কওম ও মিল্লাতের দিশারী মাওলানা আসরারুল হক কাসেমী রহ.

কওম ও মিল্লাতের দিশারী মাওলানা আসরারুল হক কাসেমী রহ.

(ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও জমিয়তে উলামা হিন্দ পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি) মাওলানা সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরী  : মাওলানা আসরারুল হক কাসেমী রহ. জমিয়তে উলামা হিন্দের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফিদায়ে মিল্লাত হযরত আসআদ মাদানী রহ. তখন সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন। আমি তখন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক। তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠককালীন আমি তাঁর সঙ্গে (মসজিদ-এ-আদূন নবীর পাশে) একই ঘরে থাকতাম। বাম জামানায় তখন নদিয়া থেকে মুসলমানদেরকে ভোটের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়, তখন সেই খবর পেয়ে তিনি কলকাতায় এসে উপস্থিত হন। তখন রাজ্য জমিয়তের সভাপতি ছিলেন হযরত মাওলানা তাহের সাহেব রহ.। আমাদের সঙ্গে মাওলানা আসরারুল হক সাহেব নদিয়া সফর করেন। তিনি বলেন, ভারতের নাগরিকদেরকে ভোটার তালিকা থেকে কোন ভাবেই বাদ দেয়া যায় না। আলহামদুলিল্লাহ জমিয়তের তৎপরতায় নদিয়ার মুসলমানরা সে যাত্রায় বড় ধরনের দুর্গতি থেকে রক্ষা পায়। মাওলানা আসরার সাহেব আমাকে ভোটার তালিকায় দেশের প্রকৃত নাগরিক নথিভুক্ত করার জন্য যোগ্য কর্মী তৈরির পরামর্শ দেন। তিনি যে কতটা দূরদর্শী ছিলেন, তা বর্তমান পরিস্থিতে সহজেই অনুমেয়।

ইসলামি চিন্তাবিদ, কলামিস্ট ও শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেতেন। দরসে নিজামী তথা খারিজী মাদরাসার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি কুরআন-হাদীস ও বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে আসামুদ্রহিমাচল মানুষকে সচেতন করেছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা ভারতবর্ষের গণ্ডি ছাড়িয়ে আফ্রিকা, ইংল্যান্ডেও অবলীলায় পৌছে গেছে। রাজ্যের বিভিন্ন সংকট মুহূর্তও তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন, উৎসাহ জুগিয়েছ্ন। আমি মন্ত্রী হওয়ার পূর্বে কয়েকটি নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, হাল ছাড়বেল না। ২০১৬ সালে আমি বিধায়ক নির্বাচক হলে তিনি মুবারকবাদ জানিয়ে পূর্বের কথা স্বর্ণ করিয়ে আরও বেশি করতে উৎসাহিত করেন।

মাওলানা আসরারুল হক কাসেমী ভারতে প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে-এ-শূরার আজীবন সদস্য ছিলেন। বিহারের কিষাণগঞ্জ এলাকায় তিনি গার্লস স্কুল, হোস্টেল, মাদরাসা সহ বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ করেছেন যা ইতিপূর্বে কেউ করেননি। তাঁর অবদান ওখানকার মানুষ চিরকাল স্মরণ করে রাখবে।

মাওলানা আসরারুল হক কাসেমীর ইন্তেকালে সমাজের অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি হলো বলে আমি মনে করি। আমি তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনাজ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাআলা তাঁর রূহের মাগফিরাত দান করুক।

প্রসঙ্গত, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর নিবেদিত ভারতের প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরার অন্যতম সদস্য ও বিহার রাজ্যের কিশানগঞ্জের বর্তমান এমপি ও পার্লামেন্ট সদস্য মাওলানা আসরারুল হক কাসেমী ৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন।

জমিয়তে উলামা হিন্দের অফিস সূত্রে জানা যায়, মাওলানা আসরারুল হক কাসেমী বেশ কিছুদিন যাবৎ গুরুতর অসুস্থ ছিলেন৷ অসুস্থতা তীব্র আকার ধারণ করলে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ কিছুদিন ভর্তি থাকার পর তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা দেয়৷ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিজ বাসায় ভোর ৩ টা ৩০ মিনিটে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ভারতের বর্ষীয়ান আলেমেদ্বীন মাওলানা আসরারুল হক কাসেমীর মৃত্যুর সময বয়স হয়ে ছিলো ৭৬ বছর।

গ্রন্থনা : আদিল মাহমুদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *