একজন মায়ের মোবাইল

একজন মায়ের মোবাইল

একজন মায়ের মোবাইল

মুস্তাফা জামান আব্বাসী : প্রথমে জানাই কিভাবে আমার দামি মোবাইলটি চুরি হল। সুন্দর একটি পাঞ্জাবি ও তার সঙ্গে উপহার পাওয়া একটি নীল কোটি পরে গেলাম বড়লোক বন্ধুর বিয়েতে। ঢাকা থেকে দূরে। যেতেই লাগল এক ঘণ্টা। গাড়ি পৌঁছুতেই তিন-চার জন আমাকে রিসিভ করার জন্যে স্বাগ্রহে গাড়ির দরজা খুলে দিল।

আমি অবাক। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে একটি সুন্দর চক্রের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তারা হাওয়া। এর মধ্যে একজন সুবেশধারি মাঝে মাঝে আমাকে জানালেন আমার প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণের কথা। কি কারণে তা ক্রমশঃ প্রকাশ্য। কি খেতে ইচ্ছে করছে, পানির উত্তাপ কতটা হবে, ইত্যাদি? এ রকম কয়েকজন অতিথির সঙ্গে তারা অসম্ভব ভাল ব্যবহার করছেন।

আমার স্ত্রী মাছ মাংস কিছুই খান না। প্রায় বায়ুভুক। মিষ্টির নানা আইটেম তারা সহজেই তার জন্যে বেছে আনলেন। পরে একজন বললেন, স্যার কিছু মনে করবেন না একটা সেলফি তুলতে পারি? তুললাম। খানিকক্ষণ পরে আমার মোবাইলটি নেই। ভদ্রলোক সটকে পড়েছেন।

সর্বশান্ত হলাম। টাকার জন্যে নয়। দু’টো ক্রেডিট কার্ড ছিল। আর ছিল অসংখ্য বন্ধু-বান্ধবের টেলিফোন নম্বর। ঐ লোকগুলো ছিলেন কোন স্পাইরিংয়ের সদস্য। আমার মোবাইল টাকার জন্যে নেয় নি তারা। কবি বলেছেন, ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে’। সত্যি তাই। আমার স্কটল্যান্ডের বান্ধবির নম্বর আর জীবনেও পাব না। এ ছাড়াও কয়েকটি দেশের সাহিত্যিক বন্ধুরাও ছিল। স্পাইরিংয়ের কাজ আমাদের মত অকাজের লোকদের গোপন সংবাদ সংগ্রহ করা। আমার অবশ্য সবই গোপন, কিন্তু তা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রকাশিত। সবাই তাদেরকে যোগাযোগ করতে পারেন ইচ্ছে করলে।

এবার আসল কথা। যখন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে যখন একটিও দরকারী নম্বর হাতের কাছে থাকবে না, তখন কি করতে হবে আমার মেয়ের কাছে শুনলাম। তার কাছে ছিল একটি ডাইরি যাতে লেখা ছিল প্রয়োজনীয় নম্বরগুলো ঠিক এমনিভাবে।

মুরগি মালেক …. এসি সেলিন …. ডলার আনোয়ার …. ড্রাইভার রিচার্ড …. দুধ লতিফ …. ট্রাভেল এজেন্সি সিদ্দিক …. কুমিল্লা বুয়া আমিনা …. বরিশাল বুয়া হালিমা …. লক জসীম …. রাজু মিড্ডলম্যান।

এই স্মরণীয় নম্বরগুলো একজন মায়ের কাছে সব সময় থাকতে হবে। এইটি তার কাছে শেখা। আমার মোবাইল আবার চুরি গেলেও আমার কাছে এখন পাঁচ পাতার লিষ্টি রেডি। এখানে আমার যাবতীয় যন্ত্রাংশ অর্থাৎ যাদেরকে ছাড়া আমার ব্রেইন সম্পূর্ণ অচল।

এখন আমাদের জীবনে মোবাইল এত কার্যকরী যে রান্নাঘরে তিনজন কার্যরত মহিলা, যাদের কানে ঐ জিনিসটি লেগে আছে। তাই তরকারিতে নুন লংকা কম বেশি হবে, এ নিয়ে আক্ষেপ করে লাভ নেই। তাদের প্রথম দাবি-

১. মোবাইল ব্যবহার করতে দিতে হবে, তাদের চার্জ ফুরিয়ে গেলে বাড়ির সাহেবের চার্জার ধার দিতে হবে।

২. অন্তত দিনে এক ঘণ্টা টেলিভিশন দেখতে দিতে হবে।

৩. তাদের পছন্দনীয় অনুষ্ঠানের জন্যে একটি আলাদা টেলিভিশন ব্যবস্থা দিতে হবে।

মু. জা. আ.
২১শে বৈশাখ, ১৪২৬

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *