতে দেখিনি, যা ফরীদ সাহেবের বিপক্ষে চলে যায়।
আল্লামা আবুল ফাতাহ সাহেব হুবহু ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের ফটোকপি ছিলেন। আমি তো ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবকে চিনেছি আবুল ফাতাহ সাহেবের মাধ্যমে। একদম তিনি ফরীদ সাহেবের চিন্তা- চেতনার ধারক বাহক ছিলেন। কিন্তু আব্দুল মালেক সাহেব আজগুবি কথা কোথা থেকে আবিষ্কার করলেন, সেটা বুঝলাম না। শুনি, তিনি নাকি একজন উঁচু মানের ফকীহ।তাহলে একজন ফকীহ কিভাবে দলিল প্রমাণ ছাড়া কথা বলে? তিনি যে মনগড়া উক্তিটি করলেন, এর দ্বারা তাঁর ফাকাহাত কি প্রশ্ন বিদ্ধ হল না?
আসলে কথাটা বলবে কে? কিছু চুটকি বললে আমরা মনে করি, ওরে আল্লাহ! কত বড় আলেম! কিন্তু একজন মৃত্যু ব্যক্তিকে নিয়ে মিথ্যাচার করা কত বড় যে জঘন্য। সেটা কি ভেবে দেখেছি। মুফতি আব্দুল মালেক সাহেবকে আমি শ্রদ্ধা করি। ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের ব্যাপারে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, এ কারণে তার থেকে শ্রদ্ধাবোধ উঠে যায়নি এখনো। আমি চিন্তা করছি, তার ব্যক্তি মর্যাদা নিয়ে। তিনি যদি অন্য সব মাথামোটা ওয়ালাদের মত হয়ে যান, তখন তো আফসোস করতে হবে সবার।
যেমন বক্তৃতার ময়দানে সাউন্ড গ্রেনেড নামে এক বক্তা আছেন। বক্তৃতা দিতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলেন। কোথায় কি বলতে হয় সেটার হুঁশ- জ্ঞান একদম কম। ঠিক আব্দুল মালেক সাহেব যদি সেরকম হয়ে যান, তখন তো বড় দুঃখ লাগবে সবার।
ওলামায়ে দেওবন্দ এর বৈশিষ্ট হল, এতেদালী মেজাজ। কিন্তু নব্য ফকীহদের সেই এ’তেদালী মেজাজ গেল কোথায়?
অনেক বড় বড় শখছিয়্যাতের সোহবত মাড়ানো ব্যক্তি আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। বিশেষ করে দেওবন্দী হালকার বহু মহারথীদের সংস্পর্শে সময় পার করেছেন। জীবনে কখনো কোন সালাফী মেজাজের মানুষের সাথে সখ্যতা নেই। সম্পর্ক থাকলেও তিনি মাগলুব হননি।
কিন্তু হালজামানার ফকীহদের যে হালাত, তাতে সালাফিয়্যাত গালেব হচ্ছে। এ’তেদালী মেজাজের উপর নিজেদের প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আল্লামা মাসঊদ সাহেবের যে সকল শাগরেদ গণের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা কিন্তু আজো জীবিত আছেন। তারাও উস্তাদের চিন্তা- চেতনার মুখালেফ নন।
কিন্তু এভাবে নাম ম্যানসন করে তাদের কে উস্তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো কোন ভদ্রতার পরিচয় বহন করে না। আল্লামা মাসউদের অগণিত শাগরেদ এই বাংলাদেশে। যারা প্রত্যেকেই স্বীয় স্হানে জ্যোতি ছড়াচ্ছেন। আমার দেখা রাজধানী ঢাকায় এক ঝাঁক প্রতিভাবান আলেম আল্লামা মাসউদেরই শাগরেদ। তারা দেশ সেরা আলেম, লেখক, গবেষক, মুহাদ্দিস, মুফতি এবং বিভিন্ন খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্ত অদ্যবধি সে সব শাগরেদ গণ উস্তাদের মতের সাথে অমত প্রকাশ করেননি।
মুফতি আব্দুল মালেক সাহেবের আরো উদারতার পরিচয় দেওয়া উচিত। নিঃসন্দেহে তিনি বড় মানুষ। কিন্তু বড় মানুষ হিসেবে সংকীর্ণতা কাটেনি অন্তর থেকে। মনকে আরো প্রশস্ত করা উচিত।
তিনি অবশ্যই জানতেন, এই কয়েটা লাইন লিখলে বিতর্ক হবে। জেনে বু্ঝে তার মত মানুষের এই পিচ্ছিল রাস্তায় যাওয়াটা ঠিক হয়নি।
আমরা এখন হয়ত অনেকে বলব, ভাই কাঁদা ছোড়াছুড়ি না করি, আমরা সবাই নিজেরা নিজেরা। আমিও এক মত। তবে এই বিষয় গুলো আব্দুল মালেক সাহেবের কর্ণকুহুরে পৌঁছানো চাই। হযরতকে ও এব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব নিশ্চয়ই তিনি কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ সাহেব কে চিনতেন। তাঁর সম্পর্কে জানতেন। হয়ত কাজি সাহেবের সোহবতে বসার সুযোগ ও হয়েছে। তাহলে কাজি সাহেব হুজুরের কাছে কি ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সম্পর্কে শোনেননি। তিনি কি জানেন নি ফরীদ সাহেব কে?
আসলে সবই হয়ত জানা। কিন্তু কেন যে তিনি এত কিছুর পরে তার কলম বেপরোয়া ভাবে ছুটে চলে, তখন বড় দুঃখ হয়।
সব শেষে মঙ্গল কামনা করি সকল হক পন্হী আলেমদের। বিশেষ করে প্রিয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের জন্য শুভ কামনা। আল্লাহ তাঁকে উভয় জাহানে কামিয়াব করুন। আমিন।
লেখক : কলামিস্ট
চিঠি বা মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়