কী অপরাধ মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর

কী অপরাধ মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর

কী অপরাধ মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর

মাসউদুল কাদির :: একজন গর্বিত আলেমের প্রতিচিত্র কলকাতার মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি পশ্চিম বাংলা রাজ্য জমিয়তে উলামা হিন্দের সভাপতি। একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। বর্তমান মন্ত্রী। বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিবিড়। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী একজন প্রবক্তা। ভারতে কেবল মুসলমান নন, সব মানুষকে নিয়ে তিনি কাজ করেন। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক।

এখানকার মাদরাসা, মসজিদের ইমাম খতীব, আলেম উলামার সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক। তিনি সত্য ও সুন্দরের জন্য লড়াই করেন।তার বিরুদ্ধে নতুন কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা-ই বড় ভাবনীয় বিষয়। বর্তমানে ভারতে এনআরসি নিয়ে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বিজেপির সভাপতি অমিত শাহকেও কলকাতায় নামতে বাধা দেবেন বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। বাংলাদেশের ভিসা না পাওয়া কি এই ঘোষণার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে? রাখতেও পারে। এটা একান্তই কূটনৈতিক বিষয়। দেশের সম্পর্ক সুরক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত থাকতে পারে সরকারের।

তবে একজন আলেমে দ্বীনকে বাংলাদেশের দ্বীনদরদি মানুষের কাছে আসতে না দেওয়াটাও শুভলক্ষণ নয়। এ দেশের মানুষ আল্লাহপ্রেমিক। দ্বীনদরদি। দেশের ভাবমূর্তি নিশ্চয়ই আবারও মমতা ব্যানার্জির কাছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে খাড়া করবে। এমনিতেই তিস্তা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছেই। পার্শ্ববর্তী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক আমরা সবসময় বিশ্বাস করি। সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া ভালো। তবে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর মতো মানুষকে আটকে দিয়ে বার্তা দেওয়াটা কতটুকু সমীচীন তা বোধগম্য নয়।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গণ শিক্ষামন্ত্রী ও জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সস্ত্রীক বাংলাদেশে আসার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সিলেটের জামিয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গায় তিনি শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে অতিথিও ছিলেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমকে সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, ‘তিন দিন আমার অফিসের এক কর্মীকে দুই ঘণ্টা করে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে বসিয়ে রাখার পর বুধবার পর্যন্ত ভিসা দেওয়া হয়নি। কেন ভিসা দেওয়া হলো না তা নিয়েও কিছু জানানো হয়নি।’

বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে কোনো কারণ না দেখালেও ভিসা না পাওয়ার পেছনে রাজনীতি দেখছেন এই জমিয়তে নেতা। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে ভুল বোঝানো হয়েছে, না হলে তারা বেশি বুঝছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। একবারেই ব্যক্তিগত সফর। আমি বাংলাদেশের কোনো সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নই। তারপরও আমার ভিসা আবেদন বাতিল করা হল। এর পেছনে অবশ্যই রাজনীতি রয়েছে।’

তবে জমিয়তে উলেমা সংগঠনে থাকা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠদের দাবি, বর্তমানে দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যেভাবে তোলপাড় হচ্ছে তার মধ্যে সিদ্দিকুল্লাহ বাংলাদেশে গেলে ভারত সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকেই হয়ত তাকে ভিসা দেয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, গোটা রাজ্যে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম প্রধান মুখ সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। গত ২২ ডিসেম্বরের জনসমাবেশ থেকে তা আরও স্পষ্ট। তাকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যেতে দিলে কূটনৈতিক স্তরে সমস্যা হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দেখিয়েই ভিসা দেয়নি।’ অন্য একটি পক্ষ অবশ্য দাবি করছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের চাপেই ভিসা দেয়নি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের উপদূতাবাসের এমন আচরণে দুঃখপ্রকাশ করেছেন মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, প্রথমে তিনি সিলেটের একটি মাদ্রাসায় যাবেন প্রতিষ্ঠানের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে। সেখান থেকে শাহজালাল মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। সিলেটেই মন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয় থাকেন। সেখানেও যাওয়ার কথা ছিল তাদের। সঙ্গে ঢাকা শহরে মন্ত্রীর এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, ‘গোটা ঘটনায় আমি অত্যন্ত ব্যথিত।’

বিজেপি সরকারের চাপে বাংলাদেশে একজন আলেম ঢুকতে না দেওয়াটা খুবই লজ্জার। মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এ বিষয়ে সহনীয় অবস্থান থাকা উচিত বলেই আমি মনে করি।
লেখক : সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *