খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ-িত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগে আটকে গেছে। হাই কোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন আদেশ আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে ওই সময়ের মধ্যে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ  বুধবার এ আদেশ দেয়।

চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী মঙ্গলবার দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনে তা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায়  বুধবার বিষয়টি আপিল বিভাগে উঠলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তারা হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করতে চান। কিন্তু আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি না পাওয়ায় তা করতে পারেনি। তার বক্তব্য শুনেই প্রধান বিচারপতি হাই কোর্টের জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে এর মধ্যে লিভ টু আপিল করতে বলেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এ সময় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত রোববার তার বক্তব্য শুনবে।

কথা বলার সুযোগ না পেয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাই কোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তাকে চার মাসের জামিন দেয়। সেই সঙ্গে তার আপিল শুনানির জন্য ওই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপিল শুনানি শুরুর আদেশ চাইলেও হাই কোর্ট চারটি যুক্তিতে জামিন মঞ্জুর করে।

এগুলো হলÑ ১. নিম্ন আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছে, এই সাজায় হাই কোর্টে জামিনের রেওয়াজ আছে। সে বিবেচনায় তিনি জামিন পেতে পারেন। ২. বিচারিক আদালতের নথি এসেছে, কিন্তু আপিল শুনানির জন্য এখনও প্রস্তুত হয়নি। ফলে আসামি জামিনের সুবিধা পেতে পারেন। ৩. বিচারিক আদালতে মামলা চলাকালে খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন; এর অপব্যবহার করেননি। আদালতে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। ৪. বয়স এবং বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দেওয়া যায়।

ওই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার চেম্বার আদালতে আলাদাভাবে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি  বুধবার আপিল বিভাগে আসে এবং জামিন স্থগিত হয়ে যায়।

আপিল বিভাগের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কোনো বক্তব্য তিনি (প্রধান বিচারপতি) শুনলেন না। কোনো রকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবেলা করার জন্য নূন্যতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। না দিয়ে স্টে অর্ডার পাস করলেন। আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, মাননীয় আদালত আমাদের কথা না শুনে কোনো অর্ডার পাস ইতোপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি। এতে করে পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে। তিনি আমাদের কথা শুনলেন না। না শুনে বললেন, আগামী রোববার পর্যন্ত স্টে থাকবে। রোববার সিপি ফাইল করা হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল বলেন, এই আদেশে তারা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। বিচার বিভাগ ইতোপূর্বে এইরকম কখনও ছিল না। আজকের বিচার বিভাগের কাছ থেকে এটা আশা করি নাই। এই আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব তা বুঝতে পারছি না।

আগামী রোববার আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে  বুধবারের আদেশটি বাতিল করবেন এবং জামিনে মুক্তি পেয়ে খালেদা জিয়া আবার জনসম্মুখে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল।

অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেল সোমবার বলেছিলেন, আপিল বিভাগ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়, তারপরও এখনই তার মুক্তি মিলবে না, কারণ নাশকতার একটি মামলায় কুমিল্লার আদালত তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

কুমিল্লার আদালত যে হাজিরা পরোয়ানা জারি হয়েছে, সে মামলাতেও খালেদা জিয়াকে জামিন নিতে হবে। কাস্টডি ওয়ারেন্ট দেওয়ার অর্থই হল সে মামলাতেও তিনি এখন অবরুদ্ধ। তিনি সেই মামলায় জেলে আছেন বলে ধরতে হবে। কাজেই ওই মামলাতে তাকে জামিন না নিয়ে মুক্তি পাওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *