অভিভাবকহীন কওমী অঙ্গন
আমিনুল ইসলাম কাসেমী : আপনারা কেউ স্বীকার করেন আর না করেন, আমরা যে এখন অভিভবাকহীন হয়ে পড়েছি, এটা দিনে দিনে আরো স্পষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাদের কোন গার্ডিয়ান নেই, আমাদেরকে দেখার কেউ নেই।
মনে পড়ছে শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমাদ শফি (রহ.) কে। একদম কদমে কদমে টের পাচ্ছি কি নেয়ামত আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, এমনকি বিছানায় শুয়ে থাকাটাও আমাদের বিশাল এক ছায়া ছিল। কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে নেই। সে নেয়ামত আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
খুব মনে পড়ছে আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমী (রহ.) কে। তিনি জীবিত থাকলে হয়ত আমাদের রাহবারী করতেন। সঠিক সিদ্ধান্ত দিতেন। মনে হয় কেউ হুজুগী কোন কাজ করত না। তিনিও চলে গেছেন।
মুফতী ওয়াক্কাসের কথা মনে হলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যার মধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল। আমার দেখা বাংলাদেশের তুখোড় রাজনীতিবিদদের একজন তিনি। যার মেধা, যার জ্ঞান- গরিমার কোন জুড়ি ছিল না। সেই মহান ব্যক্তিও বিদায় নিয়েছেন।
এখন কে হবেন আমাদের মুরুব্বী? কে আমাদের রাহবারী করবেন? জাতির সংকটকালে কে আমাদের রাস্তা দেখাবেন?
বর্তমান পরিস্হিতি থেকেও অনেক প্রতিকুল পরিবেশ ইতিপুর্বে গিয়েছে। আলেম-উলামাগণ তখন দিকবিদ্বিক হলেও আল্লামা আহমাদ শফি সাহেবের যোগ্য নেতৃত্বে সবাই এক মঞ্চে চলে এসেছেন। আমার কাছে মনে হত, বিপদের সময় মুরগীর বাচ্চারা যেমন পাখনার নিচে আশ্রয় নেয়। ঠিক আমরাও শত বিপদের মাঝে সেই মুরুব্বীর কাছে আশ্রয় নিয়েছি। তিনিও বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
এখন এই ক্রান্তিকালে কে আমাদের মুরুব্বী? বেশ কিছু দিন ধরে যেন আমরা মুরুব্বী শুণ্য। ঐ আসনটা যেন এখনো ফাঁকা। কেউ ওখানে বসছে না। যার দরুণ আলেম-উলামাগণ কেমন যেন চাপের মধ্যে। মুরুব্বী কেউ সাজলে হয় না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদুর্দর্শি কোন লোক যদি মুরুব্বীর আসনে বসতে চায়, তাহলে তাকে কিন্তু মানায় না।
ড্রাইভার হতে হবে যোগ্য। যিনি কোটি কোটি লোকের এই গাড়ীকে কোন ধরনের কাঁটার আঁচড় ছাড়া যথা স্হানে পৌছাবেন। এখন ড্রাইভার বা রাহবার যদি কোন রাস্তা ভুল করে, তাহলে সকলের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়ায়।এজন্য একজন যোগ্য রাহবার চাই।
মুরুব্বী যে আমাদের নেই তা নয়। মুরুব্বী আছেন,যোগ্য রাহবার আছেন। কিন্তু সমস্যা দুইটা। এক. তিনি মুরুব্বীর আসনে বসতে চাচ্ছেন না। দুই. আমরা মুরুব্বীকে মেনে চলছি না।
এজন্য মুরুব্বীকে যথাস্থানে বসতে হবে। আর আমাদের তাঁকে মানতে হবে। আমরা মুরুব্বী মানতে চাচ্ছি না। অনেক ইয়ং জেনারেশনের ছেলেরা আজকাল মুরুব্বীর ধার-ধারেনা। যে কারণে সমস্যা আরো ঘনীভুত হচ্ছে। মুরুব্বী মানা হলে, তাহলে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব। কোন মুরুব্বী মেনে চললে এই অবস্থার সৃষ্টি হবে না। হুজুগী আর কেউ কিছু করতে পারেবে না।
আরও পড়ুন: তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা
আমাদের এই অধঃপতনের মুলে কিন্তু কোন মুরুব্বী নিয়ন্ত্রণে না চলা। এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে আমরা মুরুব্বী মানা ছেড়ে দিয়েছি। রাজনীতি করি এখন অনলাইনে। এবং সে জায়গা থেকে বাহবা পেয়েই ভুলে যাচ্ছি গুরুজনদের কথা। মুরুব্বীর কথা আমলে না দিয়ে আমলে দিচ্ছি অনলাইনে এ্যক্টিভেটরদের।
অনলাইন চালানো নিষেধ নয়। প্রয়োজনে অবশ্যই চালাতে হবে। তবে শীর্ষ কোন আলেমের পরামর্শ মোতাবেক চলা উচিত সকলের। যে যেখানেই থাকুন, মুরুব্বীর নিয়ন্ত্রণে চলার অভ্যাস করুন।
এই মুহুর্তে দেশের ইমেজওয়ালা আলেমদের পরামর্শের ভিত্তিতে কোন মুরুব্বী নির্ধারণ করে সামনে চলতে হবে। আর কোন হুজুগী সিদ্ধান্ত নয়। দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি,রাষ্ট্র ও জনগণের সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে কর্মসুচি দিতে হবে। যেটা সকলের জন্য কল্যাণকর। রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়,জনতার সমস্যা হয়, এ জাতীয় কর্মসুচি ত্যাগ করা জরুরী। এজন্য আমরা অভিভাবহীন হয়ে পড়েছি, অভিভাবক ছাড়া চলা সমীচিন নয়। সকলে ঐকবদ্ধ হলে সেটা পুরণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট