পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বী, পাকিস্তান রায়বেন্ড মার্কাজের জিম্মাদার হাজী আব্দুল ওয়াহাব ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
রোববার (১৮ নভেম্বর) ভোর ৬টায় তিনি ইন্তেকাল করেন বলে জানা গেছে।খবর দিয়েছে পাকিস্তানের সামাডটটিভি।
হাজী আব্দুল ওয়াহাবের মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব তাবলীগ সাথীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই ভারতে দিল্লীর নিযামুদ্দীন মারকাযে বিশেষ আমলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তাবলীগের প্রবীণ এ মুরব্বীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করছেন তাবলীগ জামাতের বিশ্ব মারকায নিজামুদ্দীনের দায়িত্ব পালনকারী মাওলানা সাদ কান্ধলভী। বাংলাদেশের কিছু অনলাইন তড়িগড়ি করে মাওলানা সাদ কান্ধলভী পাকিস্তানে যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে। নিজামুদ্দীন মার্কাজে যোগাযোগা করে এর কোনো সত্যতা জানতে পারেনি পাথেয় টোয়েন্টিফো ডটকম।
পাথেয় টোয়েন্টিফো ডটকমের পক্ষ থেকে নিজামুদ্দীন মার্কাজে সকাল থেকেই যোগাযোগ করা হলে আমরা কোনো তথ্য পাচ্ছিলাম না। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী হাজী আবদুল ওয়াহাবের জানাযায় মাওলানা সাদ কান্ধলভী যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
নিজামুদ্দীন মার্কাজে হাজী আবদুল ওয়াহাব রহ.-এর জানাযা বিষয়ে পরামর্শসভায় মাওলানা সাদ কান্ধলভী পাকিস্তানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। আলেমদের পরামর্শে সবাই তাকে পাকিস্তান যেতে বারণ করলে তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের উপর হাজী আবদুল ওয়াহাব সাহেবের অনেক অবদান রয়েছে। আমি না যেতে পারলেও আমাদের পরিবারের কারও না কারও যেতে হবে।
পরে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আগ্রহের কারণেই তার ছেলে মাওলানা ইউসুফের নাম তিনি প্রস্তাব করেন। নিজামুদ্দীন মার্কাজের প্রবণী মুরব্বী মিয়াজি আজমতের একান্ত খাদেম মাওলানা নুরুল হাসান জানিয়েছেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভী যাচ্ছেন না হাজী আবদুল ওয়াহাব সাহেবের জানাযা। পরামর্শের সিদ্ধান্ত পাকিস্তান যাবেন, মিয়াজি আজমত, মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী, মিয়াজি আজমতের ছেলে মাওলানা ফারুক, মাওলানা শওকত প্রমুখ।
হাজী আব্দুল ওহাবের মৃত্যুতে বাংলাদেশের তাবলীগ মার্কাজ কাকরাইল মসজিদেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সেখানে অবস্থানরত তাবলীগের সাথী ও মাদরাসার ছাত্ররা বিশেষ আমলের মধ্য দিয়ে হাজী সাহেবের রুহের মাগফেরাত কামন করছেন। বাংলাদেশ তাবলীগ জামাতের আহলে শুরা বর্তমানে কাকরাইল মসজিদের ফায়সাল (জিম্মাদার) মাওলানা মোশাররফ হাজী সাহেবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যাণ্ড ইমাম শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ হাজী আব্দুল ওহাবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হাজী আব্দুল ওহাব সাহেবের মৃত্যুতে বিশ্ব এক মুখলিস বান্দা হারালো।
রোববার বাদ মাগরিব রায়বেন্ড তাবলীগ মারকায মসজিদে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো।
প্রসঙ্গত, হাজী আব্দুল ওহাব ১৯২৩ সালের পয়লা জানুয়ারী ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। তিনি মাদরাসায় পড়ুয়া কোন আলেম ছিলেন না। তবে দাওয়াত ও তাবলীগের সিলসিলায় নিজের পুরো জীবনকেই উৎসর্গ করেছেন। জীবনে কখনোই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ থেকে জুদা হতে পারেননি।
উল্লেখ্য, স্নাতকোত্তরের পর তিনি পূর্ব-ভারতে তহসিলদার হিসেবে চাকুরি করেন। তিনি যুব ক্লাব মজলিস-ই-আহরার-ই-ইসলামের জন্যও কাজ করেন এবং ভারতের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক রাহবার মা্ওলানা আব্দুল কাদির রায়পুরি রহ. (১৮৭৮-১৯৬২) দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি মজলিস-ই-আহরার-এর বুয়েওয়ালার সভাপতি ছিলেন।
তিনি তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর জীবনকালেই তাবলীগে জামায়াতের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি নিজামুদ্দীন মার্কাজে আসেন এবং ৬ মাস ধরে সেখানে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর সান্নিধ্যগ্রহণ করেন। তাবলীগে পুরোপরিভাবে সময় ও দ্বীনি কাজ প্রচারের জন্য তিনি তাঁর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম সেই পাঁচজন লোক, যারা তাদের সমগ্র জীবন তাবলীগের কাজ করার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি মাওলানা মুহম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী, ইউসুফ কান্ধলভী এবং ইনামুল হাসান কান্ধলভীর সরাসরি সঙ্গী ছিলেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, নিজামুদ্দীন মার্কাজের এমারত এবং আলমী শূরা পদ্ধতির মধ্যকার চলমান রেষারেষির বাইরে ছিলেন হাজী আবদুল ওয়াহাব। তিনি নিজামুদ্দীন মার্কাজের অনুসরণ অনুকরণকেও প্রাধান্য দিতেন।
গ্রন্থনা : কাউসার মাহমুদ
গ্রন্থনা ও সম্পাাদনা : মাসউদুল কাদির
সূত্র : পাকিস্তানী জার্নাল, সামা ডট টিভি